পৃথিবীকে দীর্ঘ মেয়াদে বাসযোগ্য করতে শর্ত টেকসই উন্নয়ন: জবি উপাচার্য
পৃথিবীকে দীর্ঘ মেয়াদে বাসযোগ্য করতে শর্ত টেকসই উন্নয়ন বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক প্রথমবারের মতো ‘টেকসই উন্নয়নে জৈবপ্রযুক্তি’ শীর্ষক জাতীয় পর্যায়ের সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী আয়োজিত এই সেমিনারের মূল লক্ষ্য ছিল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরা এবং এক্ষেত্রে তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা।
সেমিনারে দেশের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও দুটি গবেষণা সংস্থা থেকে প্রায় ৩০০ জন গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক।
সেমিনারে অতিথিদের অংশগ্রহণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার পাশাপাশি জবি উপাচার্য বলেন, ‘পৃথিবীকে দীর্ঘ মেয়াদে বাসযোগ্য করে রাখার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন। এজন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সেমিনারটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. মেহেদী হাসান খান। তিনি বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থান এবং কিভাবে বায়োটেকনোলজিস্টদেরকে জাতীয় উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যারা নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তারা অনেকেই বায়োটেকনোলজির উপরে কাজ করেছেন। বর্তমানে বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমাদের বায়োটেকনোলজির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা যদি এক কেজি হরমোনও তৈরি করতে পারি তাহলে অনেক কাজে আসবে।’
এ ছাড়াও সেমিনারের প্রধান আকর্ষণ ছিল 'কি-নোট সেশন' যেখানে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি প্রফেসর ড. হাসিনা খান। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং এবং টেকসই উন্নয়নে পাট কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন।
ড. হাসিনা খান বলেন, ‘আধুনিক জিনোমিক্স যুগের জিনোমিক্স ভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে প্রতিকূল পরিবেশ এবং রোগ প্রতিরোধী উন্নত পাটের জাত দেশের টেকসই উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে। পাট শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের সাধনার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি ফসল নয় বরং এই সোনালী ফসল আমাদের জাতীয়তাকে প্রতিনিধিত্ব করে।’
পরবর্তীতে টেকনিক্যাল সেশনে বক্তব্য রাখেন আইসিডিডিআরবি এর বিশিষ্ট গবেষক এবং ভাইরোলজি ল্যাব এন্ড জিনোমিক সেন্টারের প্রধান মুস্তাফিজুর রহমান এবং পিএইচডি ও ইউজিসি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. কাজী দিদারুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান।
ড. শাহেদুর রহমানের মতে, ‘জীব প্রযুক্তি দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর পাশাপাশি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বদ্ধপরিকর।’
অধ্যাপক ড. মান্নান বলেন, ‘বায়োটেকনলজির একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর হলো ব্লু ইকোনমি। এটি বাংলাদেশের নতুন শিল্পক্ষেত্রের দ্বার উন্মোচন করবে’।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ওপেন বুক এক্সামের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ড. দিলারা ইসলাম শরীফ বলেন, ‘দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে টেকসই উন্নয়নের ব্যাপক অর্থবোধক ও বিস্তৃত গুরুত্ব রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষমাত্রা অর্জনে বায়োটেকনোলজির যে বিপুল সম্ভাবনা আছে তা আমাদের শিক্ষার্থীদের অবগত করা ও উৎসাহিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। একই সাথে বলতে চাই, এই সেমিনার শিক্ষার্থী, গবেষক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার পথকে আরো সুদৃঢ় করবে।’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কুইজ, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও প্রাইজমানি বিতরণ করা হয়।
এসআইএইচ