শিল্পজগতে বেশি নারী না থাকা দুঃখজনক: বিদ্যা বালান
বলিউডের এক সময়ের প্রধান নায়িকা ও সুপারস্টার বিদ্যা বালান আধুনিক নারীবাদের সেই অংশটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন, যেটি নারীদের একটি বাঁধাধরা চেহারায় সীমাবদ্ধ করে তোলে এবং তারা যখন ঐতিহ্যবাহী বিষয়গুলো উদযাপন করতে চান তখন সমালোচনাগুলো করে।
ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক মৈথেলি রাওয়ের বই ‘দ্য মিলেনিনাল ওম্যান ইন বলিউড’ বা ‘বলিউডের সহস্রাব্দের নারী’ নামের বইটির প্রকাশনা উৎসবের রাতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে এই কথাগুলো বলেছেন বিদ্যা বালান।
বিদ্যা প্রশ্ন করেছেন কেন একজন শক্তিশালী নারী, একজন নারীবাদী একজন সঙ্গী থাকতে পারবে না; তিনি ঐতিহ্যবাহী বিষয়গুলো উপভোগ করতে চাইতে পারবেন না এবং এক পা পিছিয়ে আসতে চাইতে পারবেন না? আধুনিক নারীরা কেন বাঁধাধরা হবেন? কেন নারীর ক্ষমতায়ন ও নিজের মতো জীবনযাপন করতে চাওয়ার প্রয়োজনগুলো এত বাধা হবে?’
নিজের ২০২১ সালের ছবি ‘শিরনি’ থেকে দিয়েছেন ভারতের অন্যতম এই অভিনেত্রী ও বলেছেন সেখানে তার বিদ্যা ভিনসেন্ট চরিত্রটি পুরুষদের কোনো ধরনের বুক ধড়পড় বাদেই নিয়েছে।
বিদ্যা বালান বলেন, ‘এই কারণে আমি শিরনিকে এত ভালোবাসি। সে এই পুরুষদের নিয়েছে এমন একটি বশীভূত কায়দায় কিন্তু তার কোনো বুক ধড়ফড় করতে হয়নি বা করাতে হয়নি। কেম আমাদের নারীদের পায়রার খোপে এভাবে রাখার প্রয়োজন? সেখানে আমরা কীভাবে তাদের ক্ষমতাবান দেখতে আশা করি?’
৪৪ বছরের এই সুপারস্টার অভিনেত্রী আরও প্রশ্ন করেছেন, ‘কেন নারীরা তাদের ইচ্ছেমতোই কেবল সে পথে থাকতে পারেন না? তার চেয়ে বরং কেন তারা আমরা আধুনিক নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের চাই সেদিকে ছোটেন?’
অমিত মাশুকর পরিচালিত সেই নাটকীয় ছবিটিতে বিদ্যা বালান হাজির হয়েছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ বন অফিসারের চরিত্রে, যার কাজ ছিল পুরুষ ও বনের প্রাণীদের সংঘাতকে থামানো।
মৈথিলি রাও ভারতের একজন অত্যন্ত বিখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক। তিনি একজন লেখিকা, সাংবাদিক ও সাবেক ইংরেজি ভাষার প্রভাষক। মুম্বাইভিত্তিক এই নারী দ্য হিন্দু, ফ্রন্টলাইন, ফিল্ম কমেন্ট, দ্য সানডে অবজারভার, ফ্রি প্রেস জার্নাল, বম্বে, জি প্রিমিয়ার, জেন্টেলম্যান, ম্যানস ওয়াল্র্ড, দি ইন্ডিপেনডেন্ট ও স্ক্রিনের জন্য অনেক লেখা লিখেছেন। তার এর আগে দুটি বই সিনেমা ইন ইন্ডিয়া ও সাউথ এশিয়ান সিনেমা ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (আইএনএফডিসি) প্রকাশ করেছে এবং লন্ডনভিত্তিক দ্য সাউথ এশিয়ান সিনেমা ফাউন্ডেশন প্রকাশ করেছে। আইজ উইকলিতে তিনি টানা ১০টি বছর ‘ইমেজ অব উমেন’ কলামটি লিখেছেন।
মৈথিলি রাওয়ের বিখ্যাত বইটি হলো ‘স্মিতা পাতিল : ইনক্যানডেসেন্স’ বা ‘স্মিতা পাতিল : তাপোজ্জ্বলতা’ নামের অত্মজীবনী।
তিনি বলেছেন, ‘এভাবে এই চরিত্রগুলোকে জটিলভাবে সিনেমাতে উপস্থাপন করা হয় তাদের আবেদন তৈরি করতে এবং তাতে আমরা আরো যা চাই তা আসে। এই কারণে আমি আপনার জলসা এত পছন্দ করেছি। তিনি নিজেকে একটি উদাহরণ হিসেবে তৈরি করতে চাননি, নিজের জন্য যেটি সেরা তাই কেবল করেছেন।’
উত্তরে বিদ্যা বালান বলেছেন, ‘জলসা আমার কয়েকটি ছবির অন্যতম যেখানে চরিত্রটির লিঙ্গ কী সেটি কোনো বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি। একজন পুরুষও সেই একই কাজগুলো করতে পারতেন যদি তার একটি প্রতিবন্ধীতায় আক্রান্ত শিশু থাকতো যার তাকে প্রয়োজন ও প্রায় গ্রেপ্তার হতে হতো।’
একজন প্রধান সাংবাদিক বিদ্যা বালান ও তার পাচিকা শেফালি শাহের মধ্যে চটুল সম্পকে ঘিরে তৈরি জলসার পরিচালনা করেছেন সুরেশ ত্রিভেনি।
বিদ্যা বালান তাদের সিনেমা ভুবনটি সম্পর্কে বলেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমাদের এই বিরাট শিল্পজগতে বেশি নারী এখনো নেই। যখন আমাদের ৫০-৫০ ভাগ হবে তখন আমাদের বঞ্চনা ও উত্তেজনা নিয়ে আলাপ চলতে পারে। তবে তার আগ পর্যন্ত এটি (নারীর ক্ষমতায়ন) খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ওএফএস/