‘বাল শিবাজি’ নামে শিবাজিকে নিয়ে ঐতিহাসিক ছবি হবে
মুম্বাই, ১৯ ফেব্রুয়ারি, পিটিআই : ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের গড়ে ওঠার দিনগুলো নিয়ে একটি ছবির কাজ হচ্ছে। নির্মাতারা ঘোষণা করেছেন, ভারতবর্ষের মারাঠিদের সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার জন্মবাষিকীতে শনিবার ১৮ ফেব্রুয়ারি। আমাদের দেশে আজকে তার জন্ম। ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যালেন্ডারে জন্মেছেন ১৬৩০ সালে শিবাজি। মারাঠিদের কাছে তিনি পরম পূজনীয়-‘শিভাজি’ গোত্রের ছেলে।
শিবাজি আদিল শাহী সালতানাত নামে বিজাপুরে পতনশীল রাজবংশের কাছ থেকে একটি ছিটমহল দখল করেন। সেখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে মারাঠা রাজ্য। ১৬৭৪ সালে মারা যাওয়ার ছয় বছর আগে তিনি তার মহারাষ্ট্র প্রদেশের রায়ঘাট দুর্গে রাজত্বের স্বীকৃতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ছত্রপতি’ উপাধি গ্রহণ করেন। ইতিহাস বিখ্যাত এই যোদ্ধা রাজা একই সঙ্গে প্রবল প্রতাপশালী মোঘল রাজবংশকে সহযোগিতা ও বিরুদ্ধাচারণ করে গিয়েছেন। তিনি সেভাবে যুদ্ধে নেমেছেন গোলকোন্ডা সালতানাত (আজকের তেলেঙ্গানা রাজ্য) ও আদিল শাহীদের বিজাপুরের বিপক্ষে এবং ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের বিপক্ষে। মারাঠাদের জাতিগত আলাদা উত্তাপে তার সেনাবাহিনী দুর্গ ও ভবনগুলো দখল করে নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছে। তিনি পাথরের দুর্গও বানিয়েছেন। এমনকি একটি নৌবাহিনীও তিনি গড়ে তুলেছিলেন। ভারতবর্ষের ইতিহাসে যোদ্ধা জাতি মারাঠিরা তাদের প্রথম সেনানায়ক ও সবচেয়ে সেরা নেতা-শিবাজিকে এই কারণেও মনে রাখেন, তিনি একটি দক্ষ ও যোগ্য সুশীল সমাজ পরিচালনার নিয়মাবলী গড়ে দিয়েছিলেন, সেভাবে ভালোভাবে পরিচালনা করেছিলেন আগামী দিনেও কার্যকর প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সনাতন ভারতীয় রাজনৈতিক রীতি, নীতিগুলোকে তিনি সংস্কার করেছিলেন, বিচারের চিরাচরিত নিয়মও। তিনি মারাঠি এবং সংস্কত ভাষাগুলোর ব্যবহারবিধিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। মারাঠি ভাষাকে তিনি ‘পাসিয়ান’ ভাষা হিসেবে আদালতে ব্যবহারের স্থানে বসিয়েছিলেন। মৃত্যুর প্রায় ২শ বছর পর এখন অনেক ভারতীয় হিন্দু মনে করছেন, তিনি তাদের নেতা। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে গবেষণায় এসেছেন।
তাকে নিয়ে মুম্বাইতে শুরু হওয়া ছবিটির নাম হবে ‘বাল শিবাজি’। বানানো হবে ‘ইরোস ইন্টারন্যাশনাল’ (এটি ভারতের অন্যতম প্রধান চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান; অর্জুন লুলা ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন), আনন্দ পন্ডিত মোশন পিকচাস (এটি তরুণ আনন্দ পন্ডিতের বলিউডের একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান এবং রিয়েল স্টেট ব্যবসা আছে তার। তার স্ত্রী প্রযোজক হবেন), ১৯৬৬ সালে জন্ম নেওয়া ভারতের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক রাভি জাদভ-তিনি ২০০৯ সালে ‘ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ন্যাশনাল ফিল্ম ইন মারাঠি’ পুরস্কার লাভ করেন; তার ‘রাভি জাদভ ফিল্মস’ ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘লিজেন্ড স্টুডিওজ’ মিলে।
তারা জানিয়েছেন, বড় বাজেটের এই ছবিটি শিবাজিকে তারা বীর, সমর নায়ক ও নেতা হিসেবে তুলে ধরবেন। আরো জানিয়েছেন, শিবাজিকে তারা গড়ে দেওয়ার সময় ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে শুরু করবেন, যেটি তার শিবাজি হওয়ার ভিত্তি।
ছবিটি পরিচালনা করবেন রাভি, তার সেই জাতীয় পুরস্কার জয়ী ছবিটির নাম ‘নটরঙ’; এটি মারাঠিদের ‘রজত কামাল অ্যাওয়ার্ড’ও লাভ করেছে। জি গৌরবের অনেকগুলো পুরস্কার জিতেছে। তার আরেকটি ছবি ‘বালগন্ধর্ভ’ বিখ্যাত মারাঠি গায়ক ও অভিনেতা বালগন্ধর্ভের জীবনের ভিত্তিতে বানানো। এই ছবিটিও বক্স অফিসে সুপারহিট হয়েছে।
পরিচালক জানিয়েছেন, টানা আট বছর তিনি শিবাজির জীবনের সত্যিকারের কাহিনী নিয়ে সেগুলো সিনেমার উপযোগী করতে গবেষণা করেছেন।
কীভাবে শুরু হলো সেই চমকপ্রদ গল্পও বলেছেন, ‘সন্দীপের এই বীরের গল্পটির গুরুত্ব ও মমার্থ বোঝার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। ভারতকে শাসন করা সবচেয়ে মহৎ রাজাদের একজনের মহিমাকীর্তন করা হবে সবকিছুর ওপর। অবশ্যই সারা বিশ্বের আগামী দিনের নায়কদের জন্য একটি উদ্দীপনামূলক ছবি হবে এটি।’
লিজেন্ড স্টুডিওজের মালিক কমল সিং বলেছেন, তিনি সবসময়ই একটি ঐতিহাসিক প্রকল্পের মালিক হতে চেয়েছেন। ছবিটি তাকে সঠিক সুযোগ লাভ করিয়ে দিয়েছে। আরো জানিয়েছেন, ‘যখন রাভি আমাকে এই প্রকল্পে থাকতে অনুরোধ করলেন, সেটি আমার জন্য দ্রুত কাজ করলো।’ শেষে বলেছেন, ‘ছত্রপতি শিবাজির মতো দেবতাসদৃশ্য মানুষকে নিয়ে একটি ছবি বানানো একটি সম্মান।’
তিনি পি.এম. নরেন্দ্র মোদি (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) ও সরবজিৎ সিং-এর মতো ছবিগুওলোর নেপথ্যের মানুষ। সরবজিতকে পাকিস্তান মনজিৎ সিং রাটু নামে অভিহিত করে সন্ত্রাসবাদ ও গোয়েন্দাবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তাকে লাহোর ও ফয়সালাবাদে কয়েকটি বোমা হামলার দায়ে বিচার করেছে। তাদের হামলায় মোট ১৪ জন পথচারী ও আশপাশের মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে বোমা হামলার তিন মাস পর ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তিনি একজন নিরীহ কৃষক, সীমান্তের পাশে বাড়ি, তখন পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন। তাকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হলেও পাকিস্তান সরকার ১৯৯১ সালে স্থগিত করে। তবে কয়েকজন আসামীর হামলায় তিনি আহত হন ও লাহোরের জিন্নাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৩ সালের ২ মে মারা যান।
‘বাল শিবাজি’ ছবিটির কাজ শুরু হবে জুনে।
ওএস।