৬ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে চাকমা ভাষার ‘পোড়া কবাল্লে’
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠন হিলর ‘প্রোডাকশন' এর ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন বছরে নতুন চমক আসছে চাকমা ভাষার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘পোড়া কবাল্লে’।
আগামী ৬ জানুয়ারি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন হবে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে। ওই দিন সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন করা হবে। পরে ‘হিলর প্রোডাকশন’-এর ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাবে ‘পোড়া কবাল্লে’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি। এর বাংলা ভাষার অর্থ হলো পোড়া কপাল।
সংগঠনটির সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়িদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিকাশ ও রক্ষার জন্য ২০১৭ সালে ‘হিলর প্রোডাকশন’ প্রতিষ্ঠা করেন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা সুপ্রিয় চাকমা শুভ। এ ছাড়াও সুপ্রিয় চাকমা শুভ পরিচালিত দাভা টেঙা, স্ববনত তুই, চাগুরি, ম মনান হিঙিরি বুঝেম, মানেয় জনম, আক্কল, জিত্তোসহ ১৩টির অধিক চাকমা ভাষার চলচ্চিত্র নির্মাণ করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ‘হিলর প্রোডাকশন’-এর ইউটিউব চ্যানেলে।
২০২৩ সালে ৬ জানুয়ারিতে হিলর প্রোডাকশন সাংস্কৃতিক সংগঠনটির ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নতুন বছরে ‘পোড়া কবাল্লে’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি দিচ্ছে সংগঠনটি।
এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সুপ্রিয় চাকমা শুভ বলেন, ‘হিলর প্রোডাকশনের প্রযোজনায় ১৩টির অধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আর এসব চলচ্চিত্র নিজ উদ্যোগে এবং নিজের টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে পৃষ্ঠপোষকতার কথা উল্লেখ থাকলেও তা আমরা কখনো সহযোগিতা পাইনি।
সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে যদি পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি আদিবাসীদের জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি নিয়ে ভিডিও চিত্র নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা করা হতো তাহলে বাংলাদেশে আদিবাসীদের জীবনধারা আরও পরিবর্তন হতো।
চলচ্চিত্রটির কাহিনি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এ চলচ্চিত্রে মদ (মাদক), চাকরি এ দুইটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। মদ পান করে সংসারে ঝামেলা সৃষ্টি করেন নায়কের বাবা এলিন চাকমা। পরে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নায়কের মা আত্মহত্যা করেন। বাড়ি ছেড়ে চলে যায় নায়ক। অনেক প্রতিকূলতার মাঝে বড় হয়ে চাকরি না হওয়ার কারণে প্রেমিকাকে হারান নায়ক সুমন চাকমা। মাদক আর চাকরি বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে। আর এসব বিষয় চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে চাকমা ভাষার মাধ্যমে।
এ চলচ্চিত্রটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুমন চাকমা, জেনি চাকমা, সাধন চাকমা, অমল চাকমা, সুদিপ্তা চাকমা, নিপা চাকমা ও এলিন চাকমা। সাধন চাকমা চরিত্রে অভিনয় করা সাধন চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন হিলর প্রোডাকশনের মাধ্যেমে চাগুরি, পোড়া কবাল্লে ও স্ববনত তুই নামক তিনটি চাকমা ভাষার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। সুপ্রিয় চাকমা আমাকে চলচ্চিত্র জগতে আনছেন। তার নির্মিত চলচ্চিত্রে যদি অভিনয় করার সুযোগ করে না দিতেন তাহলে অভিনয় কী জিনিস আমি কোনো দিন অনুভব করতে পারতাম না।’
নায়ক ও নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করা সুমন চাকমা ও জেনির চাকমার অনুভূতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা জানান, মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যেমে ‘পোড়া কবাল্লে’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। যা তাদের জন্য অত্যন্ত খুশির সংবাদ। নিজস্ব উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ও ঐতিহ্য তুলে ধরে এ পর্যন্ত সুপ্রিয়র বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। এবারের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপলক্ষে মুক্তি পেতে যাচ্ছে চাকমা ভাষার চলচ্চিত্র পোড়া কবাল্লে। এ চলচ্চিত্রও দর্শকের ভালো লাগবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
এসএন