বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ির মানে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’: দেবপ্রিয়
‘মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মানে সেখানে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’—এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মরণে ‘মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এতদিন তথ্যে নৈরাজ্য চলছিল, এখন অপঘাত ঘটছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এর মানে তা কী বার্তা দিচ্ছে। এখন ওখানে এমন কিছু ঘটছে, তা যদি জনসমক্ষে প্রকাশ পায় তাহলে বড় ধরনের নাশকতা হয়ে যাবে। এই নাশকতাকারীরা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিটের সাংবাদিকরা।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ১৯৯০-এর দশক গণতন্ত্রের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল। বর্তমানে সেটিকে বিশ্রুত মনে হয়। বর্তমানে তথ্য-উপাত্তে অপঘাত হয়েছে। আগে তথ্য-উপাত্তে দৃষ্টিশক্তির অভাব ছিল। এখন বৈকল্য এসেছে। এর সর্বশেষ প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাইলে এটা করতে পারে না। ঘরেই যদি না ঢোকা যায় তাহলে কী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে? এ থেকে বার্তা আসছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত থাকে সেগুলোর অবস্থা এমন যে, সেগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ পেলে বড় ধরনের নাশকতা হয়ে যেতে পারে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য-উপাত্তের জন্য শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ছিল। অনেক তথ্য তাৎক্ষণিক পাওয়া যেতো। তার বিশ্বাসযোগ্যতাও ছিল। বিশেষ করে বৈদেশিক লেনদেন সংক্রান্ত। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তুলনায় নির্ভরযোগ্য ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে নেয় তাহলে সুনামহানি ঘটবে, এতে সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, রপ্তানি হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যালান্স অব পেমেন্টের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, টাকা আসছে না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে মানুষ তা জানে। এখন এই তথ্য বন্ধ করা হচ্ছে। এ ধরনের সংবেদনশীল তথ্য নিয়ন্ত্রণ করা হলে সেটা সরকারের জন্য অপকারী। আর বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সময়ে এই উদ্যোগ নিয়েছে যখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সরকারের সংস্কার উদ্যোগের ফলাফল বিশ্লেষণ করছে। সেসময় প্রবেশ নিষেধ, তার মানে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। এ আত্মসংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সাম্প্রতিক সময়ে অনেক নতুন ধরনের তথ্য সরকার প্রকাশ করতে শুরু করেছে। এতে দেশের গবেষকরা তথ্য-উপাত্ত প্রবাহে হঠাৎ আলোর ঝলকানি দেখছিলেন জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, আলোতে শুধু ঝলকানি থাকে না, তাতে তাপও থাকে। সেই তাপ অনেকে সহ্য করতে পারছেন না। এতে সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে শুভ মনস্কামনাসম্পন্ন রাজনীতিবিদদের।