বেশি দামেই বিক্রি আদা, পেঁয়াজ, চাল ও চিনি
চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও ঈদের পর পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। লাগাম টেনে ধরতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানির কথা বললেও তা হচ্ছে না। এ জন্য দামও কমছে না। বর্তমানে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি করলে অর্ধেকে নেমে যাবে পেঁয়াজের দাম। চীন থেকে না আসায় আদার ঝাঁজও কমছে না। ঈদুল ফিতরের আগের ২০০ টাকা কেজির আদা ৩৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছে। সারা দেশে নতুন ধান উঠলেও বাজারে কমেনি চালের দাম। কেজিতে ১৬ টাকা বাড়ানোর পরও নির্ধারিত মূল্য ১২৫ টাকা কেজি চিনি পাচ্ছেন না ক্রেতারা। এখনো বিক্রেতারা বলছেন, চিনি নেই। আলু, ঝিঙা, ধুন্দলসহ প্রায় সবজির দামও বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কেনা। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
শনিবার (২৭ মে) রাজধানীর টাউনহল বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে বাজারে দেখা গেছে, এলাকা ভেদে একই পণ্য কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম বেশি দামে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও পণ্য ভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য।
দাম বাড়িয়েও চিনি নেই
সরকার কেজিতে ১৬ টাকা দাম বাড়িয়ে খোলা চিনি ১২০ ও প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা কেজি বিক্রি করার ঘোষণা দিলেও বাজারে সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও আরও বেশি দামে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।
চিনির ব্যাপারে জানতে চাইলে টাউনহলের বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোরের জনিসহ অনেক খুচরা ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘১০৪ টাকা থেকে ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা কেজি চিনির কেজি বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু দাম বাড়ানোর পরও মিল থেকে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোথাও পাওয়া গেলেও বেশি দামে নিতে হচ্ছে। এ জন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহেরসহ অনান্য ব্যবসায়ীরা জানান, সেই ঈদের আগে থেকে চিনি নেই। লবণের দামও বেড়ে গেছে। বর্তমানে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।
সরকার সয়াবির তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর পর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। নতুন দাম অনুযায়ী ১ লিটার ১৯৯ টাকা, ২ লিটার ৩৯০ টাকা ও ৫ লিটার ৯৪০ থেকে ৯৬০ টাকা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
বেড়েই যাচ্ছে জিরার দাম
গত ঈদ শেষে জিরার দাম বেড়েই চলেছে। তা একেবারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে। প্রতি সপ্তাহে কেজিতে বাড়ছে ৫০ টাকা। বর্তমানে ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি হয়ে গেছে। রসুন বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। তবে আগের মতোই মসুর ডাল ৯৫ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি, প্যাকেট আটা ২ কেজি ১৩০ টাকা ও খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা, ময়দা ১৫০ টাকা, ছোলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
নতুন ধান উঠলেও বেশি দামে চাল বিক্রি
দেশের হাওর, উত্তরাঞ্চলসহ প্রায় এলাকায় ধান উঠে গেছে। তারপরও কমেনি চালের দাম। আগের মতোই মোটা স্বর্ণা চাল ৫০ টাকা, ২৮ ও পাইজাম ৫২ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। মিনিকেট চালের কেজি ৭২ টাকা থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। টাউনহলের নোয়াখালী রাইস এজেন্সির লেঅকমানসহ অন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন রোরো ধান উঠলে মাঝারি চালের দাম কিন্তু তেমন কমছে না। কারণ, ধানের দাম বেশি।
কমেনি মাংসের দাম
ঈদে মাংসের দাম বাড়লেও পরে তেমন আর কমেনি। টাউনহলের ভিআইপি ব্রয়লার হাউজসহ অন্য মুরগি দোকানের বিক্রয়কর্মীরা জানান, বর্তমানে ব্রয়লার ২১০ থেকে ২২০, পাকিস্তানি মুরগি ২৯০ থেকে ৩৪০ টাকা, দেশি মুরগির দাম কিছুটা কমে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর মাংসও ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ডিমের দাম বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
এদিকে, মাংসের দাম না কমার কারণে আগের দামেই মাছ বিক্রি করা হচ্ছে বলে টাউনহলের বসায়ীরা জানান। বিক্রেতারা জানান, ঈদের পর থেকেই ছোট মাছ ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, রুই, কাতলা ২৫০-৪৫০ টাকা কেজি। চিংড়ি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৩০০-৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০, কাজলি ও বাতাসি ৬০০ টাকা, পাঙাস ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, আকারভেদে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি।
সবজির দামও চড়া
অন্যান্য জিনিসের মতো সবজির বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সজনের কেজি ১৫০ টাকা, ঝিঙা, ধুন্দল ও চিচিঙ্গার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। বর্তমানে লেবু ২০ থেকে ৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের স্বপন বলেন, বর্তমানে লেবুর ডজন ২০ থেকে ৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। মরিচের কেজি ৮০ থেকে ১০০ থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ও করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আলু ৪০ টাকা থেকে ৫০, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা, গাঁজর ৩০-৪০ টাকা, লাল ও পালং শাকের আঁটি ১০ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, বর্ষা শুরু হয়েছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে যাচ্ছে।
জেডএ/এমএমএ/