ওস্তাদ রাশিদ খানকে চোখের জলে বিদায় জানাল কলকাতা,শেষ ঠিকানা উত্তরপ্রদেশ
ছবি: সংগৃহীত
ওস্তাদ রাশিদ খানের প্রিয় শহর ছিল কলকাতা।দেশ-বিদেশ ঘুরেও বাংলাকেই আঁকড়ে ধরে রাখতেন তিনি। তাই বাংলার প্রিয় শিল্পীর প্রয়াণে শহর থমথমে।রবীন্দ্রসদনে শিল্পীকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এসে,তাই চোখের জলে ভাসলো ভক্ত অনুরাগীরা।কলকাতার টালিগঞ্জের কবরস্থানে তাকে সমাধিস্থ করার কথা থাকলেও শেষ ঠিকানা হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) রবীন্দ্রসদনে শিল্পীকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওসঙ্গীতমহলের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ।
গত মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যুর পর তার মরদেহ রাখা হয় পিস হেভেনে। আজ রবীন্দ্র সদনে নিয়ে আসা হয় রাশিদ খানের মরদেহ। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতায় নাক তলার বাড়ি থেকে শিল্পীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্র সদনে৷ দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রবীন্দ্র সদনেই শায়িত ছিল শিল্পির মরদেহ। সেখানে তাঁর অনুরাগীরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
র দুরান্ত থেকে রাশিদ খানের ভক্তরা ছুটে এসেছিলেন তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। জনপ্রিয় এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে টলিউড ও বলিউডের একাধিক শিল্পী।
গতকাল সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলকাতার টালিগঞ্জের কবরস্থানে তাকে সমাধিস্থ করার জানানো হলেও পারিবারিক ভাবে সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানানো হয়। উত্তরপ্রদেশে বদায়ুঁতে জন্ম উস্তাদ রাশিদ খানের। রাশিদ খানের ঘরানা ছিল রামপুর-সাসওয়ান। জানা গিয়েছে জন্মভুমিতেই সমাধিস্থ করা হবে তাকে। এ কারণেই বুধবারই শিল্পীর মরদেহ রাতের বিমানে নিয়ে যাওয়া হবে উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁতে।
বেশ কিছু দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ওস্তাদ রাশিদ খান। গত কয়েক বছর ধরে শিল্পী প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। এর মধ্যে সম্প্রতি তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) হয়। সেখান থেকেই অবস্থার অবনতি শুরু। অবশেষে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি।
১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে জন্ম রাশিদের। তিনি রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী। যে ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব। রাশিদ তালিম নিয়েছেন এই ঘরানারই আর এক দিকপাল উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ-সাহিবের কাছ থেকে। যিনি ছিলেন রাশিদের দাদু। রাশিদের মামা গোয়ালিয়র ঘরানার ওস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ-সাহিবের থেকেও তালিম নিয়েছেন রাশিদ। মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইলেও ফিউশন বা বলিউড এবং টলিউডের ছবিতে বহু জনপ্রিয় গানও গেয়েছেন শিল্পী।
পাশাপাশি বলিউডের একাধিক জনপ্রিয় সিনেমাতেও রয়েছে তার গান। যে তালিকায় আছে ‘যাব উই মিট’, ‘কিসনা’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘রাজ ৩’-র মতো সিনেমা। এছাড়া বাংলাদেশেও একাধিকবার সংগীত পরিবেশন করেছেন এই শিল্পী।
১০-১১ বছর বয়সে কলকাতা চলে আসেন রাশিদ। সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির স্কলারশিপ নিয়ে দাদু নিসার হুসেনের কাছে গান শেখা শুরু। তার পর থেকে গিয়েছেন কলকাতাতেই। ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী ও ২০২২ সালে পদ্মভূষণ সম্মান লাভ করেন ওস্তাদ রশিদ খান। বাংলা থেকেও পেয়েছেন বঙ্গবিভূষণ সম্মান।