ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কমেডি ছবির পরিচালক রাইটম্যান মারা গেছেন
হলিউডের প্রভাবশালী পরিচালক ও প্রযোজক আইভান রাইটম্যান মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি ‘দি অ্যানিম্যাল হাউজ’, ‘গোস্টবাস্টারর্স’র মতো কমেডি ছবি পরিচালনা করেছেন।
১২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোনিয়া অঙ্গরাজ্যের মন্টোসিটোতে তার বাড়িতে ঘুমের মধ্যে মারা যান তিনি। পরিবারের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) নিশ্চিত করেছে।
একটি যৌথ বিবৃতিতে তার ছেলে জেইসন রাইটম্যান, মেয়ে ক্যাথেরাইন রাইটম্যান ও ক্যারোলাইন রাইটম্যান জানান, ‘আমাদের পরিবার অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে, অপ্রত্যাশিতভাবে একজন স্বামী, বাবা ও দাদা-নানার মৃত্যুর খবর দিচ্ছি। তিনি আমাদের সবসময় জীবনের জাদু খোঁজার শিক্ষা দিয়েছেন।’
কমেডির মাধ্যমে পুরুষালী, ভাতৃত্ববোধ, জাতীয়তাকে তীব্রভাবে ব্যঙ্গ করা তার এনিমেল হাউজ-এর মাধ্যমে তুলে এনেছেন আইভান রাইটম্যান। এটি তিনি প্রযোজনাও করেছিলেন।
বিখ্যাত কৌতুকাভিনেতা বিল মারিকে ‘ম্যাটবলস’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন আইভান রাইটম্যান। পরের ছবি স্টাইপসে অভিনয় করিয়েছেন তাকে দিয়ে। তবে ‘গোস্টবাস্টার্স ছবির মাধ্যমে সবচেয়ে সফলতা লাভ করেন তিনি। ছবিটি ১৯৮৪ সালে বানিয়েছেন।
বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো অলৌকিক হাসির সিনেমা মারি, ড্যান অ্যাকরয়েড, হ্যারল্ড রামিস, অ্যানি হাডসেন, স্যাগোইন ওয়েভার এবং রিক মরানিসকে নিয়ে ছবি বানিয়েছেন তিনি। সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে ছবিগুলো। দুইবার অস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছে তার ছবি।
সবশেষ তিনি কাজ করেছেন গেল বছর মুক্তি পাওয়া ‘গোস্টবাস্টার্স : আফটার লাইফ’ ছবিতে। এটি তার ছেলে চলচ্চিত্র নির্মাতা জেইসন রাইটম্যানের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন।
তার পরিচালনা করা উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে আছে ‘টুইনস’, ‘কিন্ডারগার্টেন কপ’, ‘ডেইভ’, ‘জুনিয়র’, ১৯৮৮’ সালের ‘সিক্স ডেজ অ্যান্ড সেভেন নাইটস’।
চেকোস্লেভাকিয়ার কোমারমো শহরে ১৯৪৬ সালে তার জন্ম। তার বাবা দেশের সবচেয়ে বড় ভিনেগার কারখানার মালিক ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কমিউনিস্টরা ক্যাপিটাললিস্টদের বন্দী করতে লাগলেন, রাইটম্যানরা পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। তখন ইভানের বয়স মোট ৪ বছর। তারা একটি বড় নৌকা দিয়ে ভিয়েনায় চলে যান।
১৯৭৯ সালে এপিকে বলেছিলেন রাইটম্যান, ‘আমি সেই দৃশ্যগুলোর চমকে দেওয়া মুহূর্তগুলোকে মনে করতে পারি। পরে তারা আমাকে বলেছিলেন, কীভাবে কয়েকটি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিলেন যাতে আমি কোনো আওয়াজ করতে না পারি। আমাকে এত ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল যে, চোখ দুটি খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম। বাবা-মা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে আমি মারা গিয়েছি।’
সেখান থেকে কানাডার টরেন্টোতে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগদান করেন রাইটম্যানরা।
কানাডায় একটি পাপেট থিয়েটার শুরু করেন তিনি। গ্রীষ্মকালীন অবকাশের তাঁবুগুলোতে মানুষদের বিনোদন দিতেন। পাশাপাশি একটি লোক গানের দলের সঙ্গে কফির দোকানগুলোতে পারফরমেন্স করতেন তিনি।
অন্টারিও’র হ্যামিলটনের ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটিতে সঙ্গীত ও নাটকের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। ওই সময়ই তিনি সিনেমার দিকে ঝুঁকে গেলেন। স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রগুলো বানিয়ে নিজের মেধা ও হাত পাকাতে লাগলেন।
১২ হাজার ডলার ও বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে নয়দিনের একটি ছবি বানান আইভান রাইটম্যান। নাম ‘ক্যানিবাল গার্লস’। যেটিকে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল মুক্তি দিতে রাজি হয়েছিল। তিনি সপ্তাহে ৫শ ডলার বাজেটের একটি সমসাময়িক টিভি গীতিনাট্য প্রযোজনা করেছেন ড্যান অ্যাকরকেডের সঙ্গে, নাম ‘গ্রিড’। এরপর তিনি ‘দি ল্যাম্পুন গ্রুপে’র সঙ্গে সহযোগি হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাদের মঞ্চ গীতিনাট্যটি বন্ধ হয়েছিল, সেখানে অভিনয় করতেন-বিখ্যাত কৌতুকাভিনেতা ও জাদুকর ‘জন বেলুশি’, একবারের অ্যামি অ্যাওয়ার্ডজয়ী বিখ্যাত কৌতুকাভিনেত্রী ‘গিল্ডা রাডর্নার’ ও রাইটম্যানের নিজের সৃষ্টি ‘বিল মারি’। পরে এই গীতিনাট্য ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাকে নিয়ে গেল অ্যানিমেল হাউজের দিকে।
এরপর থেকে দ্রুত সামনের দিকে চলতে শুরু করলেন আইভান রাইটম্যান। ১৯৯০ সালের ২১ ডিসেম্বর ইউনিভার্সেল পিকচার্সের ব্যানারে তার বানানো ‘কিন্ডারগার্ডেন কপ’ চারদিকে খ্যাতি আরও ছড়িয়ে দিলেন। নিজেকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কমেডি সিনেমার পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন আইভান রাইটম্যান। তিনটি ছেলেমেয়ের বাবা হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে ৩০ জন শিশুশিল্পীদের নিয়ে নিমাণ করেন ‘কিন্ডারগার্ডেন কপ’।
তাদের বয়স ছিল ৪ থেকে ৭ বছর। সেই ছবিতে অভিনয় করেছেন হলিউডের অ্যাকশনের বিখ্যাত তারকা আর্লন্ড শোয়ার্জনেগার। তার মতো মানুষকে কমেডি ছবিতেও অভিনয় করাতে সক্ষম হয়েছেন রাইটম্যান।
একজন পরিচালক হিসেবে রাইটম্যান পড়ে গেলেন ‘সিক্স ডেজ, সেভেন নাইটস’র পর। ২০১৪ সালের পর তার চারটি ছবিই সফলতা পেয়েছে। সেগুলো হলো ‘মাই সুপার এক্স-গালফেন্ড’, ‘নো স্টিংস’, ‘অ্যাটাচড’ এবং‘ ড্রাফট ডে’। এরপর তিনি পরিচালনা না করলেও কিছু ছবি প্রযোজনা করেছেন। তবে শেষবারের মতো ‘গোস্টবাস্টাডর্স : আফটার লাইফ’ ছবি পরিচালনা ও প্রযোজনা করে তুমুল আলোচনায় আসেন তিনি।