‘আমার ছবিগুলোতে তার গান চিরদিনের হবে’
১৭ ফেব্রুয়ারি, মুম্বাই, পিটিআই : আজ বুধবার ভারতের হিন্দি সিনেমার বেঁচে থাকা সবচেয়ে বড় তারকা অমিতাভ বচ্চন শোক প্রকাশ করতে পেরেছেন বলিউডের গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক ও অনন্য স্টাইলের মানুষ বাপ্পী লাহিড়ীর জন্য। বলেছেন, যে গানগুলো এই গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক তার ছবিগুলোতে দিয়েছেন; দশকের পর দশক আনন্দের উৎস হবে সিনেমাপ্রেমীদের।
হিন্দি সিনেমার মহাতারকার চেয়ে ঠিক ১০ বছরের ছোট বাপ্পী লাহিড়ী; অবদানেও কম; তবে তিনি দারুণ প্রতিভাবান। নিপাট ভদ্রলোক এই অমিতাভের ভালো ব্যবহার জগৎজোড়া। মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে রোগে চলে গেলেন তিনি। গানের তালিকাতে ঝড় তুলে দেওয়া যেমন ‘নিমক হালাল’-১৯৮২ সালের সিনেমা; ‘শারাবি’, দুই বছর পরের ছবি-এগুলোর মতো বেশ কটি সিনেমায় তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন বলিউডের শাহেন শাহের জন্য।
রাগী যুবক, বলিউডের শেষ মহাতারকা অমিতাভের ঠোঁটে সুপারহিট হয়েছে, কিশোর কুমারের কণ্ঠে; নিমক হালাল ছবিতে-‘পাগ গুংরু বন্ধ’, এই ছবিতে কিশোর কুমার গেয়েছেন ‘তোদি সি জো পে লি হায়’; একই ছবিতে স্মিতা পাতিলের সঙ্গে ডুয়েট আছে কিশোর কুমার ও আশা ভোঁসলের তার-‘আজ রাত জায়ে তো’। আরেকটি গান অমিতাভের এমন চিরকালের সেরা-‘রাত বাকি, বাত বাকি’। এটি নিমক হালালে পারভীন ববির সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে অন্যগুলোর মতো অভিনয় করেছেন অমিতাভ।
সিনেমার রেকর্ড গড়ে দেওয়া এই ছবিতে নিজে গান করেননি তিনি এগুলো, গাইয়েছেন দারুণ তারকা কন্ঠশিল্পী কিশোর ও আশাতে দিয়ে। ২০২২ সাল পর্যন্ত অমিতাভ-স্মিতা পাতিল-পারভীন ববি ও শশী কাপুরের ছবিটি ১শ ২০ মিলিয়ন রূপী আয় করেছে।
অমিতাভের স্মৃতির ভুবনে ঝড় তোলা আরেক ছবি শারাবিতে তিনি গাইয়েছেন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও অন্যতম গতিময় কন্ঠশিল্পী কিশোরকে দিয়ে। তার সঙ্গে কাজ করা যে সে ব্যাপার নয়-এ সবাই জানেন। তাতে রং ধরিয়েছে ‘জাহান চার ইয়ার’-অমিতাভের কন্ঠাভিনয়। কিশোরের মেলোডিয়াস কন্ঠ আছে ‘দে দে পেয়ার দে’ গানে, আরেকটি সুপারহিট গান আছে ‘ইন্তেহা হো গায়ি ইন্তেজার কি’ আশা-কিশোরের কন্ঠে; গানটি লিখেছেন বাপ্পী ও অঞ্জন মিলে। গেয়েছেন অমিতাভ, জয়প্রদাকে নিয়ে। তিনি তার পরে স্ত্রী।
নিজের ব্লগে অমিতাভ লিখেছেন, তিনি ‘দারুণভাবে চমকে গিয়েছেন’। এরপর ভারতীয় হিন্দি ছবির সবসময়ের অন্যতম পুরুষ শিল্পী লিখেছেন, ‘বাপ্পী লাহিড়ী...সঙ্গীত পরিচালকটি অসাধারণ; সে চলে গেল। আমি চমকে গিয়েছি ও দুর্দশায় পড়েছি এই দু:খজনক ঘটনাগুলোতে, যেগুলো এখন একের পর এক ঘটে চলেছে।’
এরপর আজও ভারতের সিনেমা ভুবনকে ভালোবেসে উপহার দিয়ে চলা অমিতাভ বচ্চন বাপ্পী লাহিড়ীকে নিয়ে বলেছেন, ‘তার গানগুলো এত শ্রদ্ধার সঙ্গে শোনা হয়, ভালোবেসে-আজকের আধুনিক প্রজন্মগুলোর মধ্যেও যে, তারা ব্যাঘ্র হয়ে আনন্দের খোঁজে নেমে পড়ে।’
আসল কথায় এসেছেন অমিতাভ, ‘সাফল্যের অবিশ্বাস্য বোধশক্তি’ ছিল বাপ্পী লাহিড়ীর এবং মনে করেছেন তিনি, তারা যখন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসছিলেন মুম্বাইতে, সেই সময়ের আলাপগুলো। অমিতাভ লিখেছেন, “আমাকে বাপ্পী কথা প্রসঙ্গে বলেছে, ‘আপনার এই ছবিটি খুব সফল হতে যাচ্ছে এবং যে গানটি আমি দিলাম আপনাকে, বয়স কাল পেরিয়ে মানুষের মনে স্মরণীয় হতে থাকবে’।” এরপর বলেছেন, ‘সে সত্যি কথা বলেছে, নির্ভুলভাবে ভেবেছে ও জানিয়েছে ঠিক।’ ভারতের হিন্দি ছবিতে বেঁচে থাকা সবচেয়ে বড় তারকা লিখেছেন, ‘আমি তখন প্রজন্মের শূণ্যতাগুলো সম্পর্কে আরো জানলাম।’
অমিতাভ তার বাসায় কথাবার্তা ও আচার-আচরণের কথাও লিখেছেন, ‘বাড়িতে, রিহার্সেলে তার সঙ্গে কথা বলা, আলোচনা, গল্প একটি বিনয়ের অবতারের সঙ্গে আলাপের মতো। খুব ভালো অভিজ্ঞতা যে কারো জন্য। আস্তে আস্তে সবই চলে যাবে বাপ্পীর সঙ্গে।’
শেষ দুজনে জুটি বেঁধেছেন অমিতাভের অপরাধের ছবি ‘আজ কা অর্জুন’-এ। সেখানে মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন বাপ্পী লাহিড়ী সেই দশকেও শাসন করে, ‘গোরি হের কালাইয়া’, ‘তু লাদ মুঝে হারি হারি চুদিয়ান’। ছবিটিতে ছিলেন অমিতাভের জয়প্রদা (বিয়ের পর জয়া ভাদুড়ি)। এই ছবিরও সঙ্গীত পরিচালক বাপ্পী লাহিড়ী।
ওএস।