বব ডিলানের ১৫০ প্রেমপত্র নিলামে
২০১৬ সালে সাহিত্যে নোবেল জয়ী ৮১ বছরের বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গীতিকার। অন্যতম সেরা গায়ক বব ডিলানের লেখা গভীর ভালোবাসায় ঘেরা মাধ্যমিকের প্রেয়সীর কাছে লেখা ব্যক্তিগত প্রেমপত্রগুলো ৩ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার থেকে নিলামে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে।
কিশোর বব ডিলান তখন তখন গাইতেন তার ভালো নাম ‘বব জিবারম্যান’ হিসেবে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের মানুষদের কাছে ‘হিবিং বালক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মোট ৪২টি প্রেমপত্র লিখেছেন তিনি তখন। তার প্রেমিকা লিখেছেন ১শ ৮টি। ফলে তাদের পরস্পরকে লেখা ১৫০টি প্রেমপত্র রয়েছে। ডিলানের ভালোবাসার এই কিশোরীর নাম হলো ‘বারবারা অ্যান হিউয়েট’।
তাদের প্রেমপত্রগুলো বিনিময় হয়েছে ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সালের মধ্যে, মোটে দুই বছরের তুমুল কিশোর প্রেমের সময়ে।
ব্যক্তিগত এই গোপন সংগ্রহটি নিলামে আনছে ‘আর আর অকশন’ নামের একটি কোম্পানি। কোনোদিনও এর আগে কখনো বব ডিলানের এই প্রেমপত্রগুলো কোথাও প্রকাশিত হয়নি। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফোক-রক আইকনের প্রেমপত্রগুলো নিয়ে এর মধ্যেই তুমুল সাড়া পড়ে গিয়েছে গানের মানুষদের ভুবনে। অন্যরাও গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
সেগুলোতে আছে তার জীবনের একেবারে শুরুর দিকের অনেক তথ্য, মনোজগতের পূর্ণ ছবি। নিলাম প্রতিষ্ঠান আর আর অকশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ববি লিভিংস্টোন বলেছেন, ‘আমরা যারা এর আগে অফার করেছি ক্রেতাদের কেনার জন্য, ২০ শতকের তাদের যেকোরো সবচেয়ে গুরুত্বপূণ সাংস্কৃতিক সংগ্রহটির একটি হলো ডিলানের প্রেমপত্রগুলো।’ প্রেমপত্রগুলোর মধ্যে আছে একটি শালীন ‘ভালোবাসা দিবসের কার্ড’।
এই বিষয়ে বব লিভিংস্টোন বলেছেন, ‘ডিলানের গড়ে ওঠার দিনগুলোতে প্রথম ব্যক্তি (তিনি নিজে)’র দেওয়া সঞ্চয়।’
২০২০ সালে অস্কার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পদক ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল’ জয়ী বব ডিলানের কিশোরী প্রেমিকা পূর্ণ বয়সে মারা গিয়েছেন। এরপর তার মেয়ে মায়ের এই গোপন সঞ্চয় খুঁজে পেয়েছেন।
সত্যিকারের আসল খামে ডিলানের হাতের লেখায় প্রেমপত্রগুলো চিরকালের জন্য রেখে দিয়েছেন তার মা। মায়ের এই সারা জীবনের সঞ্চয় নিলামে ওঠার পর দরে বনে বিক্রি হয়ে যাবে ১৭ নভেম্বর ২০২২ তারিখে, আর মাত্র দুদিন পর।
আর আর অকশন আরও জানিয়েছে, বব ডিলানের এই বিনিময় করা প্রেমের চিঠিগুলোতে আরও আছে খাবার, গাড়ি’র মতো কিশোর বয়সীদের ভাবনাগুলো। তাদের লেখা চিঠিগুলোতে আছে সংগীত নিয়ে বব ডিলানের ভাবনা ও গানে স্বাদের কাহিনি।
এ ছাড়া, টুকটাক কবিতা লিখেছেন স্বভাবকবি। আগের সময়ে, সেই জীবনে গভীরভাবে ভালোবাসা এই মেয়েটিকে লেখা বব ডিলানের চিঠিগুলো আরও স্বাক্ষ্য দেয়, তিনি তার কাছে নিজের ভবিষ্যত জীবনের কাহিনিও বলেছেন। সেখানে তার গভীর স্বপ্নগুলো বুনে রেখেছেন তিনি। কেন না, এর মধ্যে চিঠির কাহিনিগুলো মানুষের সামনে আসতে শুরু করেছে। একটি চিঠিতে তিনি তার নামটি বদলে ফেলার বিষয়ে প্রেমিকার মতামত চেয়েছেন। তারা নিজেদের কাছে পত্রগুলো লিখতেন লিটল উইলি ও অ্যালসটোন নামে।
এই চিঠিগুলোর বিষয়ে বব ডিলানের একজন বড় ভক্ত লিভিংস্টোন বলেছেন, ‘তারা আসলে আলো ফেলেছেন তখনকার জীবনে কীভাবে বব ডিলান নিজেকে প্রকাশিত করতে চলেছেন।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘চিঠিগুলো প্রমাণ করে ডিলান তার প্রতিভার জীবনে সবকিছু ওপরে তুলতে চাইছেন, চলেছেন এবং পরবতীতে সবই বাস্তব হয়েছে, যে স্বপ্নগুলো তিনি দেখেছেন।’
আর সব কিশোর প্রেমের মতো বব ডিলানের এই ভালোবাসাটিও সমাপ্ত হয়েছে। একেবারে শেষের দিকের একটি চিঠিতে, ডিলান তাকে দেওয়া ছবিগুলো ফেরৎ চেয়েছেন এক সময়ের ভালোবাসার মেয়েটির কাছে। তবে সেখানে এও বলেছেন, তাকে ভুলে যাননি তিনি।
মিসেস হিউয়েটের মেয়ে আর অর অকশনকে এও জানিয়েছেন, বব ডিলান তার মাকে ১৯৬০’র দশকের শেষের দিকের কোনো এক সময়ে বলেছেন, যখন তিনি সাফল্যের শুরু করেছেন, ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে আসতে। তবে তাকে নিরস্ত্র করেছেন প্রেমিকা। এরপর থেকে গানের দিকে চলে গেলেন বব ডিলান।
লাল চুলের একটি স্বর্ণকিশোরী ছিলেন তখনকার মেয়েটি। এই বিষয়ে ডিলান ভক্ত লিভিংস্টোন জানিয়েছেন, ডিলানের কিছু গানে লাল চুলের কী পিঙ্গল চুলের এক নারীর উপমা আছে, যেটি তিনি তার এক সময়ের ভালোবাসার নারী হিউয়েটকে নিয়ে গেয়েছেন। তার বিখ্যাত গান ‘ট্যাঙ্গেলড আপ ইন ব্লু (নীলের জটে উঠে)’তে একটি বাক্যে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন, ‘এখনো যদি তার চুল লাল থাকত।’
তবে বারবারা অ্যান হিউয়েটের জীবনও এগিয়ে গিয়েছে। তিনি তার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের হিবিং শহরেরই একজনকে বিয়ে করেছেন। তবে ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে।
তারা মোটে সাত বছর সংসার করতে পেরেছেন। এরপর আর কোনোদিন বিয়ে করেননি বব ডিলানের কিশোর প্রেমিকা, জানিয়েছেন তার মেয়ে।
উল্লেখ্য, বব ডিলানের জন্ম ১৯৪১ সালের ২৪ মার্চ, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের ডুলুথ শহরে। সেন্ট ম্যারি হাসপাতালে। তিনি বেড়ে উঠেছেন হিবিং শহরে। তারা লিথুয়ানিয়ান ইহুদি। আমেরিকায় অভিবাসী, ১৯০২ সালে। ডিলানের শৈশব, কিশোরকাল কেটেছে খনি এলাকার মেসাবি রেঞ্চে। তারা থাকতেন লেক সুপিরিয়রের পাশে। ডিলানের ছয় বছর বয়সে তার বাবা পোলিওতে আক্রান্ত হলেন এবং তার মা চলে এলেন তার জন্ম শহর হিবিংয়ে।
ওএফএস/