‘শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা জরুরি’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা জরুরি। কারণ আমরা মানুষ হব। মানুষ হলে জন্মালেই মানুষ হয় না। মানুষ হয়ে জন্মানোর পর মানুষ হতে হলে তার মানবিক গুণসহ আরো অনেক গুণ অর্জন করতে হয়। সেজন্যই সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন দরকার। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বিকাশ প্রয়োজন। তাই খেলাধুলা খুব জরুরি। খেলাধুলা করলে শরীর-মন যেমন ভালো থাকে, তেমনি খেলাধুলার মাঠে আমরা অনেকগুলো গুণের চর্চা করতে পারি।
তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমাদের মনের বিকাশ, আত্মার বিকাশ ঘটে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যারা আছে তারাই পারবে শুধু সু-নাগরিক নয়, বিশ্ব নাগরিক হতে। সেজন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে আমাদেরকে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন বা সংস্কার নয়, একটা রূপান্তর ঘটাতে হবে। কারণ আমাদের সামনে অনেকগুলো লক্ষ্য রয়েছে। ২০৪১ সালে উন্নত, সমৃদ্ধ, সুখী সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য। ২০৩০ সালের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন। আজকে স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ, মধ্যম আয়ের দেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং স্বপ্ন দেখি স্মার্ট বাংলাদেশের।
রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের পিয়ার আলী ডিগ্রি কলেজের আয়োজনে কলেজ মাঠে বার্ষিক ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
দীপু মনি বলেন, প্রতিটি মানুষের মাথার উপরে ছাদ অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষা সর্বোপরি মৌলিক পাঁচটি শিক্ষা শেখ হাসিনা সরকার বাস্তবায়ন করেছে। ডিজিটাল দেশ, পদ্মা সেতুর দেশ স্মার্ট বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যে পারে, দেশের মানুষ যে পারে পদ্মা সেতু তার প্রমাণ। নাগরিক সেবা মানুষের দোরগোড়ায় নয়, শেখ হাসিনা হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক হবে স্মার্ট, অর্থনীতি হবে স্মার্ট, সমাজ হবে স্মার্ট এবং সরকার হবে স্মার্ট। চারটি উপাদানের কেন্দ্রবিন্দু হলো স্মার্ট নাগরিক। স্মার্ট নাগরিক হবার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার স্মার্ট শিক্ষা। সেই স্মার্ট শিক্ষার জন্যই আমরা শিক্ষায় রূপান্তর নিয়ে আসছি। বঙ্গবন্ধুকন্যার স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে। তাই আমাদের সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে। স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের শিখন পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে। জীবনে আমরা কত সূত্র, কত ফর্মুলা মুখস্থ করলাম কোথায় এর প্রয়োগ হয় তা বুঝতে পারিনি। নতুন শিক্ষা পদ্ধতি শিখন পদ্ধতিকে বদলে দিয়েছে। আমরা করে করে শিখব। এবার শিক্ষার্থীরা করে করে শিখবে। আত্মস্থ করবে মুখস্ত করা দরকার নাই। শিখন পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। ওদের মূল্যবোধের চর্চা পরিবেশের শিখন এসব বিষয়ে শিক্ষার মূল্যায়নের অংশ হবে। ২৬টি বই একসঙ্গে এক বছরে নতুন করে তৈরি করা চারটি খানি কথা নয়।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারার কারণে তারা এখন বইয়ের উপর সওয়ার হচ্ছে। নবম-দশম শ্রেণির বই ২০১৩ সালের। ভুল ধরা পড়েছে আমরা সংশোধন করে দিয়েছি। কিন্তু একটা ভুল এতদিন কারও চোখে ধরা পড়েনি। আরও আগেই ধরা পড়া উচিত ছিল। পাঠ্য বইয়ে বানর থেকে মানুষ হওয়ার কথা বলা নেই। বরং বলা আছে মানুষ বানর থেকে হয়নি। বানর থেকে মানুষ হয়েছে এ কথা ঠিক নয়, তিনবার বলা আছে। আমাদের শিক্ষাক্রম পদ্ধতিতে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা বারবার প্রশ্ন করবে। যত প্রশ্ন করবে ততই শিখবে।
তিনি আরও বলেন, এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করে কোনো নারী-পুরুষ যদি বারবার প্রশ্ন করা শিখে যায় তাহলে তাদের আগ্রাসন ভেস্তে যাবে। সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা এখন আনন্দে শিখছে। স্কুল ছুটি হলে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে দিগ্বিদিক ছুটে যেত। এখন ছুটি হলে শিক্ষার্থীরা বলে আরও আধা ঘণ্টা আমরা কি হাতের কাজটা সারতে পারি না স্যার? এই মূল্যবোধ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠবে।
পিয়ার আলী ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন ভূঁইয়ার পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ।
এসজি