পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে কর পুনর্বিন্যাস দরকার
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে দেশের কর কাঠামাকে সাময়িক সময়ের জন্য পুনর্বিন্যাস করা দরকার বলে মন্তব্য করেেছন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২১) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক এক ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কর পুনঃবিন্যাস করা না হলে সামনের রমজান মাসে আরও ভোগান্তি বাড়বে। সিএমএসএমই খাতে ব্যাংকগুলোকে ঋণ সহায়তা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘শিল্পখাতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় আরও সম্প্রসারণ দরকার। দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে কৃষিপণ্য প্যাকেজিং এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় আরও মনোযোগী হতে হবে। এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের ঔষধ শিল্পকে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, ‘টেকসই পণ্য হিসেবে পাট হতে উৎপাদিত পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি আরও বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের সঙ্গে এসএমই উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ সম্পৃক্ত থাকায় এ খাতের প্রতি আরও যত্নবান হওয়া দরকার।’
বিদ্যুৎ খাতে সরকারি পুরাতন শিল্পসমূহ, যেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না, সেগুলোকে বন্ধ করার পাশাপাশি সিস্টেম লস কমানোরও আহ্বান জানান তিনি।
তিনি জানান, দেশের লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে ১২ বছরের জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রদানের লক্ষ্যে এফবিসিসিআই কাজ করছে। যা শীঘ্রই সম্পন্ন করে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথ ব্যবহার করা সম্ভব হলে, পণ্য পরিবহনের খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমানো যেতে পারে। এলক্ষ্যে নদীপথের সংষ্কার দরকার।। এলডিসি উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম
এমসিসিআই সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কোভিড মহামারির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত হবে ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পুনঃমূল্যায়ন করা। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য শিল্পখাতে গবেষণা ও উদ্ভাবনের উপর জোর দিতে হবে।’
তিনি জানান, সাভারের ট্যানারি শিল্পে স্থাপিত সিইটিপিকে আন্তর্জাতিক মানের না হওয়ার কারণে চামড়া খাতের উদ্যোক্তাদের বেশ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। হালকা প্রকৌশল এবং কৃষিখাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
‘আমাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য যোগ করা গেলে এ খাতের রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের জন্য সর্বজন স্বীকৃত ক্রেডিট রেটিং নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নেগোশিয়নে আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়বে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাস, বিদ্যুৎ খাতে প্রস্তাবিত দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং জনগণের জীবনযাত্রায় তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ অবস্থায় ‘গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ এবং ‘এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ড’-এর জমানো তহবিল ব্যবহার করা যায়।’
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)’র সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘রিয়েল এস্টেট শিল্পের সঙ্গে নির্মাণ, সার্ভিস, ফিন্যান্সিয়াল এবং ইন্স্যুরেন্স খাত জড়িত থাকায় এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’-এর উপর আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যমান কর হার যৌক্তিকভাবে কমাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে আসিয়ান অঞ্চলে ‘ইকো-সিস্টেম’-এ বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত হওয়া এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি স্টিম-এর আওতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের শিক্ষা খাতের যুগোপযোগীকরণও একান্ত অপরিহার্য। বৃহৎ শিল্পের জন্য এসএমই খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য এ খাতের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, ‘বিশ্ববাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত বেশি। যার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব আমাদের উপর পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থা উত্তরণে আমাদেরকে প্রস্তুত হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তৈরি পোষাক খাত একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের উদ্যোক্তারা অনুসরণ করতে পারে। রেমিট্যান্স কে আমাদের রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানিতে মনোযোগী হতে হবে।’
জেডএ/এমএমএ/