ইতিহাসের প্রথম ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্রের অস্কার জয়
এবারের অস্কারে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র’র অস্কার নিয়ে ভারতে ফিরেছে ‘দি এলিফেন্ট হুইসপারস’। ভারতের সিনেমার ইতিহাসে এই প্রথম তাদের কোনো প্রামাণ্যচিত্র অস্কার জয় করলো।
প্রামাণ্যচিত্রটি একটি আদিবাসী দম্পতি বোম্মান ও তার স্ত্রী বেলির কাহিনী। তারা একটি এতিম হাতির বাচ্চাকে পেয়ে দেখাশোনা শুরু করেন। এরপর এই হাতি ও তাদের দুজনের গল্প। একটি হাতি ও তার দেখাশোনাকারীদের অত্যন্ত মূল্যবান বন্ধনের কাহিনী।
সিনেমাটির পরিচালক কার্তিকি গনজালভেস তার অস্কার ভাষণে বলেছেন, ‘আমি আজকে এখানে আমাদের ও আমাদের প্রাকৃতিক বিশ্বের সঙ্গে পবিত্র ও অলংঘনীয় বন্ধনটির বিষয়ে বলতে দাঁড়িয়েছি। আমি আমাদের বিশ্বের আদিবাসী সমাজগুলোকে সম্মান করা ও এই জায়গাটি যে জীবিত প্রাণীকুলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকি তাদের প্রতি সদয় হতে বলছি। সবশেষে আমাদের সহাবস্থান করেই থাকতে হবে।’
অস্কারের প্রামান্যচিত্র বিভাগে পুরস্কারটি জয় করা ভারতের ইতিহাসের প্রথম ছবিটিই হলো ‘দি এলিফেন্ট হুইসপারস’। এর আগে ১৯৬৯ সালে ‘দি হাউজ দ্যাট আনন্দ বিল্ড’ এবং ১৯৭৯ সালে ‘দি এনকাউন্টার উইথ ফেইসেস’ মনোনীত হয়েছিল। তবে কোনো প্রামাণ্য ছবিই অস্কার করতে পারেনি।
ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের দি মধুমৌলি টাইগার রিজার্ভের ভেতরের দি তেপাকাদু এলিফেন্ট ক্যাম্পে এই ছবিটির শুটিং করা হয়েছিল। যে বাচ্চা হাতিটিকে এতিম পেয়ে তার দেখাশোনা করেন, সেটি ‘রঘু’, বোম্মান ও বেলি সেটিকে তারা আহতাবস্থায় পেয়েছিলেন। সে তার হাতির পাল থেকেও আলাদা হয়ে গিয়েছিল। পরে বেলি ‘আম্মু’ নামের একটি নারী হাতির বাচ্চারও দেখাশোনা করেন।
তারা থাকেন তাদের আদিবাসী গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত সংরক্ষিত বনের মধ্যে কাতুনাকন নামের একটি সমাজে।
তারা একসময় হাতি নিয়ে একটি পরিবারের মতো বাস করতে থাকেন। এটি ছাড়াও মানুষ ও পশুদের মধ্যে একটি গাঢ় বন্ধনের উৎস হলো এই প্রামাণ্যচিত্র। একসময় রঘুর সঙ্গে আলাদা হয়ে আম্মু বেলিকে নিয়ে কাঁদে। রঘুকে আরেকটি জায়গায় আরেকজনের দেখভালের জন্য নিয়ে যায় বনবিভাগ।
সিনেমা হলগুলোতে এই অন্যরকম ছবিটি মানুষ ও হাতির মধ্যে ভালোবাসা ও গাঢ় অনুরাগের উদাহরণ হিসেবে মানুষকে টেনেছে।
সিনেমাটি অস্কার জয়ের পর প্রধান অভিনেতা বোম্মান বিবিসিকে তার তেলেগু ভাষায় বলেন, ‘আমরা এই পুরস্কারের জন্য খুশি। তবে আমাদের খারাপ লাগছে যে, রঘু আমাদের সঙ্গে এখন নেই।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার দেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে অস্কার জয়ের ফলে টুইট করেছেন, ‘এই ছবিটি প্রকৃতির মধ্যে মানুষ ও প্রাণীকুলের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশের মধ্যে আমাদের সম্প্রীতি নিয়ে বসবাসের উজ্জ্বল উদাহরণ।’
ওএফএস/এএস