রিজার্ভ থেকে অর্থ ছাড়াই দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলারের দেনা পরিশোধ
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে কোনো অর্থ খরচ না করেই গত দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করেছে। এর ফলে তেল, গ্যাস, সারসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা কাটতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে সব দেনা পরিশোধের পর অর্থনীতিতে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তবে তিনি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই মুহূর্তে চিন্তা না করে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশকে প্রায় সব ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য, যেমন জ্বালানি তেল, গ্যাস, ও কয়লা, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর পেছনে গত অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎ ও সার আমদানিতেও দেশের নির্ভরতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে, গত দুই বছর ধরে চলমান ডলার সঙ্কটের কারণে এসব ব্যয় সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে, আদানি, কাফকো, শেভরন এবং বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) সহ বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বাংলাদেশের বকেয়া দাঁড়ায় সোয়া দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তবে, গত দুই মাসে রিজার্ভের অর্থ ব্যয় না করেই বাংলাদেশ ব্যাংক দেড় বিলিয়ন ডলারের দেনা পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি অংশও আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, "সরকারের ওপর প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের অনাদায়ী ঋণ ছিল, যা আমরা কমিয়ে ৭০০ মিলিয়নে এনেছি। সারের জন্য প্রচুর অর্থ দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুতের জন্যও ব্যয় হয়েছে। আদানি এবং শেভরনকেও পরিশোধ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী দুই মাসের মধ্যে এই দেনা শূন্যতে নামিয়ে আনতে পারব, যার ফলে বাজারে লিকুইডিটি আরও বাড়বে।"
দেনা পরিশোধের পর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চাপ কমে আসবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়বে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে বর্তমানে ১০৩ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ ও এর উপর ধারাবাহিক চাপ কিছুটা উদ্বেগের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন গভর্নর।
তিনি আরও বলেন, "যদি আমরা আইএমএফ থেকে ২-৩ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত পাই এবং এর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ২ বিলিয়ন ডলার পাই, তাহলে আমরা এই ৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিছু সরকারি ব্যয় বাড়াতে পারব, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সহায়তা করবে। তবে এখনই বিনিয়োগে বড় পদক্ষেপ নেওয়ার সময় নয়। বিশ্বব্যাংকের অনুমান অনুযায়ী আমাদের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে এটি সাময়িক, এক বছরের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।"
এ সময় শ্রম অসন্তোষের কারণে রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন গভর্নর।