আগের রাতে শুরু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একুশে, চলছে এখনো
ভাষা আন্দোলনের মহান শহীদদের অমর আত্মদানকে দোয়া ও মোনাজাতে স্মরণ শুরু করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। পরদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে কালো পতাকা উড়িয়ে দিয়েছেন তারা। ছবিসহ লিখেছেন বিস্তারিত ঢাকা প্রকাশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রায়হান মাহবুব
বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার একমাত্র সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও দক্ষিণ-পশ্চিমের সবচেয়ে বড় উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষার দাবীতে অমর শহীদদের আত্মদান এবং অবদানকে গভীরভাবে ভালোভাসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শহীদদের স্মরণ করতে আগের দিন থেকে বর্ণাঢ্য ও বিপুল আয়োজনে নেমেছে। প্রতিটি ছাত্র, ছাত্রী ও অধ্যাপক এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করেছেন। বারবার সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের জীবন বিলিয়ে দেবার তাৎপর্যকে ধারণ করেছেন।
২০ ফেব্রুয়ারি রবিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটেই সবাই প্রস্তুত হয়ে চলে এসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের নেতৃত্বে গভীর অনুরাগ, বেদনা ও ভালোবাসা দিয়ে একুশের এই বছরের মহান শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই। কে ছিলেন না এই শোভাযাত্রায়? ছাত্র, ছাত্রীরা চলে এসেছেন, অধ্যাপক ও অধ্যাপিকারা অংশ নিয়েছেন, সামনের সারিতে ছিলেন প্রবীণ শিক্ষকরা। তার আগেই তারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে অংশ নিয়েছেন বিশেষ মোনাজাতে। এবারের এই উদ্যোগে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে জীবন বিলিয়ে দেওয়া ভাষা সৈনিকদের আখেরাত ও শান্তির জন্য মোনাজাত করা হয়েছে।
রাত ১২টা ১ মিনিটেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে চলে এসেছেন তারা ধীর পায়ে, আকুল বেদনায়। ভিসি স্যার সবার আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হতে ফুলের তোড়া উপহার দিলেন ভাষা শহীদদের পূণ্য স্মৃতিতে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আতাউর রহমান প্রমুখ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে ভিসি স্যারে সঙ্গে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্পণ করেছেন।
এরপর থেকে ধীরে, ধীরে জেগে উঠতে থাকলো পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের আছে সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করা অনেকগুলো ছাত্র সংগঠন রয়েছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা অনেকগুলো স্বেচ্ছাসেবী, সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে। বিভাগ, অনুষদ আছে অনেক। প্রতিটিই প্রতিষ্ঠানিকভাবে ফুলের মালা দিতে, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষকদের নিয়ে। এমনকি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাও তাদের অফিসার-ইন-চার্জের নেতৃত্বে এক মিনিট নিরবতা পালন করে অন্যদের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে ভাষা সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তারা সবাই দেশের প্রতিটি ভাষা সৈনিকদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে দেয়া করেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ভাষা সৈনিকদের বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। সারা রাত ধরে চলা শ্রদ্ধা নিবেদন দফায়, দফায়; থেমে, থেমে সারা দিনভর চলেছে। আশপাশের সংগঠন ও ব্যক্তিমানুষরা-মা, বাবা, ছেলেমেয়েকে নিয়ে শহীদ দিবস, ভাষা শহীদ, বাংলা ভাষা, বাংলাদেশের গুরুত্ব জানাতে ও বোঝাতে শহীদ মিনারে এসেছেন। অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আশপাশে ছিলেন।
২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় শুরু হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ আরেকটি উদ্যোগ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর অনন্য কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, ভিসি স্যারের বাসভবন, শিক্ষকদের বাসভবন ও কোয়ার্টারগুলো, প্রতিটি হলের ছাদ, অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর ছাদ-সবখানেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাগুলোকে অর্ধনমিত রাখা শুরু হলো। কালো পতাকা আরেক কোনায় টাঙানো হলো বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মনে করে।
শুরুটি করেছিলেন আমাদের ভিসি স্যার। তিনি প্রশাসন ভবনের চত্বরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের নেতৃত্ব দিয়ে অর্ধনমিত করেছেন। কালো পতাকাকে উড়িয়ে দিয়েছেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের আত্মদানে। এরপর তিনি ধীর পায়ে সবাইকে নিয়ে চলে গিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ম্যুরালে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ স্মৃতি ভাস্কর্যে গভীর শ্রদ্ধা জানালেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য পুরোটা জীবন সংগ্রাম এবং অনন্য অবদানের জন্য।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আতাউর রহমান প্রমুখ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে ভিসি স্যারে সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন।
ওএস।