ইউক্রেনের পরিচালক স্তানিস্লাভ কাপরালভের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা
রাশিয়া তার দেশ আক্রমণের পর পালিয়ে রাজধানী কিয়েভ থেকে পশ্চিম ইউক্রেনে চলে গিয়েছেন ইউক্রেনের পরিচালক স্তানিস্লাভ কাপরালভ। তবে এই কঠিন সময়েও তিনি নিজের জন্মভূমি ছেড়ে যেতে চাননি। নির্মাতা হিসেবে অনুভব করেছেন, যুদ্ধ ও সংঘাতগুলো তার দেশ ও সিনেমার ভুবনের জন্য নতুন চিত্রনাট্য লিখে চলেছে।
‘আমি এখন ইউক্রেনে। যুদ্ধে সৈন্য সংগ্রহের জন্য পুরুষদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেওয়া হয়নি। তবে দেখিনি, বেশি পুরুষ চলে যেতে চেয়েছেন। প্রত্যেকে তারা ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ে দেশের জন্য থাকতে চান’-একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন। তিনি ২০২০ সালে বেরুনো ‘লেট ইট স্নো’ ও গত বছর মুক্তি পাওয়া তার ‘ইগ্রেগর’ ছবির জন্য বেশি পরিচিত। পরের হলিউড প্রকল্পটিতে কাজ করছিলেন। তখনই তার দেশে আক্রমণ করল রাশিয়া। বলেছেন-‘যুদ্ধের আগে আমি একটি নতুন ছবির শুটিং করতে প্রস্তুতিগুলো নিচ্ছিলাম। যেটি সম্ভবত চেরনোবিলে ক্যামেরা বন্দী করা হতো। তবে তাদের লাথি দিয়ে বের করে দেবার সৌভাগ্য অর্জনের পর আমি আবার প্রকল্পে ফিরব। আমরা ইউরোপেও শুটিং করতে যাব বলে ভাবছি। নতুন প্রকল্পটির শুটিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করতে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো লাগবে। ভাবছি, সিনেমাটি যুদ্ধের পর ইউক্রেনে একটি অগ্রাধিকার প্রকল্পের মর্যাদা লাভ করবে।’
এই অঞ্চলে সংঘাতটি শুরুর পর থেকে তার জীবনের সবকিছুই বেঁচে থাকার যুদ্ধ ও পরিবারকে যুদ্ধের হাতছানি এবং সংকট থেকে দূরে সরিয়ে রাখার পরিকল্পনা ও কাজে ব্যস্ত রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘এখন ইউক্রেনের পশ্চিম অংশে কোনো বোমাবর্ষণ হচ্ছে না। সেখানে যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে আমি ছিলাম। আমার পরিবারকে ইউরোপিয় ইউনিয়নের অংশে নিয়ে গিয়েছি। এরপর ফিরে এসেছি।’
কীভাবে তিনি ও তার বন্ধুরা দেশকে সাহায্য করতে চেষ্টা করছেন এই বিষয়ে বলতে গিয়ে স্তানিস্লাভ কাপরালভ বলেছেন, ‘আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতাগুলোতে দেশকে সাহায্য করতে ঢেলে দিতে সংকল্পবদ্ধ। যুদ্ধের আদেশের দিন আমার বাবাকে রাজধানী কিয়েভ থেবে সরিয়ে নেবার পরিকল্পনা ও কার্যে রূপান্তরে ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের প্রথম দিনটিই কোনোদিন কোথাও না দেখা কাজ-যুদ্ধ করা ও পরিচালনার অভিজ্ঞতা। তাকে এই অবস্থায় বাড়ি থেকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমার বন্ধুরা ভালো বলে বাবাকে বাসা থেকে নিয়ে এসেছে। তিনি কেবল একটি ব্যাগ নিয়ে বেরুতে পেরেছিলেন। তখন কিয়েভে আকাশ অভিযান চলছিল। ফলে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, সবকিছু ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে। তিনদিন পর জানলাম বাবা এর মধ্যে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়রসতে চলে গিয়েছেন। আমার দাদী এখনো কিয়েভে আছেন। তিনি চলে যেতে রাজি হননি।’
এখানে কাপরালভ-একজন চিত্রনাট্যকার এবং প্রযোজকও তিনি; তার দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেস্কিকে এই সংকটে নিজের ভূমিকার জন্য একজন ‘নায়ক’ বলে অভিহিত করে তার বন্দনা করলেন। এরপর জানালেন, ‘যুদ্ধের আগে আমাদের আমরা রাষ্ট্রপতিতে সবাই সমর্থন করিনি। তাদের মধ্যে আমিও আছি। তবে এই কঠিন সময়ে তিনি নিজেকে নায়কের মতো তুলে ধরেছেন। প্রতিদিন যুদ্ধ করে চলেছেন এবং আজ তিনি দেশের মুখমন্ডল ও আত্মায় পরিণত হয়েছেন। আমরা সবাই তার পেছনে আছি। তিনি আমাদের ধ্বংস হতে দেননি। আমরা সেটি চাইওনি।’
এই বিখ্যাত পরিচালক ইউক্রেনের সিনেমা শিল্পে কয়েকটি বড় নামের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার বড় কাজের মধ্যে আছে ‘প্যাসিফিক রিম : আপরাইজিং আইভান্না সাকন।’
তার দেশকে সাহায্য করতে অন্য দেশগুলো কাজ করছে বলে কৃতজ্ঞতা জানালেন পরিচালক। বলেছেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ যে, পুরো বিশ্ব ন্যায়বিচার সংরক্ষণে এক হয়েছে। ইউক্রেন এখন গণতন্ত্রের নিরাপত্তার একটি ঢাল, দেশটি শান্তি ও ন্যায়বিচারের প্রতীক। আমি আশাবাদী, এই সমর্থন চলতে থাকবে।’
ওএস/