কীভাবে এলো বার্জার?
বার্জারের শুরুর গল্পটি অত্যন্ত চমকপ্রদ। ১৭৭০ সালে, আজ থেকে ২শ ৫২ বছর আগে, ভ্যানগগের জন্মশহর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট থেকে লুইস স্টাইজেনবাজার নামের এক ভদ্রলোক লন্ডনে চলে এলেন তার নিজের বানানো গাঢ় নীল-‘পার্শিয়ান ব্রু’ রঙটি বিক্রি করবেন বলে। নিজের ফর্মুলাতে বানানো রঙটি নিয়ে খুব উত্তেজিত হয়ে ভাগ্যের খোঁজে চলে এলেন ব্রিটিশ সম্রাজ্যের রাজধানীতে। উপনিবেশিক ইংরেজরা তখন দেশে, দেশে দখল কায়েম করছে। তবে পরে তিনি নিজের নাম ছোট করে রাখলেন ‘লুইস বার্জার’। তার নামেই চালু হলো তার কম্পানির ‘বার্জার পেইন্টস’। ১শ বছর পর আরো অনেক বড় হলো।
১৮৭০ সালে তারা মোট ১৯ ধরণের ভিন্ন, ভিন্ন রঙ বাজারে বিক্রি করতেন। বার্জারের মৃত্যুর পর তার ছেলেরা ব্যবসার হাল ধরেছেন। তবে বার্জারের ভাগ্যও বদলেছে। ১৯০০ সালের দিকে আমেরিকান একটি কম্পানি ‘শেরউইন-উইলিয়ামস’ প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলো। ১৯২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর একটি ছোট্ট কম্পানি হয়ে ভারতে এলো ‘বার্জার’। তখন তাকে নিয়ে এসেছিলেন ‘হেডফিল্ড’ নামের একজন সাহেব। তিনি তার প্রতিষ্ঠানটির নাম রেখেছিলেন “হেডফিল্ড’স (ইন্ডিয়া) লিমিটেড”। সেই যে তার হাত ধরে ভারতের বাজারে বার্জারের রঙের শুরু হলো কলকাতা শহরে, তারপর ধীরে, ধীরে ব্যবসা বেড়েছে। তবে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে, ভারতবর্ষ থেকে চলে যাবার দিনগুলোর সময়ে ব্রিটিশ পেইন্টস অধিগ্রহণ করলো তার কম্পানিটি। তবে ভারত স্বাধীনের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্রিটিশ পেইন্টসকে জাতীয়করণ করে নিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি বেড়েছে। ১৯৫১ সালে দিল্লী ও বম্বেতে দুটি বিক্রয় অফিস চালু হলো তাদের। আসামের গৌহাটিতে একটি ডিপো চালু করলেন তারা তখন।
বার্জারের ছেলেদের রং বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কয়েক পুরুষের ‘বাজার নিকলসন লিমিটেড’ ভারতবর্ষের উঠতি বাজারে চলে এলো। ‘ব্রিটিশ পেইন্টস ইন্ডিয়া’ কিনে নিলেন তারা সরকারের কাছ থেকে। এভাবে লুইস বার্জারের উৎরাধিকার ভারতের রঙের ভুবনে এলো। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সব পুরোনো রঙ উৎপাদনকারীদের অন্যতম প্রতিষ্ঠান।
নামটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিপুল বিজ্ঞাপনের জন্য খুব পরিচিত। অত্যন্ত নামকরা কম্পানিটির পুরো নাম ‘বাজার পেইন্টস লিমিটেড’। ব্রিটিশদের রাজধানী ৪শ বছরের পুরোনো কলকাতা শহরে প্রতিষ্ঠানটির ভারতীয় সদর দপ্তর। ভারতে তাদের ১৬টি উৎপাদন ইউনিট ছড়িয়ে আছে। তাছাড়াও নেপালে আছে দুটি কারখানা, পোল্যান্ড ও রাশিয়াতে আছে একটি করে কারখানা। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া ও জম্মু-কাশ্মীরের জম্মু শহরে কারখানা আছে। মোট পাঁচটি দেশে এখন প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা করছে। ভারত, বাংলাদেশ, রাশিয়া, পোল্যান্ড ও নেপাল।
বাংলাদেশে বাজারের শুরু ১৯৭০ সালে। প্রধান কার্যালয় ঢাকায়। এই দেশে বিস্তৃত তারা বিজ্ঞাপন ও দোকানদারদের মাধ্যমে। এছাড়াও আছে ১৪টি বিক্রয় ডিপো, ১৬টি এক্সপেরিয়েন্স জোন। বাংলাদেশে তাদের ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি কারখানা আছে। বাজার বাংলাদেশে মোট কর্মী আছেন হাজারের বেশি। নিজস্ব ডিলার আছেন ৩ হাজারের অধিক।
এখন নিকলসনদের বার্জার প্রতিষ্ঠানটির মালিক হলেন কুলদীপ সিং ধীংরা। তিনি কম্পানিটি কিনে নিয়েছেন। তবে আগের নামই বহাল রেখেছেন বিজ্ঞাপন কৌশলে। তিনি বাজার পেইন্টসের চেয়ারম্যান ও তার ভাই গুরবচন সিং ধীংরা ভাইস চেয়ারম্যান। ভারতের সবচেয়ে ধনীদের অন্যতম এই শিখ ভাইয়েরা ১৯৯১ সালে বার্জার কিনেছেন।
রঙ শিল্পের অন্যতম বড় বাজার পেইন্টস রং এবং রং সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর ক্ষেত্রেও গুণগতমান এবং বৈচিত্র্যে বিশ্বাসী। মানসম্পন্ন সেবা প্রদান করে চলেছেন বলেও বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রং কম্পানি হয়েছেন। সর্বোচ্চ গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন ও সেরা মানের গ্রাহক সেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতিশীল। বাংলাদেশে তাদের কর্তাব্যক্তি রূপালি চৌধুরী। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রধান হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। বাজারের ইতিহাসে প্রথম নারী সিইও।
ওএস।