টাকার অভাবে থেমে গেছে ক্যান্সার আক্রান্ত পরিচালক শহীদুল হক খানের চিকিৎসা
একটা মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়লে মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতে। বেঁচে থাকার আকুতি করে কেঁদে ফেলেন। যে মানুষটি কয়েক বছর আগেও প্রাণবন্ত ছিলেন, সৃষ্টিশীলতা নিয়ে মজে ছিলেন প্রতিনিয়ত, সেই খ্যাতিমান মানুষটি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের সারাজীবনের আয় রোজগাড় শেষ করেছেন। প্রতিদিন ওষুধ বাবদ দুই হাজার ৯০০ টাকা লাগে তার। কিন্তু কে দেবে এই টাকা? কিছুই তো আর অবশিষ্ট নেই তার। একমাত্র ছেলে যতটুকু আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। সেখানে প্রতিদিন ওষুধের জন্য এতটাকা খরচ করা যেনো মরার উপর খাড়ার ঘাঁ।
বলছি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক নন্দিত গীতিকবি শহীদুল হক খানের কথা। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অমানবিক এক জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তাই চক্ষু লজ্জার কথা ভুলে সবার কাছে সাহায্য চেয়েছেন। এর আগে তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ লাখ টাকা সাহয্য করেছিলেন। সেই টাকার সঙ্গে তার নিজের আরও ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে তার শারিরীক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। কিন্তু এমন অবস্থায় চিকিৎসা করার সামর্থ্য একদম নেই তার।
অসুস্থ অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকলেও মরণের দিন গুণছেন প্রতিনিয়ত। কারণ, বেঁচে থাকার জন্য সুস্থতার পাশাপাশি মৌলিক চাহিদা পূরণের সক্ষমতা হারিয়ে গেছে তার। হতদরিদ্র হয়ে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন তিনি।
শমী কায়সার, ঈষিতাসহ অনেক তারকার ক্যারিয়ারে রয়েছে শহীদুল হক খানের অবদান। অথচ তারা কেউই আর গুণী এই মানুষটির দুর্দিনে পাশে নেই। অনেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে আর তাদের খবর মেলেনি।
এ সম্পর্কে শহিদুল হক খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমি কখনো দু’পয়সার সম্পত্তি করিনি। আমি সব সময় কাজের পেছনে ছুটেছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু আমার এমন অবস্থা হবে এটা কখনো কল্পনাও করিনি। আমি যদি চিকিৎসা করাতে পারি তাহলে সুস্থ্য হয়ে উঠার সম্ভবনা অনেক বেশি। কিন্তু চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমার নেই। প্রতিদিন ঔষুধ খাওয়ার যে টাকা লাগে এটাই পারি না। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন তিনি যদি আমার চিকিৎসার জন্য আবার সাহায্য করতেন তবে আমি হয়তো বেঁচে যেতাম। এ ছাড়া আমার কাছে বা দূরের যারা আছে সবার কাছেই সহযোগিতা চাই। আমি বাঁচতে চাই। আমি আবারও সিনেমা বানাতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতা’ নামে নতুন একটি সিনেমা বানাতে চাই। কিন্তু আমি সুস্থ না হলে আমার সেই স্বপ্ন হয়তো পূরণ হবে না। তাই সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই।’
‘ছুটির ফাঁদে’, ‘কলমিলতা’, ‘সুখের সন্ধানে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি বাংলাদেশে প্যাকেজ নাটকের অন্যতম রূপকার তিনি। তার নির্মিত ‘ছুটির ফাঁদে’ চলচ্চিত্রে তার লেখা ‘সাগরের সৈকতে কে যেন দূর হতে ডেকে ডেকে যায়’ এমন কথায় গান লিখে সেরা গীতিকার হিসেবে ১৯৯০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শহিদুল হক খান। শুধু তাই নয়, এই গানে কণ্ঠ দিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথম শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান কিংবদন্তি শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। তার লেখা ‘বলো মা কেন এতো ক্লান্ত লাগে’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন উপমহাদেশের অন্যতম কিংবদন্তি শিল্পী মান্না দে। এ ছাড়া তার লেখা গানে কণ্ঠ অনেক কিংবদন্তি শিল্পীরা।
খ্যাতিমান এই পরিচালক নির্মাণ করেছেন ‘একজন ভাষা সৈনিকের গল্প’ নামে আরও একটি সিনেমা। এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, প্রয়াত এস এম মহসিন। এই সিনেমার কাজ অনেক আগে শেষ হলেও এখনো মুক্তি পায়নি। এটা নিয়েও রয়েছে তার অনেক আক্ষেপ। যারা এ গুণী মানুষের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করতে চান তারা তার বিকাশ নম্বর: ০১৭৪৮২৮০১২০ যোগাযোগ করতে পারেন।
এএম/এমএমএ/