মহাতারকা অমিতাভের গল্প
তিনি আজকে ৮০ বছর, তারপরও যেকোনো সময়ের চেয়ে অভিনয়ের তুখোড়। তার চরিত্রগুলোর মাধ্যমে ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছেন সেলুলয়েডে এবং পরিচালকরা তাকে নেবার জন্য স্বাক্ষর নিতে এখনো লাইন ধরে আছেন। তারা বলেছেন, অমিতাভ বচ্চন ছিলেন এবং এখনো আছেন একজন উত্তেজক অভিনেতা। হয়তো আগে যারা সেখানে ছিলেন তাদের মধ্যে তিনি সেরা। রমেশ সিপ্পি, যিনি তাকে ধর্মীয় প্রার্থনার প্রথার মতো ছবি ১৯৭৫ সালের ‘শোলে’ ছবিতে পরিচালনা করেছেন, তিনি থেকে অয়ন মুখার্জি, তিনি তাকে পরিচালনা করেছেন ব্রক্ষ্মাস্ত্র, সাম্প্রতিক সিনেমাটিতে ৪৭ বছর পর, বচ্চন সেই মানুষটি যিনি সব মৌসুমের এবং সব ধরণের ছবির সেরা মানুষ হয়েছেন।
‘কত দারুণ ইনিংস ছিল সেটি এবং তিনি আরো ভালো করা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি অভিনয় করেছেন এত বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে কমেডি, নাটকীয়, প্রেম, নাচ ও গানের ছবিতে এবং চরিত্রে। তিনি যেকোনো কিছু করতে পারেন এবং সবকিছু-সঠিকভাবে। আছেন এমন কেউ আরো বড় এবং আরো বেশি ভালো? আমি সন্দেহ পোষণ করি’ বলেছেন রমেশ পিটিআইকে মহাতারকার ৮০তম জন্মদিনে। আর অয়ন মুখাজি বলেছেন, ‘আমার জন্য বচ্চন সাহেব আমার ছবিতে হাঁটছেন একটি বিরাট বিষয়। তিনি ভারতীয় সিনেমার বাবা। তিনি আমাদের চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে সম্মানিত মানুষ।’
তার ভারতের হিন্দি ছবির ভুবনে, সেলুলয়েডের রূপালি ভুবনে যাত্রা শুরু হয়েছিল ৭ নভেম্বর ১৯৬৯ সালে সাত হিন্দুস্তানী সিনেমাটি মুক্তির মাধ্যমে। এই ছবিতে ছিলেন বাঙালি অসাধারণ তারকাভিনেতা উৎপল দত্ত। তার চরিত্রটি জগিন্দরনাথ। আর অমিতাভের আনোয়ার আলী। সিনেমাটির চিত্রনাট্য ও পরিচালক খাজা আহমেদ আব্বাস। একটি ঐতিহাসিক সিনেমা, কাহিনীতে সাতজন ভারতীয় তরুণ বিপ্লবী পতুর্গিজদের কলোনি বা উপনিবেশ থেকে ভারতের গোয়া অঙ্গরাজ্যকে স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সেখানে তার চরিত্রটি তুলনামূলকভাবে দুর্বল ছিল। তবে এই ধরণের ছবি সবসময় খুব ভালো চলে। যদি উপযুক্তভাবে পরিবেশন করা যায়। তিনি সেই সময়গুলোকে তার রুটি-রুজির সন্ধান ও সিনেমা শেখার জীবন বলে জানিয়েছেন। আর বিকাশ ঘটলো, ছড়িয়ে গেলেন অমিতাভ ১৯৭৩ সালের সিনেমা জাঞ্জির (বাংলায় জিঞ্জির) ছবি দিয়ে। ১৯৭৩ সালের ১১ মে বেরুলো অ্যাকশন থ্রিলার ছবিটি। সেলিম-জাভেদের বানানো। সালমানের বাবা সেলিম খানের চিত্রনাট্য। জয়া ভাদুরী (পরে স্ত্রী) নায়িকা, সঙ্গে আছেন প্রাণ। নতুন একজন নায়ক হিসেবে এই ছবিতেই শুরু হলো অমিতাভের। ছবিটি ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নে মুক্তি পেল। এই সিনেমাটিই তাকে তারকার পথে হাঁটতে দিল। এরপর ১৯৭৫ সালের দিওয়ার এবং শোলে তাকে একজন সুপারস্টার করলো।
জাঞ্জিরই অমিতাভের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট, দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমারও একটি টার্নিং পয়েন্ট ছবিটি। কেননা এই ছবিতে তার সঙ্গে অভিনয় করেছেন পরে তামিল সুপারস্টার রজনীকান্ত। ভারতীয় সিনেমার ভুবনে জাঞ্জিরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, একটি ক্লাসিক ছবিও। তবে মহাতারকা দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ, রাজ কুমার ও ধর্মেন্দ্রকে তার আগে এই ছবির নায়ক হতে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে তাদের কেউই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেননি।
তবে এরপর আর কোনোদিন একটি মুহূর্তের জন্যই অমিতাভকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, তার লেখকরা, সিনেমার পাঁড় ভক্তরা পাঁচটি দশক ধরে সেই মানুষটির সাফল্যের রহস্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন, যিনি তাকে নতুন করে উপস্থাপন এবং আবিস্কার করে চলেছেন। জাঞ্জির-এর সেই রাগী যুবক (পুলিশ অফিসার), ডন এবং দিওয়ার’র আন্তরিক যুবক আর অনেক বছর পরের চুপকে চুপকে ছবিতে হাস্যরসে ভরা একজন অধ্যাপক। আর ৭০ দশকের তার তুমুল সময়ের একজন বিবাদকারী গায়ক মানুষ। সবখানেই তিনি দারুণ তারকা। কী লম্বা, কী অসাধারণ তার চলাফেরা, কী তার মুহূর্তে, মুহূর্তে বদলে যাওয়ার ভঙ্গি। আর নায়িকার প্রেমিক, মানুষের সাথী। এরপর এলো তার ধারাবাহিক জীবনে ১৯৮০’র দশক। সেখানে তার ছবি আছে সুপার, ডুপার হিট শক্তি আর সিলসিলা।
৯০ দশক দেখলো একজন নায়কের বয়সের ভারে মন্দা জীবন। তিনি যৌবন পেছনে ফেলেছেন। তারপরও আছে মৃত্যুদাতা এবং লাল বাদশার মতো সিনেমা। এরপরের দশকে টিভিতে এলেন তিনি সুপারস্টার হিসেবে, চিরাচরিত অমিতাভ হিসেবে কোন বনেগা ক্রোড়পতিতে। সালটি ২০০০। ২২ বছর পরও এই শোটি এখনো চলছে অমিতাভের জন্য। এই সময়কাল সিনেমাতে বয়সী মানুষের চরিত্রগুলো করতে লাগলেন। শুরু হলো মোহাব্বাতিন দিয়ে আর চললো অতি ভালোভাবে তার বৈচিত্র্যময় চরিত্র খোঁজার স্বাথকতায় পিংক, চিনি কম ও জুন্দের মাধ্যমে।
সিপ্পি এই বিষয়ে মনে করেন শোলেতে তাকে নেওয়ার মাধ্যমে অমিতাভের জীবনের বৈচিত্র্যের স্বাদ শুরু হয়েছিল যেখানে ধর্মেন্দ্র ও অমিতাভ ছিলেন চোর-কিন্তু সেয়ানা। বলেছেন আরো, “আমি তার আগের দুটি ছবি দেখেছিলাম, আনন্দতে তিনি একটি সিরিয়াস চরিত্র করেছেন। আমার হিসেবেও চরিত্রটি কঠিন, তিনি বাদ পড়ে গিয়েছেন ফলে তারকার আলো থেকে, বম্বে টু গোয়ায় তিনি তুলনামূলকভাবে অনেক হালকা চরিত্রাভিনেতা, এখানে তিনি আরো কর্কশ, এই চরিত্রটি আমাকে তার জন্য কাজ করতে অনেক বেশি বাধ্য করেছে। এরপর আমরা তাকে সাইন করালাম। শোলের কয়েক মাস পর জাঞ্জির ও দিওয়ার পুক্তি পেল। তবে যখন শোলে এলো, তিনি উঠতি তারকা। আর পরে সুপারস্টার” কিংবদন্তী এই চলচ্চিত্র পরিচালক জানিয়েছেন। তিনি শক্তিতেও বচ্চনের সঙ্গে কাজ করেছেন। বানিয়েছেন শান ও আকিলা’র মতো সিনেমা। তিনিও বলেছেন, ভারতীয় সিনেমাভুবনের মেগাস্টারকে ক্যামেরার সামনে তার জাদু আবার তৈরি করতে দেখা দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ ও শেখার। তিনি এই কাজ করে চলেছেন বড় ও ছোট পর্দায়, যেখানে কাজ করেছেন, এত, এত বছর ধরে। তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাদের ভারতীয় সিনেমা ভুবনে খুব ভালো অনেক অভিনেতা, অভিনেত্রীরা আছেন। তাদের সবার প্রতি সবোচ্চ সম্মান প্রদশনের সময়ও তিনি ওপরে থাকেন।’ তারা তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলেও অমিতাভের পরিচালকরা সবাই তাকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কজনকে নিয়ে করা যায়? তার চরিত্রগুলোতেও তারা তেমন সুযোগ তাকে দিয়েছেন।
ওএফএস।