টিকা দেওয়া শেষ হবে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে: শিক্ষামন্ত্রী
যেসব শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত এক ডোজ টিকা নেননি তারা আপাতত বিদ্যালয়ে যেতে পারবেন না। তারা অনলাইনে ও টিভিতে ক্লাস করবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সারাদেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সোমবার (১০জানুয়ারি) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে রবিবার রাতে কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি কমিটির সঙ্গে বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো জানাতে মন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন।
শিক্ষার্থীরা নিজেদের পরিচয়পত্র দেখালেই টিকা দিতে পারবেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের তালিকা টিকা কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, সারাদেশে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত শতকরা ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছেন।
প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে ৪৪ লাখ শিক্ষার্থীকে। দ্বিতীয় ডোজ টিকা থেকে পেয়েছেন ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন শিক্ষার্থী। ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থী এখনও প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার বাকি।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারি ৩৯৭টি উপজেলায়, ১৭ জানুয়ারি তিনটি উপজেলায়, ২০ জানুয়ারি ৫৬টি উপজেলায়, ২২ জানুয়ারি ১৫টি উপজেলায়, ২৫ জানুয়ারি ৩৫টি ও ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ১১টি উপজেলায় শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া সম্পন্ন হবে।
এসময় দীপু মনি আরও জানান, আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে। শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনও শতভাগ টিকা নেননি। আমরা এই তিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগামীকাল বসব। শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত স্টিক আনার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, 'আমরা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছিলাম তখনকার চেয়ে এখন পরিস্থিতি অনেকটা ভালো। তখন আমাদের কোনো শিক্ষার্থী টিকা নেননি। এখন শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো প্রায় সবাই আর উচ্চ মাধ্যমিক মাধ্যমিকের একটা বিরাট অংশ টিকার আওতায় চলে এসেছে। আমরা আশা করছি এই মাসের মধ্যে সবাই টিকার আওতায় চলে আসবে। অন্তত এক ডোজ সবার নেওয়া হয়ে যাবে।'
এই পরিস্থিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, 'শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমরা বন্ধ করব না। আমরা চেষ্টা করব টিকা সম্পন্ন করা, স্বাস্থ্যবিধি কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা, মনিটরিং বাড়ানো। আমরা আশা করছি, যেভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত পরিসরে চলছিল সেভাবে চলবে।'
'আমরা নিয়মিত কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করব এবং পরিস্থিতি মনিটরিং করব। আমরা সাতদিন পরে আবারও বসব এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করব।'
দীপু মনি বলেন, 'যদি আমাদের কাছে মনে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া দরকার আমরা করব। তবে আমরা আশা করছি, টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যাপক হারে হয়ে গেলে বিদ্যালয় বন্ধ করতে হবে না।'
তিনি বলেন, অমিক্রনের যে ট্রেন্ড, তাতে বাসায় একজন আক্রান্ত হলে পুরো পরিবারের সকলেই আক্রান্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে বাসায় রাখলেও তারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছেই।
বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যতক্ষণ তারা থাকবে তাদের সুরক্ষিত রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করব।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মনিটরিং চলছে। সেটি আরও জোরদার করা হবে। আগে শুধু বিদ্যালয়গুলোকে মনিটরিং এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এর আওতায় নিয়ে আসা হবে।
তিনি জানান, 'মাদরাসাগুলো বিশেষ করে কওমি মাদরাসাগুলোতে মনিটরিং করা কঠিন। যেহেতু তারা আমাদের কাছে সরাসরি নিবন্ধিত নয়, আমাদের তত্ত্বাবধান সেখানে নেই, সে কারণে তাদের সরাসরি মনিটরিং করা, সেটা একটু শক্ত। আমরা আশা করছি যে, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এটি কীভাবে মনিটরিং করা যায় সে বিষয়ে দুয়েকদিনের মধ্যে আমরা ব্যবস্থা নেব।'
এনএইচবি/টিটি/