কোনালের পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে, পুরস্কার বাতিলের দাবি বিশিষ্টজনদের
কণ্ঠশিল্পী কোনালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পওয়া নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। নকল কথা ও সুরের একটি গানে অল্প কয়েক লাইন গেয়ে পুরস্কার বাগিয়ে নেওয়া কীভাবে সম্ভব হলো সেই প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। তারা এই পুরস্কার অবিলম্বে বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, এমন গানের জন্য কোনাল পুরস্কার পাওয়ায় বিষয়টি বেশ কিছু গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, অনুমতি ছাড়াই একটি পুরনো জনপ্রিয় গানের লাইন ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’ ব্রিজলাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কোনালের গাওয়া গানে, যা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। এমন গানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে কপিরাইট আইনকে খাটো করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যের গান অনুমতি ছাড়া ব্যবহারেও উৎসাহিত করা হয়েছে।
কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু এই পুরস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য কখনও পারফেক্ট লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। আমি অদ্যাবধি এটা দেখেছি। জুরিবোর্ডে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়, আমি মনে করি সেখানে দুজন চিত্রগ্রাহক থাকবে। যারা সিনেমাটোগ্রাফি সম্পর্কে বিচার করবে। দুজন ভালো সংগীত পরিচালক থাকবে, যারা ভালোভাবে গান বোঝেন। যারা এই উপমহাদেশের গান সম্পর্কে ধারণাও রাখেন। দুজন ভালো গীতিকার থাকা উচিত। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য পারফেক্ট লোক নিয়োগ সেখানে নেই বিধায় এই প্রশ্ন ওঠেছে। এমন একটি গানের কথা, বীর ছবিতে যে গানের দুটি লাইন সংযোজন করা হয়েছে। গানটির অর্জিনাল গীতিকার সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। অনেক হিট গান ‘তুমি আমার জীবন তুমি আমার মরণ’ গানের কথা এবং সুর। বীর সিনেমায় ব্যবহৃত এই গানটির সুর ও কথা দুটিই নকল। শুনলাম এই গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। জাতীয় পুরস্কার পায় কীভাবে? একটি গানের যদি দুটি লাইন বা একটি লাইনও হুবুহু একই অর্থ বহন করে। তবে আর গানটি মৌলিক থাকে না। যেমন রবীন্দ্রনাথের ‘আমি চিনিগো চিনি তোমারে ওগো বিদেশীনি’- এই একটি লাইন যদি আমি অন্য গানে ঢুকিয়ে দেই তখন সবাই বলবে এটা রবীন্দ্রনাথের লেখা।’
এই পরিচালক আরোও বলেন, ‘তুমি আমার জীবন তুমি আমার মরণ অত্যন্ত হিট গান। সেই গানটাকে নকল করা গানে কীভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়। এটা ওরা জানতো না? নকল গানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হলে তা অবশ্যই বাতিল হয়ে যাবে। আমি চলচ্চিত্রে একজন পুরনো মানুষ হিসেবে বলব যদি এই গানটি নতুনভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার যোগ্যতা সে রাখে না। কারণ নকল গানে পুরস্কার দেওয়া হয় না। সেটা সুর হোক, কথা হোক যাই হোক নকল গান গাইলে কোনো পুরস্কার দেওয়া হয় না।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের অন্যতম সদস্য চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘ দেখেন-আমি জুরিবোর্ডে ছিলাম, কিন্তু জুরিবোর্ড জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয় না। যাচাই-বাছাই করে জুরিবোর্ড মার্ক দিয়ে শুধুমাত্র সাজেস্ট করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। পরে সেটাকে আবার যখন পুনঃবিচার করা হয় সেক্ষেত্রে জুরিবোর্ডের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয় না। জুরিবোর্ডেরও সেই এখতেয়ার থাকে না। আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন সেটার উত্তর আমার কাছে নেই। এর দায় জুরিবোর্ডের একার ওপর বর্তায় না। এখন এই বিতর্কের উত্তর আমার কাছে নেই। এটা আসলে জুরিবোর্ড দেয় না। যেহেতু সেটা হয় না, তাই এই দায় জুরিবোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে আমি নিতে চাই না।’
সমালোচনা ও বিতর্কে বিব্রত হয়ে এক ভিডিও বার্তায় বীর সিনেমার প্রযোজক মো: ইকবাল বলেন, ‘এই গানের কথা নকল, সুরও নকল। গানটির মিউজিক করেছি ইন্ডিয়া থেকে। তাহলে নকল এই গানে কোনাল কীভাবে পুরস্কার পায়? আমার সেন্সে মনে হয় এই গানে কোনাল কখনই পুরস্কার পায় না। কারণ আমি অন্যায়কে কখনও সাপোর্ট করি না। কথা নকল, সুর নকল কোনো গান কখনও পুরস্কার পায় না। মৌলিক গান, নতুন গান পুরস্কার পেতে পারে। আমারও একটা প্রশ্ন জাগে-রুনা লায়লা ম্যাডাম যখন গানটি ১৯৮৮ সালে গেয়েছেন তখন কি উনি এই গানটির জন্য পুরস্কার পেয়েছিল? আমার জানা মতে উনি পুরস্কার পাননি। আর যদি উনি পুরস্কারটা পেয়েও থাকেন তাহলে এক গানে কি দুইবার পুরস্কার দেওয়া হবে? তবে আমি জেনেছি ১৯৮৮ সালে রুনা লায়লা পুরস্কার পাই নাই। তাহলে কি কোনাল রুনা লায়লার চেয়েও বড় শিল্পী? প্রশ্ন আপনাদের কাছে।’
ইকবাল আরোও বলেন, ‘এই গান কোনোভাবেই কোনো রকমের পুরস্কার পেতে পারে না। কোনো নকল গান, গানের কথা নকল, নকল সুরের গান কখনও কোনোভাবেই পুরস্কার পেতে পারে না। এই গানের যে দুইটা লাইন শিল্পী গেয়েছে ওই দুইটা লাইনই পুরোটা অন্য ছবির গান। এর মানে এই না যে এই গানে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হবে। কারণ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এর আগে এমন কোনো রেকর্ড নেই কোনো নকল গান বা নকল ছবিতে পুরস্কার পেয়েছে। তাহলে বীরের গানে কেন পুরস্কার পাবে? এটা অন্যায়। আমি এই অন্যায়কে সাপোর্ট করি না। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক হওয়াটাই একটা লজ্জাজনক ব্যাপার। এর জুরিবোর্ড কেন এমন করল। তাই উনারা যাচাই-বাছাই করে দেখুক। আমি সত্য নাকি মিথ্যা বলেছি। কেউ যদি উল্টাপাল্টা করে পুরস্কার নেয় তবে অবশ্যই এ পুরস্কার বাতিল করে একেবারে ফ্রেশ গানে পুরস্কার দেওয়া উচিত।’
‘অবুঝ হৃদয়’ সিনেমার ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’-এ গানের ব্রিজলাইনটুকু নিয়ে ‘বীর’ সিনেমার জন্য নতুন করে গানটি তৈরি করা হয়েছে। গানটি লিখেছেন কবির বকুল। ভারতের সংগীত পরিচালক আকাশ সেনের সংগীতায়োজনে গানটিতে কণ্ঠ দেন ইমরান ও কোনাল।
সিনেমাটি মুক্তির পরই এই গান নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এবার এই গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ায় কোনালকে নিয়ে চলছে বিতর্ক। শিল্পী এ বিষয়ে এখনো কোথাও কোনো মন্তব্য করেননি।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে গানটির নাম ‘ভালোবাসার মানুষ তুমি’ লেখা হয়েছে। তবে শাকিব খানের এসকে ফিল্মসের ইউটিউব চ্যানেলে গানটি ‘তুমি আমার জীবন’ নামেই প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘অবুঝ হৃদয়’ সিনেমায় আহম্মেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লেখা ও সুরে ‘তুমি আমার জীবন’ শিরোনামে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন রুনা লায়লা ও এন্ড্রু কিশোর।
এএম/এসআইএইচ