এইচএসসি পরীক্ষায় শহীদদের ফলাফল: সাফল্যের ছায়ায় স্বজনদের আহাজারি
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছরের ৩০ জুন শুরু হয়েছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ঠিক একই সময়ে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হয় তীব্র ছাত্র আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কয়েক দিনের মধ্যেই স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। অনেক পরীক্ষার্থী এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, অনেকে আহতও হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল, যেখানে শহীদ হওয়া অনেক পরীক্ষার্থীর চমকপ্রদ ফলাফল সামনে এসেছে। তাদের স্বজন ও সহপাঠীদের আনন্দের বদলে বেদনাকাতর করে তুলেছে এই ফলাফল।
সবুজ মিয়ার ফলাফলে শেরপুরে মাতম: শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার মেধাবী ছাত্র সবুজ মিয়া ছিলেন শ্রীবরদী সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এবং ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। সবুজের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু তার এমন সাফল্য এখন মা-বাবার বুকে গভীর শোকের ভার চাপিয়ে দিয়েছে। সবুজের মা শমেজা খাতুন ফলাফল হাতে নিয়ে আহাজারি করে বলেন, “ছেলে বেঁচে থাকলে খুশিতে আমার কাছে আসত, সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতো। কিন্তু আজ সব অন্ধকার।”
আফনানের ফল দেখে লক্ষ্মীপুরে কান্নার রোল: লক্ষ্মীপুরের ভিক্টোরিয়া কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ আল আফনানও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হন। আফনান এইচএসসি পরীক্ষায় চারটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং ফলাফলে জিপিএ ৪.১৭ পেয়েছেন। তার মা নাছিমা আক্তার বলেন, “ছেলের এমন ফলাফল পেয়েও আমি কাকে নিয়ে উদযাপন করব?” আফনানের সহপাঠী ও শিক্ষকরা তার এমন ফলাফলে শোকাতুর।
জিপিএ ৪.২৫ পেয়েও নেই নাফিসা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থানা রোডে ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন নাফিসা আক্তার মারওয়া। এইচএসসি পরীক্ষায় তার ফলাফল জিপিএ ৪.২৫ এসেছে। তার চা দোকানি বাবা আবুল হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “মেয়ের লেখাপড়ার জন্য সব করেছি। আজ তার ফল প্রকাশ হলো, কিন্তু সে নেই।”
যাত্রাবাড়ীতে শহীদ পান্থের ফল: ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন মাহাদী হাসান পান্থ। এইচএসসি পরীক্ষায় পান্থ জিপিএ ৩.১৭ পেয়ে পাস করেছেন। তার ফলাফলেও আনন্দের বদলে স্বজনদের মনে নেমে এসেছে শোক।
শাহরিয়ারের সাফল্য বেদনাদায়ক: ময়মনসিংহের শাহরিয়ার বিন মতিন মিরপুরে আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ ৪.৮৩ পেয়েছেন। কিন্তু তার এমন সাফল্যে আনন্দের বদলে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার স্বজনেরা।
রায়হানের পাসের খবরেও বুকে মোচড়: নোয়াখালীর রায়হান গুলশান কমার্স কলেজের ছাত্র ছিলেন। বাড্ডায় আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। এইচএসসিতে ২.৯২ জিপিএ পেয়েও তার বাবা-মা আজ বেদনায় ভারাক্রান্ত। রায়হানের মা আমেনা খাতুন দৃঢ়কণ্ঠে ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন।
এই আন্দোলনে নিহত ছাত্রদের অনেকেই ভালো ফল করেছেন। তাদের সাফল্য আজ স্বজনদের বুকে শোকের ভার হয়ে আছে। অনেক আহত পরীক্ষার্থীও পাস করেছেন, কিন্তু জীবনের অনিশ্চয়তা তাদেরকে বিষণ্ন করে রেখেছে।