চলে গেলেন বন জোভির অ্যালেক জন সাচ
বিশ্বের অন্যতম সেরা আমেরিকান রক ব্যান্ড ‘বন জোভি’। ১৯৮৩ সালে সেভিল নিউ জার্সি, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয়। দলের মূল গায়ক ‘জন বন জোভি’। কি-বোর্ড বাদক ডেইভিড ব্রায়ান। প্রতিষ্ঠাতা ড্রামার টিকো টরেস। গিটারবাদক ফিল এক্স। প্রতিষ্ঠাতা বেজ গিটার বাদক হিউ ম্যাকডোনাল্ড। বিশ্বখ্যাত এই গানের দলটি জন বন জোভির নামে প্রতিষ্ঠিত। তিনিই প্রধান পুরুষ। এই গানের দলের এখন লাইন আপটি হলেও আসল ও প্রতিষ্ঠাতা বেজ গিটার বাদক ছিলেন অ্যালেক জন সাচ। তিনি ১১ বছর পর দল ত্যাগ করেন। অ্যালেক জন সাচ ও সহ-গীতিকার বা গান লেখক রিচি সামবোরা (এই পুরুষ ২০১৩ সালে দলটি ছেড়ে দেন) যখন কাজ করতেন বন জোভিতে, তখন ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইংলিশ রক গানের দল ছিল বন জোভি, এখনো তারা কিংবদন্তী।
তাদের প্রথম ব্যান্ড গানটি হলো ‘রানাওয়ে’, সেরা মার্কিন ৪০টি গানের তালিকায় সেই বছরই ফাটল ধরিয়ে দেয়। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মধ্যে বন জোভি তাদের প্রথম দুটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। ১৯৮৬ সালে বন জোভি লাভ করেছে ব্যাপক মাত্রায় সাফল্য ও বৈশ্বিক স্বীকৃতি জয় করে নিয়েছে তাদের এই তৃতীয় অ্যালবামের মাধ্যমে। অ্যালবামের নাম হলো ‘স্লিপারি হয়েন উই’। বেরুনোর পর সাড়া পড়ে যায় এবং ২০ মিলিয়ন বা দুই কোটি কপি বিক্রি আজ পর্যন্ত। এই অ্যালবামের মোট ১০টি গানের তিনটি শীর্ষে চলে আসে এবং দুটি গানই টপ চার্টের প্রথম স্থান অধিকার করে নেয় তখন। গান দুটি হলো ‘ইউ গিভ লাভ অ্যা ব্যাড নেম’ আরেকটি, ‘লিভ ইন অন অ্যা প্রেয়ার’। তাদের জন্মস্থান নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের নামে তারা চতুর্থ অ্যালবাম ‘নিউ জার্সি’ বের করেন। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত অ্যালবামটিও অত্যন্ত সফল হয়েছে। সারা দুনিয়াতে বিক্রি হয়েছে মোট ১ কোটি কপি। ১০টি সিঙ্গেল বা একক গানের তালিকাতে ৫টিই ছিল। দুটি গান ছিল এক নম্বরে। একটি হলো ‘ব্যাড মেডিসিন’ আরেকটি “আই’উল বি দেয়ার ফর ইউ”।
১৯৮০’র দশকে ইংরেজি ব্যান্ড গানের ধারা বদলে দেওয়া এই গানের দলটি সেই দশকের শেষের দিকে ব্যাপক ও বিস্তৃতভাবে গানের শোগুলো করেছে। ১৯৮৮ থেকে পরের দুটি বছর তারা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে, ‘নিউ জার্সি ট্যুর’ করেছেন তারা আনাচে, কানাচে।
বন জোভি ও রিচি সামবোরা আলাদাভাবে একক গানের অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন ১৯৯০ ও ১৯৯১ সালে পরপর। সেগুলোও সফল হয়েছে।
‘বন জোভি’ গানের দল মোট ১৬টি অ্যালবাম করেছে। এই বন জোভি ব্যান্ড দলটিকে ব্যান্ড সঙ্গীতের ইতিহাসে ‘হেভি মেটাল’ ও ‘পপ’ গানের মধ্যে ফারাক বা শূণ্যতা তাদের স্টাইল ও আরামের মাধ্যমে পূরণ করে দেবার কৃতিত্বটি দেওয়া হয়।"
আজ বন জোভির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ‘অ্যালেক জন সাচ’ ৭০ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন বলে ঘোষণা করেছে গানের দলটি। তিনি তাদের প্রথম তিনটি সুপারহিট গান, স্লিপারি হয়েন উই’, ইউ গিভ লাভ অ্যা ব্যাড নেম’ ও ‘ব্যাড মেডিসিন’র নেপথ্য নায়ক।
বন জোভি আরো জানিয়েছে, ‘ব্যান্ড দলটির সদস্যদের একত্র বা একটি প্রাণ করানোর কৃতিত্বটিই অ্যালেক জন সাচের। তিনি সবসময় একজন বুনো ও জীবনে পর্রি প্রিয় বন্ধু হিসেবে স্মরণীয় হবেন।’
কিভাবে অ্যালেক জন সাচ মারা গিয়েছেন বিস্তারিত জানানো হয়নি।
দলের প্রতিষ্ঠাতা, প্রধান, গায়ক ও গীতিকার বন জোভি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রিয় বন্ধুর জন্য লিখেছেন, ‘অ্যালেক আমাদের ব্যান্ডটির অখন্ড গঠনের জন্য অপরিহার্য ছিল। সত্যি কথা বললে, আমরা একে অন্যের ভেতরে তার ধাক্কায় নিজেদের পথগুলো খুঁজে পেয়েছি।’
“অ্যালেক জন সাচ ছিলেন ব্যান্ডের ‘টিকো’ নামে খ্যাত টিকো টোরেসের ছোটবেলার বন্ধু।" ৬৮ বছরের টিকো টরেস এই ব্যান্ডের ড্রামার, পারকাশনবাদক ও গীতিকার। তিনি ২০১৮ সালে রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমে বন জোভির সদস্য হিসেবে জায়গা করে দিয়েছেন।
বন জোভি আরো বলেছেন, ‘তিনি গিটার বাদক ও গীতিকার রিচি সামবোরোরকে দলের পারফরমেন্স দেখতে নিয়ে এসেছেন ও পরে যুক্ত করেছেন।’
৬২ বছরের রিচি স্টিফেন সামবোরো একজন সুবিখ্যাত মার্কিন রক গানের গিটারবাদক, গায়ক ও গীতিকার এখন। তিনি একজন অ্যালবাম প্রযোজকও। বন জোভিতে ১৯৮৩ সালে ঢুকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার পারফরমেন্সের কল্যাণে অত্যন্ত খ্যাতিমান। তিনি ও বন জোভি মিলেই বন জোভি ব্যান্ড দলের প্রধান গানগুলো লিখেছেন। তিনিও ২০১৮ সালে সামবোরোর সঙ্গে রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমে জায়গা করে নিয়েছেন বন জোভির হয়ে।
বন জোভি গড়ে তোলায়ও অ্যালেক জন সাচের অনন্য অবদান আছে।
বন জোভি লিখেছেন, ‘আজকে অ্যালেক জন সাচের মৃত্যুতে আমার স্মৃতিতে সেই বিশেষ স্মৃতিগুলো, আমাদের ও অ্যালেকের কাজগুলো খুব মনে পড়ছে। তাতে আমার যেমন হাসি পাচ্ছে, তেমনি চোখে পানি চলে আসছে ওকে হারানোর ব্যথায়। আমরা সবাই তাকে প্রিয়তম বন্ধু হারানোর ব্যথায় কাতর হিসেবে আজীবন বয়ে বেড়াব।’
অ্যালেক জন সাচের জন্ম ১৯৫১ সালের ১৪ নভেম্বর। তিনিও নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের নিউ জার্সি শহরের ছেলে। তাদের বন জোভি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি নাম কুড়ানো শুরু করেন সুপারস্টার ছেলেদের সঙ্গে। এর আগে অ্যালেক একটি ব্যান্ডে কাজ করতেন, নাম ‘দি ম্যাসেজ’।
এই ব্যান্ডে প্রবেশের আগে অ্যালেক জন সাচ ছিলেন তাদের সেভিলের (এটি একটি পৌরসভা, মিডলসেক্স শহর নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্য) হাঙ্কা বাঙ্কা বলরুমের ম্যানেজার। তিনি বন জোভি ও দি ওয়াইল্ডস ওয়ানসের জন্য বলরুমগুলো বুক করতেন ও মাঝে, মধ্যে বাজাতেন। এরপর বন জোভিতে যোগ দিলেন। তার সেই সময়ের আরেকটি ব্যান্ড দল ‘দি ওয়াইল্ডস ওয়ান’ হলো নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিউ ইয়র্ক শহরের একটি দল। শুরুতে দলনেতা ছিলেন জর্ডান ক্রিস্টোফার। চিপ টেইলারের ওয়াইল্ড থিংসের প্রথম সংস্করণটি রেকর্ড ও অত্যন্ত হিট গান দি ট্রগসের জন্য তারা সুবিদিত।
তিনি বন জোভিতে তার বন্ধু গায়ক ও বাদকের দলের চেয়ে বয়সে এবং অভিজ্ঞতায় বড় ছিলেন। অ্যালেক জন সাচ বলেছেন, ‘যখন বন জোভিতে গান করব বলে আমি যোগদান করলাম, তখন আমাদের রেকর্ড কম্পানিটি আমার বয়স নিয়ে মিথ্যা বলতে, বলতে অভ্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। কেননা আমাদের তো হিট করাতে হবে তরুণীদের কাছে। তখন আমার ৩১। পুরো ব্যান্ডের সব সদস্যের চেয়ে আমি ১০ বছরের বড় ছিলাম। আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও, পত্রিকাগুলো যখন আমাকে তার চেয়ে ছোট বলত, আমার বোন পড়তে গিয়ে রাগত ও পাগল হয়ে যেত। এসবই আসলে কাটতির বিষয়। বয়সে অন্যদের চেয়ে হওয়াই আমার ব্যান্ডটি ছেড়ে যাবার কারণ।’
‘আর বন জোভিতে শুরুর কারণ হলো ৪৩ বছর বয়সে আমাকে কাজ করতে হবে কিন্তু আমি কাজ করতে চাইতাম না। এর ফলেই আমি একটি ব্যান্ড দলে যোগ দিলাম। কেননা কাজে আমার মন ছিল না। আমি গান ভালোবাসি’-রসিক মানুষটি বলেছেন।
এই বন জোভি ছেড়ে যাওয়ার পর তার জায়গাটি নিয়েছেন হিউ জন ম্যাকডোনাল্ড।
এরপর অ্যালেক জন সাচ আবার দলে কাজ করলেন, ২০১৮ সালে যখন তাদের রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমের জন্য কাজ করতে হলো। দলটি সেবার এই সবচেয়ে বড় সম্মানে জায়গা করে নিয়েছে, তাদের দুই সদস্যও।
অ্যালেক জন সাচের মনে পড়ে, ‘তখন বন জোভি আমাকে আসতে বলল ও অনেক বছর আগে কাজ করা তার ব্যান্ড দলে আবার কাজ করতে অনুরোধ করল, তখনই আমার উপলদ্ধি হলো, সে কতটা সিরিয়াস, তার একটি উদ্দেশ্যই ছিল, আমাদের সবাইকে এক করবে। বলেছিল। আমি তার অংশ হতে পেরে খুবই খুশি হয়েছিলাম আবার।’
ছবি : ১৯৮৬ সালে কনসার্টে রিচি সামবেরো, বন জোভি ও অ্যালেক জন সাচ। অ্যালেক জন সাচ বন জোভিতে। ২০১৮ সালে রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমে গাইছেন বন জোভির অ্যালেক জন সাচ।
ওএস।