গরুর মাংসের যৌক্তিক দাম নির্ধারণে সভা, ব্যবসায়ীদের হট্টগোল
গরুর মাংসের যৌক্তিক দাম নির্ধারণে সভা। ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ বৈঠকের পরও গরুর মাংসের যৌক্তিক দাম ঠিক করতে পারেনি মাংস ব্যবসায়ী সমিতি এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন। এমনকি এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও। সিদ্ধান্ত ছাড়াই হট্টগোলের একপর্যায়ে সভা শেষ হয়।
এ সময় অধিদফতরের মহাপরিচালক গরুর মাংসের দাম ব্যবসায়ীদের ঠিক করে অধিদফতরে জানাতে নির্দেশনা দেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বর্তমানে নানা দামে গরুর মাংস বিক্রি হলেও এর প্রকৃত দাম আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে নির্ধারণ করার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। রবিবার (৩ ডিসেম্বর) এ কথা জানান অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, সেমিনার হবে শুনে অনেকেই ভেবেছেন আজই গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। ভোক্তা অধিকার মাংসের দাম নির্ধারণ করবে না, এটি নির্ধারণ করবেন ব্যবসায়ীরা। ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং মাংস ব্যবসায়ী সমিতি আগামী ৬ ডিসেম্বর একসঙ্গে বসে মাংসের দাম নির্ধারণ করবে। পরে ভোক্তা অধিকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মূল দাম নির্ধারণ সাপেক্ষে জনগণকে জানাবে।
ভোক্তার মহাপরিচালক জানান, ব্যবসায়ীদের পাঠানো মূল্য প্রতিবেদন প্রয়োজন সাপেক্ষে সরকারের নিকট তুলে ধরা হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, মাংস ব্যবসায়ী কর্তৃক মাংস ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পাকা রসিদ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মাংসের ক্ষেত্রে তথ্যভিত্তিক গবেষণা করা দরকার এবং এক্ষেত্রে অধিদফতর কর্তৃক বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে যেন এই ধরনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তার সুপারিশ সরকারের নিকট তুলে ধরা হবে। পাকিস্তান যদি সাড়ে ৪০০ টাকায় গরুর মাংস খাওয়াতে পারে, তাহলে আমাদের এখানে কোনোভাবেই সাড় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দাম হতে পারে না। যত যুক্তিই দেন। এজন্য গবেষণা হওয়া দরকার।
এর আগে গরুর মাংসের দাম কমাতে কী কী করণীয়, খলিলসহ কয়েকজন কীভাবে কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করছে, সেই বিষয়ে খুচরা ও পাইকারি মাংস ব্যবসায়ী, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন এবং সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন ভোক্তা অধিদফতরের ডিজি। এ সময় বেশ কয়েকবার হট্টগোল সৃষ্টি হয়। যার কারণে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে চলা সেমিনারটি কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই শুধু নির্দেশনা দিয়ে শেষ করেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা হট্টগোল করলে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। ব্যবসায়ীরা এ সময় খুচরা ব্যবসায়ী ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হট্টগোল করতে থাকেন। ৬০০ টাকা দরে মাংস দেওয়ার জন্য বলেন।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, যেসব দোকানদার বলছে ৬০০ টাকায় মাংস বিক্রি করতে, তাদের কাপড়চোপড় কারও সঙ্গে থাকবো না। ‘জার্সি গরু’ বিক্রি করে খলিল, সেটা একটু কম দামে পাওয়া যায়। একসঙ্গে অনেক গরু বিক্রি করলে লাভ হবেই। আমরা যারা একটা দুইটা গরু বিক্রি করি তাদের অনেক দিক খেয়াল রাখতে হয়। খলিলের দোকানের পেছনের বাড়িওয়ালা আমার কাছ থেকে গত শুক্রবার মাংস নিয়ে গেছে ৭০০ টাকা কেজিতে। স্বাদ ভালো দেখে নিয়ে গেছে, খলিলের দোকানে যায় নাই। খলিল বিক্রি করলে তার কাপড়চোপড় থাকবে কিন্তু অন্য কারও থাকবে না। কারণ, তার বিক্রি আলাদা। এ সময় খলিলকে ৬০০ টাকা দরে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাংস দেওয়ার জোর দাবি জানান নেতারা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জোর গলায় বলেন, ইমরান ভাই এবং মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব মাংস সরবরাহ করুক, আমরা ৫৭৫ টাকায় মাংস বিক্রি করবো। এ সময় ভোক্তার মহাপরিচালক কয়েক দফায় শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে মাংসের দাম নির্ধারণে নির্দেশনা দেন মহাপরিচালক।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগ) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসাইন, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মুর্তজা, মহাসচিব রবিউল আলম, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ট্রেজারার মনজুর-ই খোদা, মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানসহ বিভিন্ন সুপার শপ ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।