বৃহস্পতিবারের বাজারদর
গরু-মুরগির মাংসের বাজার চড়া, সবজিও ঊর্ধ্বমুখী
গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজের ঝাঁজ না কাটতেই গরুর মাংস ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকা কেজি ও মুরগির মাংস কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় ঠেকেছে। একেবারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে মাংসের বাজার। টমেটো, কপি সবজির বাজারও চড়া। তবে স্থিতিশীল মাছ, ভোজ্যতেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিম, চাল ও ডালের দাম।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
লাগামহীন গরু-মুরগি মাংস
গত সপ্তাহে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকা বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার দাম বেড়ে ৬৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতো বেশি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কারওয়ান বাজারের মেসার্স খোকন এন্টারপ্রাইজের দেলোয়ার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘কেন বাড়ছে তা সরকারকে জিজ্ঞাসা করেন। আমরাও চাই না দাম বাড়ুক। কিন্তু বেশি দামে কেনা, তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দুই সপ্তাহ থেকে ৬২০ টাকা লিখা থাকলেও ৬৫০ টাকা টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে গরুর মাংস। এর কমে বিক্রি করা সম্ভব নয়।’
এদিকে গরুর মতো মুরগির বাজারও লাগামহীন হয়ে পড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানি কর্ক ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার তা ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে জননী মুরগির আড়তের আব্দুল ওহাব ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘দেশি মুরগির দাম বেড়ে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি, ব্রয়লার ১৫০ থেকে ১৬০ কেজি ও পাকিস্তানি কর্ক ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ আগের সপ্তাহে এই কর্ক ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ছে বলে জানান তিনি।’ তবে আগের মতোই খাসির মাংসের দাম। জনপ্রিয় খাসির মাংসের দোকানের নুরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আগের মতোই এ সপ্তাহে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ডিমের দামও আগের সপ্তাহের মতোই ডজন সর্বোচ্চ ১১০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থিতিশীল মাছের বাজার
আগের সপ্তাহের মতোই মাছের বাজার স্থিতিশীল বলে বিক্রেতারা জানান। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী এনামুল বলেন,‘আকারভেদে রুই ও কাতলা ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি আকারভেদে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, চাষের শিং মাছ ৩০০, দেশি শিং ৬০০-৭০০ টাকা, চাষের কই ৩০০ টাকা ও দেশি ৫০০ টাকা, দেশি শোল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, ট্যাংরা ৪০০ থেকে ৭০০, আইড় আকারভেদে ৪০০ থেকে ১২০০, ইলিশ মাছও ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
আগের দামে চাল
গত সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক টাকা বাড়লেও এ সপ্তাহে কোনো চালের দাম বাড়েনি। জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মেসার্স কুমিল্লা রাইস এজেন্সির মো. আবুল কাসেম ঢাকাপ্রকাশকে জানান, ‘এ সপ্তাহে কোনো চালের দাম বাড়েনি, কমেনিও। মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৩ টাকা, বিআর-২৮ কেজি ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা, পারিজা ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’ একই কথা জানান চাটখিল রাইস এজেন্সির বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগের দামেই মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৪৮ থেকে ৪৯, নাজির চাল ৬৯ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে একই চাল কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পাইকারির চেয়ে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করছের খুচরা ব্যবসায়ীরা।
স্থিতিশীল ডাল-চিনি-আটা-তেল-পেঁয়াজের দাম
আগের মতো বিক্রি হচ্ছে তেল, আটা, চিনি, ছোলাসহ অন্যান্য জিনিস। এ সপ্তাহে বাড়েনি এসব নিত্যপণ্যের দাম। ইউসুফ জেনারেল স্টোরের সুজন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘চিনি ৭৫ টাকা কেজি, দুই কেজি আটা ৮০ টাকা, ডাল ৯০ থেকে ১১০, ছোলা ৭০ টাকা কেজি, ভোজ্যতেল ২ লিটার ৩৩০ টাকা ৫ লিটার ৭৭০ টাকাসহ বিভিন্ন মসলা আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের নিউ সোনারগাঁও জেনারেল স্টোরের রিপন বলেন, ‘বর্তমানে পাঁচ লিটার ভোজ্যতেল ৭৫০ থেকে ৭৮৫ টাকা, ২ লিটার ৩২০ টাকা, এক লিটার ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা পাল্লা বা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবারও সেই দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। মতলব বাণিজ্যালয়ের করিম বলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে। আজও একই দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বাড়েনি। আগের মতোই দেশি রসুন কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, চায়না রসুন ৯০ থেকে ১২০ টাকা ও দেশি আদা ৯০ টাকা, চায়না আদা ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
চড়া সবজির বাজার
আগের সপ্তাহের মতোই আলু পাইকারি বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পাল্লা বা ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা বাজারে তা ১৭ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। টমেটোরও একই দশা। পাইকারিতে ১৮ থেকে ২৫ টাকা কেজি হলেও খুচরা পর্যায়ে তা ২৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। মৌসুম শেষ হওয়ায় টমেটো, কপির দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি টমেটো বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ থেকে ৫০, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া শসা ৩০ টাকা, মরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাঁজর ২০ টাকা, মুলা ২০ টাকা কেজি, শাকের আঁটি ৮ থেকে ১০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
জেডএ/আরএ