শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
হল ছাড়বেন না শিক্ষার্থীরা, চান উপাচার্যের পদত্যাগ
উপাচার্যের বেঁধে দেওয়া সময়ে হল ছাড়েননি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে জড়ো হয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেলা ১২টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। সকাল থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থীকে হল ছাড়তে দেখা যায়নি।
এসময় শিক্ষার্থীদের 'ক্যাম্পাস কারো বাপের না, হল আমরা ছাড়ব না, এক দুই তিন চার, ফরিদ তুই গদি ছাড়, আমাদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, হল আমরা ছাড়ব না' ইত্যাদি স্লোগান দিতে শুনা যায়।
এর আগে গতকাল রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাতে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। এসময় মূল ফটকের বাইরে শ্লোগান দিয়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তবে কিছু সময় পর প্রশাসন সরে গেলে ফের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্লোগান দিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দ্বিতীয় ছাত্রী হলের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন।
এবার তিন দফা দাবির সঙ্গে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও যুক্ত করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের আন্দোলনে আকাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক সজীবুর রহমান, সাব্বির হোসেন, সুমন সরকার, তারেক হালিমী ও তাদের অনুসারীরা।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি চার দফায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে।
আন্দোলনের শুরুতে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিগুলোর মধ্যে ছিল- দায়িত্বহীন প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা নির্মূল করে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রভোস্ট কমিটি নিয়োগ দেওয়া।
সন্ধ্যায় সংঘর্ষের পর রাতে আন্দোলনকারীরা ফের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। সেই সঙ্গে 'আরও উদ্যোম ও সাহসিকতার সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন' বলেও ঘোষণা দেন।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের ভেতরে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রেখে বাইরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিলে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করে বাসভবনে নিয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে উদ্ধারে পুলিশকে বাধা দিলে পুলিশ রাবার ব্যুলেট, টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ অর্ধশত আহত হন।
আহতদের উদ্ধার করে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও সিলেটের মাউন্ট এডোড়া হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সঙ্গে সোমবার ১২টার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য।
সংঘর্ষের পর রাতে সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে সাড়ে ৮টার দিকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
এসময় তিনি বলেন, 'দেশে এমন ঘটনা বিরল। শিক্ষার্থীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এমন আচরণ করবে এটা আমি আশা করতে পারিনি। তারা শিক্ষকদের উপর আক্রমণ করবে এটা চিন্তাই করিনি। ইতিমধ্যে আমরা এটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম। এরই মাঝে কেউ একজন গুলি করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তাতেই সংঘর্ষ তৈরি হয়।'
তিনি বলেন, 'বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় আমরা দুপুরে সিন্ডিকেট সদস্যদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্বাবিদ্যালয়ের সবরকম ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। কারণ ইতিমধ্যে দেশে ১৫ শতাংশের উপর চলে গেছে করোনা।'
এ সময়ে অফিসিয়াল বিভিন্ন কার্যক্রম কিছুটা চলমান থাকবে বলেও জানান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
তবে শিক্ষার্থীরা সোমবার হল ছাড়বেন না বলে জানান। তারা বলেন, 'সকল দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা হলেই অবস্থান করব এবং আন্দোলন চালিয়ে যাব।'
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, 'কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ অতর্কিত আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়।'
শিক্ষার্থীরা বলেন, উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ওয়াজেদ আলি ভবনের ভেতর ঢুকেন। তখন নিরাপত্তাকর্মীরা সকল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাই বাহিরে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে গেলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে রাবার ব্যুলেট, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
তবে পুলিশের দাবি, উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীরা চড়াও হন। তাই তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে সংঘর্ষ তৈরি হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয়নি। উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীরা পুলিশের উপর চড়াও হন এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তখন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
টিটি/