রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ আর নেই
ছবি: সংগৃহীত
না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যার পর তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেন। গণমাধ্যমকে এমনটাই জানান কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী ও শিল্পীর পারিবারিক বন্ধু শামীম আরা নীপা।
এমন মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নীপা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওনার মা মারা যাওয়ার পর থেকেই একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান। ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিলো। বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতারও করলেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছি।’
গত বছর ৮ জুলাই মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ (৯৬) বার্ধ্যক্যজনিত রোগে মারা গেছেন।
মায়ের মৃত্যুর দিন সাদি মহম্মদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘মা গত ১৫ বছর ধরে হুইল চেয়ারে বসেই স্বাভাবিক জীবন পার করছিলেন। দিনমান চেয়ারে বসেই ছুটে বেড়াতেন। তবে কিছু জটিলতা তৈরি হওয়ায় চারদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করি। মা তো আর ফিরলেন না। চেয়ারে আর বসলেন না। জানেন, ৭১ সালের ২৬ মার্চ বাবাকে যখন পাকিস্তানি সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে, তখন আমার এই মায়ের কোলে ছিলো ১০টি সন্তান। এই মা আমাদের ১০ ভাই-বোনকে একা মানুষ করেছেন। সেলাই মেশিন চালিয়ে আমাদের ভাত খাইয়েছেন, পড়াশুনা করিয়েছেন। এই মা ছিল আমার কাছে অন্তহীন আকাশ। যে আকাশে আমি পাখা মেলে দিতাম পাখির মতো। সেই আকাশটা আজ থেকে আর নেই।’
সাদি মহম্মদ সেদিন আরও জানান, তার মা ৭১ সালের ২৬ মার্চের সেই ভয়াল রাতে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্য মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েন। সেদিন থেকে দুটো পা ভেঙে অকেজো হয়। এরপর লম্বা সময় ক্র্যাচ এবং শেষ ১৫ বছর হুইলচেয়ারে জীবন কাটিয়েছেন, একই বাড়িতে। সেই মাকে হারানোর ব্যথা বুকে চেপেই একই বাড়িতেই বেছে নেন স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ।
সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসংগীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একজন কিংবদন্তি শিল্পী ও সুরকার। রবীন্দ্রসংগীতে তার মূল পরিচিতি গড়ে উঠলেও আধুনিক গানেও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার কণ্ঠে। সঙ্গে আধুনিক গানও। এছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমী থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তার বাবা সলিমউল্লাহকে হত্যা করে। তার বাবার নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে। সাদি মহম্মদের ভাই শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী।