ছাত্র, ছাত্রীদের সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যগুলো ঘোষণা করল কান
‘২৫তম লা চিনেফ’ বিভাগটি হলো স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বা শর্ট ফিল্ম শাখা। তবে এই বিভাগে চলচ্চিত্র স্কুলগুলোর ছাত্র, ছাত্রীদের বানানো ছবিগুলোকে পুরস্কার দেয় কান চলচ্চিত্র উৎসব।
এবারের লা চিনেফ বাছাইতে মোট ১৬টি ছাত্র, ছাত্রীদের বানানো ছবি ছিল। সেগুলো বিশ্বের ৩শ ৭৮টি চলচ্চিত্র বিদ্যালয়ের মোট ১৫শ ২৮টি ছবি থেকে কয়েক দফায় বাছাই করে নেওয়া।
বিভাগটিতে কান চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের সভাপতি হলেন মিশরের খ্যাতিমান পরিচালক ইউসরি নাসরুল্লাহ। তিনি ২৬ জুলাই জন্মেছেন ১৯৫২ সালে রাজধানী কায়রোতে। একজন লেখকও। তার বিখ্যাত সিনেমা হলো ১৯৮৮ সালের ‘সামার থিফটস’, ১৯৯৯ সালের ‘এল ম্যাডিনা’ ও ২০০৮ সালের ‘দি অ্যাকুয়ারিয়াম’। নাসরুল্লাহ ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহির গ্রেফতারের বিপক্ষে প্রতিবাদ করেছেন। ফলে তাকে ২০১০ সালের ১ মার্চ গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং ইভিন কারাগারের ২০৯ নম্বর সেলে বন্দী করা হয়েছিল।
এবারের চিনেফি শাখায় তার দলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন কানাডিয়ান অভিনেত্রী ও পরিচালক মনিয়া চোকরি, ফরাসি অভিনেতা, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার এবং ফেলিক্স মোয়েতি, তার দেশের সাংবাদিক ও লেখক জঁ ক্লদ রাসতিয়াজা এবং বেলজিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক লাওহা ভ্যান্ডেল।
ফ্রান্সের বুনুয়েল থিয়েটারে এই কৃতি মানুষগুলো ২০২২ সালের লা চিনেফ পুরস্কারগুলো প্রদান করেছেন। এর আগে তারা ছবিগুলো দেখেছেন।
প্রথম পুরস্কার জয় করেছে ইতালির ছবি ‘ইল বারবিয়েরে কমপ্লোতিস্ত’তা। মানে হলো ‘একজন চক্রান্তকারী’। রাজধানী রোমের আশপাশের এলাকায় বস্তি এলাকার একজন ব্যাংক কমকতার গল্প, যিনি ষড়যন্ত্রে বা চক্রান্তে বিশ্বাস করেন। তবে এই পুরুষটিই তার পরিবারে হাসির উৎস, ব্যাংকেও। কেউই তাকে গুরুত্ব দেননি, যখন পুলিশ গ্রেফতার করলো, সবাই চমকে গেলেন। বানিয়েছেন রোমের ২৬ বছরের তরুণ চলচ্চিত্রকার ভ্যালেরিনো ফেরারা। তিনি ইউরোপের সবচেয়ে পুরোনো সিনেমা বিদ্যালয় দি সেন্তেরো সুপেরিমেন্তালা দি সিনেমাতোগ্রাফিয়ার ছাত্র। রোমে ১৯৩৫ সালে তৈরি এই স্কুলটি চলচ্চিত্রের শিল্প দর্শন ও প্রযুক্তি এবং চলচ্চিত্রায়ন শেখায়।
দ্বিতীয় পুরস্কারটি জয় করেছে ‘ডি আর’। মানে হলো ‘কোথাও’। পরিচালক লি জিয়া হেই। হুবেই প্রদেশের হুবেই ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির স্কুল অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের ছাত্র।
তৃতীয় পৃরস্কার দুটি শর্ট ফিল্ম একত্রে লাভ করেছে। একটি হলো ‘গ্লোরিয়াস রেভ্যুলুশন’। মানে ‘মহৎ বিপ্লব’। বানিয়েছেন ইহুদি-ইউক্রেনিয় শিল্পী পরিবারের সন্তান ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ও চলচ্চিত্রকার মার্শা নোভিকোভা। মেয়েটি বেড়ে উঠেছেন রাজধানী কিয়েভে। পড়ালেখা করেছেন ফিল্ম আর্টে। তিনি অত্যন্ত ভালো ছাত্রী হিসেবে ডিগ্রিটি নিয়েছেন জার্মানির মিউনিখের ফিল্ম স্কুল থেকে এবং পাশ করেছেন ডিসটিংশনসহ। এরপর স্নাতক ও এমএ করেছেন ব্রিটেনের লন্ডন ফিল্ম স্কুল থেকে। তার বিষয় হলো চলচ্চিত্র নিমাণ। অনার্সের বিষয় হিসেবে তিনিও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়েছেন গ্লোরিয়াস রেভ্যুলুশন।
তৃতীয় পুরস্কার জয়ী পরের ছবিটি হলো “লেস হিউমানিস কন্স কুয়ান্ড ইলস এ’ইমপিলেন্ট”। মানে ‘যখন ঠেসে ধরা হয়, তখন মানুষগুলো বোবা হয়ে যায়’। বানিয়েছেন ফরাসী চলচ্চিত্রকার লরেন্স ফার্নান্দেজ। একজন তরুণ ফরাসী নারী পরিচালক। পড়ালেখা করছেন ফ্রান্সের লা সিনেফেব্রিক সিনেমা স্কুলে।
কান চলচ্চিত্র উৎসব প্রথম পুরস্কার জয়ী ছবিটিকে ১৫ হাজার পাউন্ড এবং ক্রেস্ট বরাদ্দ করেছে। দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে আছে ক্রেস্ট ও ১১ হাজার ২শ ৫০ পাউন্ড এবং সাড়ে ৭ হাজার পাউন্ড ভাগাভাগি করে নেবেন তৃতীয় পুরস্কারের দুটি ছবির পরিচালক। তারা ক্রেস্টও পাবেন।
৩১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে এই চারটি ছবি দেখানো হবে দি সিনেমা দঁ প্যাথেওনে। এটি শতবর্ষেরও বেশি বয়সী, ১৯০৭ সালে চালু হওয়া বিখ্যাত সিনেমা হল।
ছবি : কান চলচ্চিত্র উৎসবের ছাত্র, ছাত্রীদের সেরা শর্ট ফিল্ম শাখার প্রধান বিচারক ইউসরি নাসরুল্লাহ ও এবারের প্রথম পুরস্কারজয়ী ছবির দৃশ্য।
ওএস।