নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে বাজারে অসহায় ক্রেতারা
বাজারে তিন নিত্যপণ্য- পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের বাড়তি দরে রীতিমতো অসহায় ভোক্তা। কয়েক মাস ধরেই এসব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণ করা হলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছে না। বরং নীতিনির্ধারকদের এক প্রকার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে দাম।
প্রায় এক মাস পার হলেও ডিম, আলু ও পেঁয়াজের নির্ধারিত দাম কার্যকরে ব্যর্থ হয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো। উল্টো প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে এই তিন পণ্যের দাম। যা এ সপ্তাহের শেষে এসে আরও চড়া হয়েছে। অন্যদিকে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দীর্ঘ দিন ধরে চড়া সবজির দাম আরও বেড়েছে। এছাড়াও আগের চড়া দাম অব্যাহত রয়েছে আদা-রসুনসহ সব ধরনের মসলা, মুুদি পণ্যে ও মাছের বাজারে।
আলু: একই অবস্থা আলুর বাজারেও। এদিন মানভেদে আলুর কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা দরে। সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা এবং দুই সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দাম থেকে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কোল্ড স্টোরেজ থেকে যে দামে আলু কিনতে হয় সে হিসেবেই খুচরায় বিক্রি হয়। যদিও নির্ধারণের সময় বলা হয়েছিল, সরকার নির্ধারিত দাম থেকে কোল্ড স্টোরেজে বেশি দাম নেয়া হলে পণ্য নিলামে বিক্রি করা হবে। কিন্তু এই আইন এখন পর্যন্ত প্রয়োগ করা হয়নি। তাদের মতে, বাজারে নতুন আলু না আসা পর্যন্ত দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পেঁয়াজ: ব্যাপকহারে আমদানি, শুল্ক সুবিধা ও প্রশাসনিক পর্যায়ে তদারকি বাড়ানো সত্তে¡ও বাজারে পেঁয়াজের নির্ধারিত দাম কার্যকর করা যায়নি। শুক্রবার রাজধারীর বাজারগুলোতে ভালো মানের বাছাইকৃত দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১শ টাকা কেজি দরে এবং অবাছাইকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকার উপরে। অন্যদিকে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে উভয় পেঁয়াজে দাম বেড়েছে অন্তত ১৫ টাকা। যা নির্ধারিত দামের প্রায় দ্বিগুণ।
বিক্রেতারা জানান, ভালো মানের না হওয়ায় গত বছর বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা খুবই কম ছিল। এমনকি দু’মাস আগেও এই পেঁয়াজের চাহিদা ছিল না। এছাড়াও এই পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না, তাই ক্রেতারা পরিমাণে কম কিনতেন। কিন্তু এখন এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকার উপরে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজের মধ্যে সবসময়ই পাবনা অঞ্চলের পেঁয়াজের দাম বেশি থাকে। আকার ও রঙে একই সমান হওয়া এর চাহিদাও বেশি।
ডিম:আলু-পেঁয়াজের মতো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি ডিমের দামও। ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি ও আড়তে আড়তে অভিযান পরিচালনা সত্তে¡ বাড়তিই রয়েছে এই অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম। দাম নির্ধারণের চতুর্থ সপ্তাহে এসে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকার উপরে। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে ডজনে দাম বেড়েছে ৭ টাকা। অন্যদিকে সুপার শপগুলোতে বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বাইছাইকৃত বড় আকারে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা থেকে শুরু করে ৩শ টাকা এবং খোলা ডিম ১৬০ টাকা দরে। তবে ডিমের বাজার কারসাজির দায়ে বেশ কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে বড় অংকের জরিমানা করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন।
সবজি: পেঁপে ছাড়া ৮০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি : শুক্রবার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। সপ্তাহের ব্যবধানে বেশকিছু সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সেক্ষেত্রে বাজারে প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকা। প্রতি কেজি করলা, কচুমুখি, বরবটি, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। আর ঢেঁড়স, পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে তুলনামূলক কম দামের মধ্যে মুলার কেজি ৫০-৬০ টাকা আর পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।
মাছ : গত সপ্তাহের চড়া দাম অব্যাহত আছে মাছ বাজারেও। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজারে ইলিশ মাছ বিক্রি বন্ধ রয়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ইলিশ না থাকায় বাজারে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের চাহিদা বেড়েছে, ফলে কেজিতে এসব মাছের দাম ৫০ থেকে দেড়শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা, বড় কাতল ৫শ’, বড় পাঙ্গাশ আড়াইশ, চাষের কই (ছোট) ৩৭০, তেলাপিয়া ৩শ’ ও শিং মাছ ৬শ’ টাকা, শোল মাছ ৮শ’, পাবদা ৬শ’ থেকে ৭শ’, ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৮শ’ থেকে ১ হাজার, মলা মাছ ৬শ’, বাইলা ১ হাজার, পোয়া মাছ ৪শ, মাঝারি আকারে বোয়াল ৭শ থেকে ৮শ’, গুঁড়ামাছ ৪শ, ছোট চিংড়ি ৫শ’, গলদা ৭শ’ এবং বাগদা ৮শ’ থেকে ৯শ’ ও রূপচাঁদা ১ হাজার টাকা দরে।
মাংস: অন্যদিকে প্রায় ২ মাস ধরে স্থিতিশীল থাকা মুরগির বাজার গত দুই সপ্তাহ ধরে কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। যা এ সপ্তাহেও অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৩০, ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২শ’ থেকে ২১০ দরে এবং লেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা দরে। তবে কিছুটা কমে গরুর মাংশ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৪০ টাকায়।