প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যা আছে
বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকরা এ সুবিধা পাবে। আগামী ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা জানা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এই পেনশন স্কিম হচ্ছে এক প্রকারের বিনিয়োগ। কাজেই এর কোনো নিম্ন ও উর্ধ্বসীমা নেই। যে যেভাবে বিনিয়োগ করবে সে সেভাবে পরিমান পাবে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো বলা যায়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে পেনশনের ব্যাপারে। তার আলোকেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজেই আইন ও বিধিপ্রণয়ন করেই সব কিছু ঠিক করা হবে।
প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার কিছু উল্লেখযোগ্য দিক-
১৮-৫০ বছর বয়সী সকল কর্মক্ষম নাগরিক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।
সরকারি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের আপাতত নতুন জাতীয় পেনশন ব্যবস্থার বাহিরে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সরকার যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবে।
প্রাথমিক এ পদ্ধতি স্বেচ্ছাধীন থাকবে যা পরবর্তীতে বাধ্যতামূলক করা হবে।
ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।
প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পৃথক পেনশন হিসাব থাকবে। ফলে চাকুরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। এ পেনশন পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হবে। মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসী কর্মীদের সুবিধার্থে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা জমা দিতে পারবে। সুবিধাভোগী বছরে ন্যূনতম বাৎসরিক জমা নিশ্চিত করবে। অন্যথায় তার হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত হবে এবং পরবর্তীতে বিলম্ব ফিস বকেয়া চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে হিসাব সচল করা হবে।
সুবিধাভোগী আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে চাঁদা হিসেবে বর্ধিত অর্থ (সর্বনিম্ন ধাপের অতিরিক্ত যেকোন অংক) জমা করতে পারবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত বয়স সীমা (৬০ বছর) পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জিভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন প্রদেয় হবে।
পেনশনারগণ আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
নিবন্ধিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে জমাকারীর নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের (মূল জমাকারীর বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।
পেনশন স্কীমে জমাকৃত অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের প্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০% ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা প্রদান করার পূর্বে নিবন্ধিত চাঁদা প্রদানকারী মৃত্যৃবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
এ ব্যবস্থা স্থানান্তরযোগ্য ও সহজগম্য, অর্থাৎ কর্মী চাকুরি পরিবর্তন বা স্থান পরিবর্তন করলেও তার অবসর হিসাবের স্থিতি, চাঁদা প্রদান ও অবসর সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
নিম্ন আয় সীমা নিচের নাগরিকদের ক্ষেত্রে পেনশন স্কীমে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করতেপারে।
পেনশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সরকার নির্বাহ করবে এবং পেনশন কর্তৃপক্ষ ফান্ডে জমাকৃত টাকা নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে।