পশ্চিমবঙ্গে 'দ্য কেরালা স্টোরি'র নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ
বলিউডের নতুন চলচ্চিত্র 'দ্য কেরালা স্টোরি'র প্রদর্শন ব্যান করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গেল ৮ মে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই বিভিন্ন মহলে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা শুরু হয়। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ছবির নির্মাতারা। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তাই নয়, তারাও সিনেমাটি দেখবেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইন থেকে জানা গেছে, এদিনের শুনানিতে নির্মাতাদের পক্ষে আইনজীবী হরিশ সালভে প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই সিনেমাটিকে ছাড়পত্র দিয়েছে সেন্সর। সেক্ষেত্রে কেন ছবিটির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হবে? জবাবে সরকারি আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, 'দ্য কেরালা স্টোরি মোবাইলে দেখুন, ওটিটিতে দেখুন, তাতে আপত্তি নেই। খোলা প্রেক্ষাগৃহে সিনেমার প্রদর্শন হলে আইন শৃঙ্খলা সমস্যা হতে পারে।'
কপিল সিব্বাল এবং অভিষেক মনু সিংভির পালটা যুক্তি ছিল, 'আপনারা একবার সিনেমাটা দেখুন। তারপর বুঝতে পারবেন তা কেন ব্যান করা হয়েছে।'
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, সিনেমায় ধর্মান্তরের যে সংখ্যার কথা বলা হয়েছে তা যথাযথ নয়, কাল্পনিক, এই মর্মে সিনেমাটির শুরুতেই ডিসক্লেইমার দিতে হবে এবং তা আগামী শনিবারের (১৯ মে) মধ্যেই।
ছবির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত পশ্চিমবঙ্গে এই ছবির পরিবেশক শতদীপ সাহা। তিনি বললেন, ‘‘খুবই ভাল লাগছে। এটা সিনেমা ব্যবসার জন্য খুবই ভাল সিদ্ধান্ত।’’ এর আগে শতদীপ আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন যে, ছবিটি রাজ্যে ৯২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। প্রথম ৩ দিনে বক্স অফিসে ছবির ব্যবসা দাঁড়িয়েছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ আসার পর নড়েচড়ে বসেছেন রাজ্যের হল মালিকরা। শতদীপ বললেন, 'খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। পর পর হল মালিকদের ফোন আসছে। অনেকেই আবার ছবিটা দেখাতে চাইছেন। কিন্তু শুক্রবার থেকে ছবির তৃতীয় সপ্তাহ শুরু হবে। তাই শেষ পর্যন্ত কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে দেখা যাক।'
তা হলে আবার কবে থেকে দেখা যাবে এই ছবি? শতদীপ বললেন, 'সবে রায় এসেছে। পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে। তাই ঠিক কবে থেকে দর্শক আবার ছবিটা দেখতে পাবেন, সেটা এখনই বলতে পারছি না।' এর আগে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপর রাজ্য সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর ছবির পরিবেশক হিসাবে তার ক্ষতিপূরণের বিষয়টা উল্লেখ করেছিলেন শতদীপ। তার কথায়, 'এখনও আমি লোকসান মেটাতে পারব না। কারণ মাঝে অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। ছবিটা যে আবার দেখানো হবে, আমি তাতেই খুশি।'
শতদীপ অবশ্য তার নিজের প্রেক্ষাগৃহগুলিতে অবিলম্বে ছবিটি প্রদর্শনের দ্রুত ব্যবস্থা করছেন। আদালতের স্থগিতাদেশ কি প্রমাণ করে দিল সিনেমাকে নিষিদ্ধ করে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না? পরিবেশক বললেন, 'অবশ্যই। সিনেমা হল বাঁচানোর জন্য তো কেউ লড়াই করে না! কারণ এমনিতেই রাজ্যের সিনেমা হলগুলো মরে গিয়েছে। সেখানে দুই-চার জন মানুষ হলে ঢুকলে কিছুটা হলেও তো আমাদের উপকার হবে।'
সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের খবর শুনে ছবিটির পরিচালক সুদীপ্ত বলেন, 'আমি এখনই জানলাম। এখনও আদালতের রায়ের প্রতিলিপি হাতে পাইনি। তবে এটা জেনে আনন্দ পাচ্ছি যে, বাংলার মানুষ আমার ছবিটা দেখতে পারবেন। এক জন বাঙালি হিসাবে সত্যিই খুব মনঃকষ্টে ছিলাম। এখন আনন্দ হচ্ছে। কারণ, আমি যে রাজ্যের মানুষ, সেখানেও ছবিটা দেখানো যাবে।'
সুদীপ্ত আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এই বলে যে, মুখ্যমন্ত্রীকে সম্ভবত কেউ ভুল বুঝিয়েছেন। সেই সূত্রেই বার বার বলেছিলেন, 'দিদি এক বার ছবিটা দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।' তিনি বলেছিলেন, 'আমার তো মনে হয়, দিদিকে কেউ ভুল বুঝিয়েছে! বাঙালি ছেলে একটা ছবি বানিয়েছে, আর সেটা না দেখেই বন্ধ করে দেব! এটা হয় নাকি কখনো? উনি তো আমাদের অভিভাবক। পছন্দ না হলে উনি আমাকে ডাকবেন। আমি কথা বলি, তার মত শুনি। দরকার হলে ‘সরি’ বলব তাকে। কিন্তু ছবিটা তো তারও দেখা উচিত।'
/এএস