বানানো নয়, সত্যিকারের মনোজ কুমারের গল্পই ‘টুয়েলফ্থ ফেল’
IRS শ্রদ্ধা যোশি ও IPS মনোজ কুমার । ছবি: ইন্সটাগ্রাম থেকে
চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া পরিচালিত ‘টুয়েলফ্থ ফেল’ (Twelfth Fail) নামক সিনেমা। বছরের শেষে এসে রীতিমতো সুপার ডুপার সারা জাগিয়েছে দর্শকমহলে। মুক্তির পর থেকেই ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছে বিক্রান্ত ম্যাসি এবং মেধা শঙ্কর অভিনীত উপন্যাস নির্ভর এই সিনেমাটি। চলচ্চিত্রটিতে প্রধান চরিত্র মনোজ কুমার কিভাবে চরম দারিদ্রতা কাটিয়ে একজন ভারতীয় পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) অফিসার হয়েছেন তাই চিত্রায়ণ করা হয়েছে। তবে শুনলে অবাক হবেন যে, ‘টুয়েলফ্থ ফেল’ সিনেমাটি বানানো কোন গল্প নয়। সত্যিকারের বাস্তব জীবনের গল্প থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন পরিচালক।
তো চলুন বাস্তব জীবনের মনোজকুমারের গল্প বলা যাক।
১৯৭৭ সালে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলার বিলগাঁও নামক এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম মনোজকুমার শর্মার। শৈশবেই একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে তাঁর জীবন। মনোজের বাবা কৃষি দফতরের কর্মী ছিলেন। তবু তাঁদের পরিবারে আর্থিক সঙ্কট ছিল বহাল। মনোজ নবম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাস করেছিলেন তৃতীয় বিভাগে। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও, পাশ করতে পারেননি দ্বাদশ শ্রেণি। সেবার হিন্দি সাহিত্য ছাড়া, বাকি সমস্ত বিষয়েই ফেল করেছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের অধ্যবসায় আর জেদের বশে পাশ করেছেন দ্বাদশ।
তবে এখানেই শেষ নয়। দিল্লিতে গিয়েও মনোজকুমার শর্মাকে পড়তে হয়েছে নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখে। নিজের ভরণপোষণ এবং পড়াশোনার খরচ মেটাতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন অদ্ভুত কিছু পেশা বেছে নিতে।
শুধু জীবনের তাগিদেই এক সময় রাস্তায় রাস্তায় টেম্পো চালিয়েছেন। তারপর কাজ করেছেন গ্রন্থাগারে। অর্থের এতই প্রয়োজন ছিল যে একই সঙ্গে দু’টি রোজগারের পথ খুঁজতেন। তাই ধনী ব্যক্তিদের পোষ্য কুকুরকে হাঁটাতে নিয়ে বেরতেন। বিনিময়ে পেতেন পারিশ্রমিক, যা তাঁর পড়ার কাজে লাগত।
কিন্তু এত কিছুর পরেও নিজের মাথায় এক টুকরো ছাদ জোটাতে পারেননি। ঘুমোতেন রাস্তায়। তবে হাল ছাড়েননি কখনও। অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেটুকু রোজগার করতেন তা দিয়েই চলত UPSC-এর প্রস্তুতি। ঠিক এই সময় তাঁর জীবনে আসেন শ্রদ্ধা যোশি। কোচিং-এই পরিচয় তাঁদের। উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা শ্রদ্ধা প্রথমবারেই UPSC পাশ করে যান। এখন তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত IRS আধিকারিক। দিল্লিতে মনোজ যে গ্রন্থাগারে কাজ খুঁজে নিয়েছিলেন সেখানেই তিনি পরিচিত হন ম্যাক্সিম গোর্কি, আব্রাহাম লিংকন, মুক্তিবোধ-সহ বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে। একের পর এক বই গোগ্রাসে শেষ করতেন মনোজ, কাজের ফাঁকে ফাঁকে।
বিধুবিনোদ চোপড়া মাত্র ১৪৭ মিনিটে ধরেছেন এই ‘দ্বাদশ অনুত্তীর্ণ’ সফল মানুষটির জীবনের কাহিনী। মনোজ প্রথমে চেয়েছিলেন SDM হতে। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পর গোয়ালিয়রে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন যে SDM-এর চেয়ে উচ্চ পদ হল DM। এই পদে বসার জন্য UPSC পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। তখনই মনোজ সিদ্ধান্ত নেন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার। শুরু হয় প্রস্তুতি।
IPS মনোজকুমার শর্মা চতুর্থবারের চেষ্টায় UPSC পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি মুম্বইতে পশ্চিম অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।