আরেকটি ছবির জন্য এক হয়েছেন ডিক্যাপ্রিও এবং স্করসেইজি
হলিউডের অন্যতম প্রধান নায়ক লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও এবং কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা মার্টিন স্করসেইজি তাদের সপ্তম ফিচার সিনেমা প্রকল্প উন্নয়ন কাজ শুরু করেছেন।
অভিনেতা-নির্মাতা জুটি এখন কাজ করছেন তাদের ষষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘কিলারস অব দি ফ্লাওয়ার মুন’-এ।
তারা যুক্ত হয়ে গিয়েছেন নতুন কাজে একটি নন-ফিকশন বই বা প্রকৃত তথ্যভিত্তিক সাহিত্য ‘দি ওয়েজা : অ্যা টেল অব শিপ্রেক, মিউটিনি অ্যান্ড মার্ডার’ বা ‘বাজিকর বা পণ রাখা মানুষটি : সর্বনাশ, বিদ্রোহ ও খুনের একটি কাহিনী’ বইটিকে সিনেমাতে রূপদানের জন্য।
আগের বইটি যার লেখা, এই সিনেমার কাহিনীটিও তার কাছ থেকেই নিয়েছেন হলিউডের ইতিহাসের সেরা দুই মানুষ।
নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলিং হয়েছে পণ রাখা মানুষটির কাহিনীটি।
বইটির লেখক ডভিদ গ্রাম বা ডেভিড গ্রান। তিনি একজন মার্কিন সাংবাদিক, দি নিউইয়র্কার ম্যাগাজিনের স্টাফ রাইটার ও বহুল বিক্রিত কটি বইয়ের লেখক।
নতুন প্রকল্পেরও পরিচালক থাকবেন স্করসেইজি। ৭৯ বছরের এই বরেণ্য পরিচালক অস্কারজয়ী বলাবাহুল্য। অনেক, অনেক সেরা ছবি ও পুরস্কার আছে তার।
‘দি ওয়েজা : অ্যা টেল অব শিপ্রেক, মিউটিনি অ্যান্ড মার্ডার’ ছবিটি বিশ্বখ্যাত আইফোন ও কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ইনকরপোরেশনের ‘অ্যাপল অরিজিনাল ফিল্ম’ বা অ্যাপলের প্রযোজনায় সতিকারের সিনেমা হিসেবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বানানো হবে।
ছবিটি অ্যাপল টিভি ও অ্যাপলের ইন্টারনেট স্ট্রিমিং মিডিয়া প্রভাইডারের পৃষ্ঠপোষকতাও লাভ করবে।
আগের ছবিটির মতো নতুন সিনেমাটিও অ্যাপলেরই আর্থিক সহযোগিতায় বানানো হবে।
ডিক্যাপ্রিও ও স্করসেইজির নতুন সিনেমার কাহিনীটি বই আকারে লিখে গ্রাম এই বছরের এপ্রিলে প্রকাশ করেছিলেন।
বইটির সত্যিকারের কাহিনীটি ১৭ সালের একটি ব্রিটিশ নৌ জাহাজের কাহিনীকে ঘিরে। জাহাজটির নামেই বইয়ের নাম ‘দি ওয়েজা’। তখন ব্রিটিশরা সারা বিশ্বে ঔপনিবেশ স্থাপন কাজে ব্যস্ত। একটি গোপন মিশন নিয়ে ব্রিটিশ রাণীর আদেশে একটি স্পেনের পালতোলা জাহাজের পিছু ধাওয়া ও সমুদ্র যুদ্ধে লিপ্ত হন ওয়েজার ক্যাপ্টেন। তাদের এই অবিশ্বাস্য, ক্লান্তিকর ও যুদ্ধজীবন শেষ হয় সর্বনাশের মাধ্যমে, একটি নি:সঙ্গ দ্বীপে। সিনেমার বা সেই আমলের ‘দি কোস্ট অব প্যাটাগোনিয়া’ আজকের আর্জেন্টিনার সঙ্গে যুক্ত তিয়েরা দেল ফুয়েগো, আছে চিলি ও ঘুমিয়ে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে। চিলির তিনভাগের একভাগ সমুদ্র উপকূল এখন সেই জায়গা।
নানা ঘটনা, দুঘটনা, আপদ, বিপদ, যুদ্ধ বিগ্রহের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, বাঁচার তীব্র লড়াইয়ে নেমে দি ওয়েজা জাহাজের নাবিকের দল নৈরাজ্যেরও শিকার হন।
যখন তারা সব হারিয়ে সমাজে ফিরে আসেন, তাদের বিপক্ষের লোকেরা তীব্রভাবে হামলে পড়ে এবং ওয়েজার অবশিষ্ট নাবিককে কোর্ট মাশালে নিয়ে যায়।
তাদের কয়েকটি হত্যাকান্ড ও বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে আদালতে অসহায়ভাবে দাঁড়াতে হয়।
ডেভিদ গ্রামের আগের যে বইটি থেকে ডিক্যাপ্রিও-স্করসেইজি এখন ছবি বানাচ্ছেন, ‘কিলার অব দি ফ্লাওয়ার মুন’ বা ‘চাঁদের আলোর হত্যাকারীরা’; ১৯২০ সালে ওসেইজ আদিবাসীদের একটি সিরিজ হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা পুলিশ ডিক্যাপ্রিও’র তদন্ত। ছবিটি দর্শকদের টেনে নিয়ে যাবে তাদের বরাবর কাজের মতো ১৯২০ সালে। ওসেইজদের পানির মাঝখানের মানুষ বা ‘পিপল অব দি মিডল ওয়াটারস’ নামেও ডাকা হয়। তারা আমেরিকার পশ্চিমের মাঝখানের আদিবাসী। এই আদিবাসীরাই ওহাইও এবং মিসিসিপি নদীর উপত্যাকাগুলো ৭০০ শতকে নির্মাণ করেছেন। তাদের সহযাত্রী ছিলেন একই ভাষার অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠী। ওহাইও ৯শ ৮১ মাইল দীর্ঘ নদী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় পানি নিষ্কাষণ করা নদী। মিসিসিপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই পুরো উত্তর আমেরিকারই দ্বিতীয় নদী। ১৭ শতকের পর তারা পশ্চিমে স্থানান্তরিত হন। মিসৌরি ও মিসিসিপি নদীর তীরগুলোতে চলে আসেন।
কিলার অব দি ফ্লাওয়ার মুন ছবিতে লিওনাদো ডিক্যাপ্রিও’র সঙ্গে অভিনয় করেছেন নিজ নামেই খ্যাতিমান হলিউডের বর্ষীয়ান তারকা রবার্ট ডি নিরো। ডি নিরো সিনেমা ইতিহাসের অন্যতম সেরা অভিনেতা, বয়স এখন ৭৮। তিনি মার্টিন স্করসেইজির সঙ্গে নয়টি ছবিতে কাজ করে অত্যন্ত বিখ্যাত হয়েছেন। দুটি অস্কার জয়ী তারকা। আছেন জেসি প্লেমেন্স। শিশু অভিনেতা হিসেবে জেসির জীবনের শুরু। এখন ৩৪। একটি প্রাইম টাইম অ্যামি আছে তার।
এ পর্যন্ত ডিক্যাপ্রিও’র জীবনের অর্জনে মাটিন স্করসেইজির পাঁচটি যে ছবি, সেই যুথবন্ধনের শুরু ২০০০২ সালে। প্রথমটি ‘গ্যাংস অব নিউ ইয়র্ক’। একটি মার্কিন ইতিহাসনিভর সিনেমা। ছিলেন ক্যামেরন ডায়াজও। ১৯২৭ সালের একটি বই থেকে নেওয়া কাহিনী। পুরোনো ইতিহাসের এই সিনেমাটির পেছনে স্করসেইজির জীবনের ২০টি বছর কেটেছে। ১৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে বিশ্বজুড়ে। তাদের অন্য ছবিগুলোও অনেক আয় করেছে।
গ্যাংস অব নিউইয়র্ক আসলে ১৯৬২ সালের কাহিনী। খ্রিস্টানদের ক্যাথলিক-প্রটেস্টানদের দীর্ঘকাল একটি জায়গায় ধর্মীয় বিবাদ সহিংসতার দিকে চলে যায়। আয়ারল্যান্ড থেকে অভিবাসী ছোট্ট একটি দল এই যুদ্ধের বিপক্ষে নামে। ছবিটি ১১ সেপ্টেম্বরের আক্রমণের জন্য মুক্তি পিছিয়ে দেয়। এই ছবি ১০টি বিভাগে অস্কারের মনোনয়ন লাভ করে। অস্কারের সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘বেস্ট পিকচার’, ‘বেস্ট ডিরেক্টর’ ও ‘বেস্ট অ্যাক্টর’ পুরস্কার জয় করে। ড্যানিয়েল ডে-লুইস এখন আর অভিনয় করেন না। তিনি অবসর নিয়েছেন। ৬৫ বছরের এই ব্রিটিশ অভিনেতার জীবনের সেরা অর্জন এই সিনেমাতেই। তিনি তিনটি বিভাগে ইতিহাসের একমাত্র অভিনেতা হিসেবে তিনটি অস্কার জয় করেছেন। ‘গ্যাংস অব নিউ ইয়র্ক’র মাধ্যমে তিনি একটি অস্কার জয় করেছেন সেরা অভিনেতার।
২০০৪ সালের ছবি ‘দি এইভিয়েটার’ একটি ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের নিয়ে বানানো ছবি। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও করেছেন হাওয়ার্ড হিউজ চরিত্র। তিনি তার জীবদ্দশায় বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও সফল ধনীদের একজন ছিলেন।
২০০৬ সালে তারা মুক্তি দিয়েছেন ‘দি ডিপার্টেড’। ছবিটি ২০০২ সালের হংকংয়ের ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্সের রিমেক। উইন্টার হিল গ্যাং নামের অপরাধী চক্রের সত্যিকার জীবন নিয়ে বানানো। দলটি বোস্টন, ম্যাসাচুসেটসের আইরিশ দল।
চার বছর পর বেরিয়েছে এই জুটির তৃতীয় ছবি ‘শাটার আইল্যান্ড’। ছবিতে একজন ডেপুটি ইউএস মার্শালের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডিক্যাপ্রিও। সিনেমাটি সাউন্ড ট্র্যাক, ক্লাসিক্যাল মিউজিক ব্যবহারের জন্যও তুমুল খ্যাতি পেয়েছে।
তাদের শেষ ছবি ৯টি বছর আগের, ‘দি উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’। মার্কিন শেয়ার বাজার ওয়াল স্ট্রিটে একজন স্টক ব্রোকারের জীবননির্ভর। এই ছবিটিই প্রথম মার্কিন সিনেমা হিসেবে ডিজিটাল ডিসট্রিবিউশনে গিয়েছে।
সর্বশেষ স্করসেইজি পরিচালনা করেছেন ২০১৯ সালে। সিনেমার নাম ‘দি আইরিশ ম্যান’।
তাদের প্রতিটি ছবিই বই থেকে নেওয়া।
ওএস।