যে কারণে বিয়ে করেননি লতা মঙ্গেশকর
‘ভারতরত্ন’ লতা মঙ্গেশকর। উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি তার। হঠাৎ তার মৃত্যুতে থমকে গেছেন সংগীতপ্রেমীরা। ৯২ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন এ সুরসম্রাজ্ঞী। ২৮ দিন লড়াই করে করোনা-পরবর্তী জটিলতার কারণে মারা যান লতা মঙ্গেশকর।
সারাজীবন খ্যাতি, যশ ও শ্রদ্ধার আসনে থেকেও বিয়ে না করে একাই জীবন কাটিয়ে গেলেন এ কিংবদন্তি। ভক্তদের মনে একটাই প্রশ্ন উড়ে বেড়ায় কেন বিয়ে করেননি লতা মঙ্গেশকর?
ভারতে মধ্যপ্রদেশে ১৯২৯ সালে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম লতা মঙ্গেশকরের। ছোট থেকেই সংগীতের পরিবেশে বেড়ে ওঠা তার। তবে হিন্দি ছবির গান শুনতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর তার বাবা। অল্প বয়সেই বাবাকে হারান লতা। তাই ভাই-বোনদের দায়িত্ব অভিভাবকের মতো পালন করেছিলেন তিনি।
পরিবারের জন্যই আজীবন অবিবাহিত থেকেছেন লতা মঙ্গেশকর। ছোটবেলা থেকেই তিনি তার ভাই-বোন মীনা, আশা, ঊষা ও হৃদয়নাথের প্রতি খুবই স্নেহপ্রবণ ছিলেন। তাদের শিক্ষা থেকে শুরু করে নিজ নিজ ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হতে সহযোগিতা করতেই বিয়ে করা হয়নি তার।
সাংবাদিক খালিদ মোহাম্মদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যক্তি জীবন নিয়ে কথা বলেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল- আজীবন কুমারী থাকলেন, একাকিত্ব ঘিরে ধরেনি?
উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘একমাত্র আমার মা আমার বিয়ে নিয়ে জোরাজুরি করতেন, একসময় তিনিও হাল ছেড়ে দেন। আমার কাছে আমার পরিবার আমার বিয়ের চেয়ে বেশি জরুরি ছিল। কিন্তু এমনটা অস্বীকার করব না যে আমাকে কোনোদিন একাকিত্ব ঘিরে ধরেনি, তাহলে তো আমি মানুষই হতাম না। বিবাহিত কিংবা সিঙ্গেল, একাকিত্ব সবার জীবনে আছে। কখনো কখনো এ একাকিত্ব ক্ষতিকারক হয়। তবে আমি বলব, আমি খুব সৌভাগ্যবান যে ভালোবাসার মানুষেরা আমার আশপাশে সব সময় থেকেছে।’
তবে লতা মঙ্গেশকরের অবিবাহিত থাকার আরও একটি কারণ সংবাদমাধ্যমে ঘুরপাক খেয়েছে নানা সময়ে। এ ঘটনা যদিও লতা স্বীকার করেননি কোনোদিন। লতার ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন প্রয়াত ক্রিকেটার ও ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রাজ সিং দুঙ্গারপুর।
তিনি রাজস্থানের রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন এবং দুঙ্গারপুরের তৎকালীন শাসক প্রয়াত মহারাওয়াল লক্ষ্মণ সিংজির কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন। লতাদের বাড়িতে নাকি রাজ সিং দুঙ্গারপুর নিয়মিত আসতেন। সেখানে রাজ সিং ও লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
রাজ সিং লতা মঙ্গেশকরের নাম দিয়েছিলেন ‘মিঠু’। এ নামেই লতাকে ডাকতেন রাজ সিং। তারা বিয়ের পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু রাজের পরিবার লতার মতো সাধারণ ঘরের মেয়েকে মেনে নেননি। রাজ সিং বাবার কথার অবাধ্য হয়ে বিয়ে করেননি লতাকে। কিন্তু লতার মতো তিনিও আর কোনোদিন বিয়ের পিঁড়িতে বসেননি। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজ সিং দুঙ্গারপুর আলঝেইমার রোগের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মুম্বাইয়ে মারা যান।
কোনোদিন প্রেমে পড়েননি?- এ প্রশ্ন বারবারই শুনতে হয়েছে লতাকে। মুচকি হেসে লতার উত্তর ছিল, ‘হ্যাঁ, পড়েছি তো, তবে শুধু নিজের কাজের সঙ্গে। আর আমি ভালোবেসেছি আমার আপনজনদের, আমার পরিবারকে, আর কাউকে নয়।’
এএম/এসএন