রমজানে সরবরাহ ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মজুত নিশ্চিত করা হবে। সরকার এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মানুষ যাতে প্রয়োজনীয় পণ্য ন্যায্য মূল্যে পেতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। সরবরাহ, মজুত ও মূল্য বিষয়ে একটি কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করে সার্বিক সহায়তা নেবে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেউ বেশি দামে কেউ চিনি বিক্রি করলে প্রয়োজনে কারাগারে পাঠানো হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
রবিবার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত বাণিজ্য সহায়ক পরামর্শক কমিটির অষ্টম সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভাশেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চিনির সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই চিনির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, তখন আর কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া, চিনির উপর আরোপিত শুল্ক কমিয়ে মূল্য কমানোর এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসন্ন রমজান মাসে চিনিসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ন্যায়সংগত মূল্য নিশ্চিত করা হবে।
গত নভেম্বরে চিনির দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ফেরেশতা না। দাম কত হওয়া উচিত সেটা নির্ধারণ করে দেই। তারপরও দেখি কোথাও কোথাও চিনি নিয়ে সুবিধা নিয়েছে। তবে আমাদের কাগজপত্র বলে প্রচুর পরিমাণ চিনি রয়েছে, পাইপলাইনেও আছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ভোক্তা অধিকার বিভিন্ন জায়গায় হানা দিচ্ছে, জরিমানা করছে। এখন আমরা চিন্তা করছি এর বাইরে যদি প্রয়োজন হয় জেলের ব্যবস্থা করে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। চিনির দাম একটু কমে আসবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বলেছি, চিনির উপর ডিউটি একটু কমানো হলে দাম কমে যাবে। আমাদের কাছে যথেষ্ট চিনি আছে। অন্য বছরের তুলনায় প্রচুর চিনি রয়েছে। আর আমদানি তো ওপেন আছে। বাজারে যা মজুত আছে, সেটা কোনো অবস্থায় দেশের জন্য বিপজ্জনক নয়। আমরা শুধু সাধারণ মানুষ যাতে কম দামে চিনি পায়, সে ব্যবস্থা করছি। ১০০টি এলসি বন্ধ করা হয়েছে অতি মূল্যের জন্য।’
তবে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তাদের এলসি খোলা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এলসি খোলা সংকট, এর মধ্যে সামনে রমজান মোকাবিলায় কী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রমজান মাসকে সামনে রেখে আজকে রাতারাতি সব কিছু বদলে দেওয়া যাবে না। রমজান মাসসহ সারা বছর দেশের মানুষ যাতে প্রয়োজনীয় পণ্য ন্যায্য মূল্যে পেতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সয়াবিনের পাশাপাশি ভোজ্য তেল সানফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা আমদানি শুল্ক কমিয়ে আমদানি বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের রপ্তানি বাণিজ্য এগিয়ে যাচ্ছে। পণ্য ও সেবা খাত মিলে চলতি বছরে ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানির চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে আশা করা যায় আমাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবদিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতি সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। অপপ্রচারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সভাটি পরিচালনা করেন বাণিজ্য মন্ত্রণারয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বাণিজ্য সহায়ক পরামর্শক কমিটির সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ হাসান ইমাম খান এমপি, ওনার্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন, বিজিএমইর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ঢাকা চেম্বার সভাপতি রিজওয়ান রহমান, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত মাসে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চিনি ও তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০২ ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে সেই দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে না।
জেডএ/এসএন