চলচ্চিত্রের মানুষরা হাসির পাত্র হয়ে যাচ্ছি: রোজিনা
খ্যাতিমান অভিনেত্রী রোজিনা
খ্যাতিমান অভিনেত্রী রোজিনা। এবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ২০২২-২৪ মেয়াদে মিশা-জায়েদ পরিষদ থেকে কার্যকরী কমিটিতে নির্বাচন করেন। ১৮৫ ভোট পেয়ে জয়ীও হন। হঠাৎ করেই রোজিনা তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। চিঠি দিয়েছেন শিল্পী সমিতির মেইলে। এসব বিষয় ও অন্যান্য কাজ নিয়ে ঢাকাপ্রকাশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন- এ মিজান
ঢাকাপ্রকাশ: শিল্পী সমিতির কার্যকরী সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন। বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?
রোজিনা: বিশেষ কোনো কারণ নেই। আমি ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে সমিতিতে সময় দিতে পারব না। এজন্য পদত্যাগপত্র জমা দিতে বৃহস্পতিবার সমিতিতে লোক পাঠিয়েছিলাম। তবে কাউকে না পেয়ে পরে সমিতিতে মেইল করে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি।
ঢাকাপ্রকাশ: নির্বাচিত হয়ে কার্যক্রম শুরুর আগেই পদত্যাগপত্র পাঠালেন। হঠাৎ পদত্যাগের কথা মাথায় এলো কীভাবে?
রোজিনা: গত পরশু ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেবের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল আমার। নানান বিষয়ের পাশাপাশি এক পর্যায়ে সমিতির কার্যক্রম নিয়ে কথা হয়। তখন কাঞ্চন ভাই সঠিকভাবে আমাকে সমিতির নিয়মগুলো বুঝিয়ে দেন। সমিতির নির্বাচিত কেউ যদি পরপর তিনবার মিটিংয়ে অংশ না নিতে পারেন, তবে নিয়মে আছে তাকে নোটিশ করা। তিনি কিন্তু এটা আমাকে বলেননি। তারপরও আমি ভেবে দেখলাম নিয়ম অনুযায়ী আমি সব সময় মিটিংয়ে অংশ নিতে পারব না। কারণ আমি কখনও দেশে আবার দেশের বাইরে থাকি। যেহেতু ঠিকভাবে সময় দিতে পারব না তাই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনিতো গত চারবছরও কমিটিতে ছিলেন। তখন কি ঠিকভাবে সময় দিতে পেরেছিলেন?
রোজিনা: মিশা-জায়েদের সঙ্গে চারবছর আমি কমিটিতে ছিলাম। তখন তাদের বলেছিলাম আমি কিন্তু সমিতিতে সময় দিতে পারব না। শুধুমাত্র চলচ্চিত্রের জন্য বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মিটিং যদি থাকে এবং আমি সেসময় ঢাকায় থাকলে তবেই সময় দেব। এটা ওরা মেনে নিয়েছে। কিন্তু সঠিক নিয়ম অনুযায়ী নতুন কমিটি যদি আমার সময় না দেওয়াটা মেনে না নেয় তখন লজ্জা পাব। তাই আগে থেকেই পদত্যাগ করেছি। বিষয়টি আমি কাঞ্চন সাহেবকেও বুঝিয়ে বলেছি।
ঢাকাপ্রকাশ: সমিতির নির্বাচন নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে কীভাবে দেখছেন আপনি?
রোজিনা: সর্বপ্রথম আমি চলচ্চিত্রের মানুষ। চলচ্চিত্রই আমাকে রোজিনা বানিয়েছে। শিল্পীদের মাঝে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এটা আসলে কাম্য নয়। বিষয়গুলো হাস্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমরা চলচ্চিত্রের মানুষরা সবার কাছে হাসির পাত্র হয়ে যাচ্ছি।
ঢাকাপ্রকাশ: আলোচনা করে কি এসব সমস্যার সমাধান করা যেত?
রোজিনা: আমরা সবাই চলচ্চিত্রের মানুষ। চলচ্চিত্রের সমৃদ্ধির জন্য সবাই আলোচনা করে হয়তো একটা ভালো কিছু করা যেত। কিন্তু এখন বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে তাই এটা নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। কারণ আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
ঢাকাপ্রকাশ: এভাবে কি চলচ্চিত্রের উন্নয়ন সম্ভব?
রোজিনা: শিল্পীদের মন হয় কোমল। তারা সব সময় শিল্পকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। শিল্পীরা হবে ধৈর্য্যশীল। এখন শিল্পীদের শিল্পও আছে আবার ক্রোধও আছে। ইন্ডাস্ট্রি এখন যে জায়গায় আছে সেটা আমি চাইনি। সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি দিন দিন কত উন্নত হচ্ছে আর আমরা কোথায় যাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে চলচ্চিত্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা যেন আবারও আমাদের চলচ্চিত্রের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাই সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে আপনাকে সমিতিতে কাজ করার কথা বললে আপনি কি কাজ করবেন?
রোজিনা: আসলে মিচ্যুয়ালি অনেক কিছু করা সম্ভব। তারা যদি আমার ব্যস্ততা মেনে নেয়। আমার সময় মতো কাজের সুযোগ সৃষ্টি হলে তখন আমি ভেবে দেখব।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার নির্মিত সিনেমা মুক্তি দেবেন কবে?
রোজিনা: শুটিং, ডাবিং শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন ব্র্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ চলছে। এরপর সেন্সরে জমা দেব। যেহেতু এটা সরকারি অনুদান পাওয়া সিনেমা তাই মন্ত্রণালয়েও জমা দিতে হবে। এ সিনেমা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত। তাই ইচ্ছে ছিল আগামী মার্চে সিনেমাটি মুক্তি দেব। কিন্তু সম্পূর্ণ কাজ শেষ না হওয়ায় মুক্তির তারিখ ঠিক করিনি।
এএম/আরএ