মাসুদ রানা হলিউডের তারকা ফ্রাঙ্ক গ্রিলো
মাসুদ রানা এবার আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে। ‘এমআর-৯’ নামে ইংরেজি ছবিটির শুটিং শুরু হতে যাচ্ছে, পুরোনো খবর। তবে নতুন ও চমকপ্রদ সংবাদ, হলিউডের অ্যাকশন তারকা ফ্রাঙ্ক অ্যান্টনি গ্রিলো এই ছবির নায়ক হচ্ছেন। সারা দুনিয়ার দর্শকরা তাকে চেনেন, মার্ভেল কমিকসের সুপার ভিলেন বা অসম্ভব বড় অপরাধী ব্রক রামলো হিসেবে। এই অপরাধী ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’র প্রতিপক্ষ। মাসুদ রানার যেমন কবীর চৌধুরী।
ফ্রাঙ্ক গ্রিলো ২০১৪ সালের ব্লক বাস্টার ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা : দি উইন্টার সোলজার’, দুই বছর পরের পর্ব ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা : সিভিল ওয়ার’, ২০১৯ সালের ‘অ্যাভেঞ্জারস : এন্ড গেম’ ও ২০২১ সালের অ্যানিমেটেড পর্ব ‘হোয়াট ইফ’তে অভিনয় করে দুনিয়াজুড়ে নাম কামিয়েছেন।
বাংলাদেশের কাজী আনোয়ার হোসেনের স্পাই থ্রিলার রানার ওপর ‘এমআর নাইন’ ছবিতে মাসুদ রানার ভূমিকায় অভিনয় করছেন ফ্রাঙ্ক গিলো। এমআর নাইন হলো রানার গোয়েন্দা সংস্থার কোড। এই ছবির দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে শুটিং শুরু হবে।
ক্যাপ্টেন আমেরিকা বাদেও তিনি ‘দি পার্জ : অ্যানাকি’ (অরাজকতাটি মুক্ত করা) ছবির জন্য খুব বিখ্যাত। এখানেই প্রথম বড় চরিত্রে অভিনয় করেন। তার গত বছরের বিখ্যাত ছবি হলো ‘কপশপ’।
প্রবাসী বাংলাদেশী লেখক-পরিচালক আসিফ আকবর হলিউডের এই ছবির পরিচালক। তিনি খুলনার ছেলে। বড় হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডের কাছের একটি এলাকায়। ১৮ বছর বয়সে চলে গিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। ১৮ বছর বয়সে হলিউডের কলম্বিয়া স্কুলে পড়ালেখা করতে ভর্তি হয়েছেন। স্বাধীন ধারার ছবি পরিচালনা এবং প্রযোজনা করে গিয়েছেন। টিভি প্রডাকশনও। এগুলো সবই তার কলেজ জীবনের কাজ। সিনেমা ও টিভি প্রযোজনার ওপর যে ‘ব্যাচেলর অব ফাইন আটস’ বা ‘বিএফএ’ ডিগ্রি নিয়েছেন।
আসিফ আকবরের বিশ্বব্যাপী প্রযোজনা তৈরি এবং বাণিজ্যিক সাফল্য লাভের সুনাম আছে। ২০০৪ সাল থেকে ৫০টির বেশি ছবি ও টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজনা, লেখা ও পরিচালনা করেছেন তিনি। সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ‘দি কমান্ডো’। ছবিটিতে তিনি অস্কারের জন্য মনোনীত ও গোল্ডেন গ্লোব জয়ী অভিনেতা মিকি রকের সঙ্গে কাজ করেছেন। সেখানে তার সঙ্গে আরো ছিলেন বিখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান অভিনেতা, মার্শাল আর্টিস্ট ও পরিচালক মাইকেল জাই হোয়াইট। প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান অভিনেতা হিসেবে তিনি কমিক বুক ‘স্পন’র ‘এল সাইমন্স’ চরিত্র করেছেন ১৯৯৭ সালে।
এমআর-৯ ছবিটির চিত্রনাট্য মাসুদ রানার প্রথম বই ‘ধ্বংস পাহাড়’ অবলম্বনে। প্রথম প্রকাশিত ১৯৬৬ সালে। ইংরেজিতে ‘ডেমেলিশন হেল’। পুরোপুরি মৌলিক, কাজী আনোয়ার হোসেনের কল্পনা ও লেখার স্বাদে পূর্ণ। তবে এই ছবির চিত্রনাট্যের পুরো গল্পটি জানানো হয়নি। গোপন রাখা হয়েছে। কেবল জানানো হয়েছে, ধ্বংস পাহাড় থেকে চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন তিনি, জাজের মালিক আবদুল আজিজ ও লেখক নাজিম উদ-দৌলা মিলে। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এমআর নাইন রানা ফ্রাঙ্ক গ্রিলো-জানিয়েছেন তারা।
কাজী আনোয়ার হোসেন মোট ৫শ ৫০টি রানা সিরিজ করেছেন তার সেবা প্রকাশনী থেকে। সেটি ব্যাপকভাবে জেমস বন্ড দ্বারাও অনুপ্রাণিত।
‘রানা-এমআর ৯’র প্রডাকশন কম্পানি-বাংলাদেশের সিনেমার অন্যতম ত্রাতা জাজ মাল্টিমিডিয়া ও লস অ্যাঞ্জেলসভিত্তিক ‘অ্যাল ব্রাভো ফিল্মস ইনকরপোরেশন’। উগান্ডার অভিনেতা ও প্রযোজক হেমদে কিউয়ানুকা, ব্রিটিশ-আমেরিকান অভিনেতা, গায়ক, নৃত্যশিল্পী কলিন বেটইস, আসিফ আকবর নিজে, সিঙ্গাপুরের অভিনেতা ও স্টান্ট ফিলিপ টান ও জাজের আবদুল আজিজ মিলে প্রযোজনা করছেন। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আছেন অভিনেতা-প্রযোজক নিকো ফস্টার, জি-কিউ, এসকয়ার ও ফোবর্সে ফিচার হওয়া নিউ ইয়র্ক সিটির প্রযুক্তিভিত্তিক পুরুষ স্টাইলিস্ট পিটার নোউইন ও ‘হলিউড মিডিয়া ব্রিজ’ নামের সিনেমা ও টিভি স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান ফিলিপ ডি. গোল্ডফাইন।
এই ছবি বাদেও গ্রিলো কানাডিয়ান-আমেরিকান বিনোদন কম্পানি লায়নস গেট এন্টারটেইনমেন্ট করপোরেশনের আগামী ছবি ‘প্যারাডাইজ হাইওয়ে’তে অভিনয় করছেন। তার সঙ্গে অভিনয় করছেন অস্কারজয়ী প্রখ্যাত মার্কিন কালো অভিনেতা ৮৫ বছরের মর্গান ফ্রিম্যান।
এছাড়াও তিনি অভিনয় করছেন ইতালির ফেররুচো লাম্বরগিনির চরিত্রে। ছবিটির নাম ‘লাম্বরগিনি’। তিনি ইতালির অটোমোবাইল ডিজাইনার, উদ্ভাবক, মেকানিক, প্রকৌশলী, শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। অটোমোবাইল লাম্বরগিনি সম্রাজ্যের মালিক। ১৯৬৩ সালে কম্পানিটি শুরু করেছেন। উচ্চ ক্ষমতার স্পোটর্স কারের নির্মাতা, ট্রাক্টর বানিয়েছেন তিনি।
ওএস।