‘দুয়ার’ই অগ্রণী ব্যাংকের একমাত্র ব্যাংকিং এজেন্ট
সারাদেশে তৃণমূলে ব্যাংকিং সেবা পৌছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হয়েছে ২৯টি ব্যাংক। তারা প্রায় ১৫ হাজার এজেন্ট নিয়োগ করেছে। বিভিন্ন ব্যাংক অসংখ্য এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, প্রবাসী আয়সহ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক শুধু ‘দুয়ার সার্ভিস লিমিটেড’ এ সীমাবদ্ধ থেকে ৪০০টি এজেন্টের মাধ্যমে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সম্প্রতি দুয়ার আবারও চারশটি এজেন্টের আবেদন করেছে। যা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি ব্যাংকের মধ্যে যেন বেসরকারি ব্যাংকিং শুরু হয়েছে। কারণ শুধু দুয়ারের লোকজনই সব কাজ করছে। অন্যান্য ব্যাংকের মতো ভিন্ন ভিন্ন মাস্টার বা ইউনিট এজেন্ট নিয়োগ দেয়নি। এতে অগ্রণীর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাবধারিদের ঋণ, আমানত ও প্রবাসী আয় বিপদে পড়বে।
দুয়ার সার্ভিস লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘দুয়ার সফটওয়্যার ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সব নিয়ম মেনেই সারা দেশে তৃণমূলে সেবা পৌঁছে দিতে দুয়ার অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবন্ধ হয়েছে। শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০০ সাব-এজেন্টের মাধ্যমে চার লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬টি হিসাব খোলা হয়েছে। এসব হিসাবে এক হাজার ৮৭২ কোটি টাকা আমানত জমা হয়েছে। আর প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স এসেছে দুই হাজার ৯০ কোটি টাকা। ঋণের দিকেও যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কারণ অন্যান্য ব্যাংকও ঋণ দিচ্ছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে অগ্রণী ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং করা হচ্ছে। শাখা ব্যবস্থাপকের সুপারিশ নিয়েই তৃলমূলে সাব-এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রায় ১০০ জন লোক কাজ করছেন। এখনো অনেক এলাকায় যাওয়া হয়নি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও ৪০০টির আবেদন করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সবাই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং করছে। আমরাও তা করছি।’ শুধু এক দুয়ারে সীমাবদ্ধ কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোনো সুযোগ থাকলে অন্যরাও আসতে পারে। তাদের জন্য ওয়েলকাম (স্বাগতম), দরজা খুলা। টার্ম কন্ডিশন পূরণ করে আসতে পারবে। লোকবল কোনো সংকটের কারণেই কি এই অবস্থা। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না আমাদের কোনো লোকবল সংকট নেই। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রুডেন্সিয়াল গাইডলাইন্স ফর এজেন্ট ব্যাংকিং অপারেশন ইন বাংলাদেশ এর স্ট্রাকচার অব এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মাস্টার এজেন্ট ও ইউনিট এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কথা বলা হয়েছে। তাতে ২৯টি ব্যাংকের মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংকের সর্বোচ্চ ২০টি মাস্টার এজেন্ট রয়েছে। কিন্তু অগ্রণী শুধু দুয়ারে এক সীমাবন্ধ।
অগ্রণী ব্যাংকের শাখা নেই, এসব ইউনিয়নে অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিং নামে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে ব্যাংকটি। এ জন্য দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের সঙ্গে ব্যাংকটি চুক্তি করেছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সব ধরনের অনুমোদন পাওয়ার পর সেবাটি সারা দেশে প্রত্যন্ত এলাকায় চালুও হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংক সূত্র জানায়, সাব-এজেন্ট নিয়োগ করে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, ক্লিয়ারিং চেক গ্রহণ, ঋণের আবেদন গ্রহণ, বিতরণ ও কিস্তি সংগ্রহ, রেমিট্যান্স বিতরণ, বিদ্যুৎ বিল জমা, ভাতা বিতরণসহ যেকোনো ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠানো যাচ্ছে।
শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংক সারা দেশে সর্বোচ্চ প্রায় ৮৯ শতাংশ আউটলেট খুলেছে। এরমধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৫০০২টি বা ২৮ শতাংশ আউটলেট রয়েছে। ব্যাংক এশিয়ার ২৭ শতাংশ, ইসলামী ব্যা্ংকের ১৪ দশমিক ৪৩, সিটি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৭৩ এবং এনআরবি কমার্সিয়াল ব্যাংকের ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।
পাঁচটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ অ্যাকাউন্ট (হিসাব) খোলা হয়েছে ৯০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এরমধ্যে ব্যাংক এশিয়ার সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ ১৯ হাজার ৪২৫টি বা ৩৩ শতাংশ। এরপর ডাচবাংলা ব্যাংকের ৩২ দশমিক ৭১, ইসলামী ব্যাংকের ১৬ দশমিক ৩২, আল আরাফা ব্যাংকের ৩ দশমিক ৫১ ও অগ্রণী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হচ্ছে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
অগ্রণী ব্যাংকের তিন শতাংশেরও কম হিসাব খোলা হয়েছে শুধু দুয়ার সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে। এখানে অগ্রণী ব্যাংক নিজে কোনো এজেন্ট নিয়োগ দেয়নি। তারা দুয়ারকে মাস্টার এজেন্ট নিয়োগ করে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছে। অথচ ডাচ বাংলা, ইসলামী ও ব্যাংক এশিয়ার এককভাবে কারো কাছে সর্বোচ্চ ২০টির বেশি মাস্টার এজেন্ট নেই। বিভিন্ন মাস্টার এজেন্ট ও ইউনিট এজেন্টের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে সারা দেশে।
শুধু তাই নয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫টি ব্যাংকে আমানত জমা হয়েছে ৮৭ শতাংশ। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আমানত জমা আট হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বা ৩৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। এরপর ডাচ বাংলা ব্যাংকে ১৪ দশমিক ৮৪, আল আরাফা ব্যাংকে ১৩ দশমিক ৭৬, ব্যাংক এশিয়ায় ১৩ ও অগ্রণী ব্যাংকে দুয়ারের মাধ্যমে আমানত জমা হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয়ও ব্যাপকভাবে আসছে। মাত্র কয়েক বছরে এসেছে ৭৪ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। তারমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে ৪০ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা ৫৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর ৫ম স্থান করে দুয়ারের মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংকের রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় দুই হাজার ১৩ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ দেশে এসেছে।
জেডএ/