ন্যূনতম ২০০০ টাকা কর না দিলে মিলবে না ৩৮ সেবা

শূন্য আয় দেখিয়ে রিটার্ন জমা দিলে স্লিপ বা প্রাপ্তিস্বীকার পত্র পেতে লাগতে পারে দুই হাজার টাকা। এটা দেওয়া না হলে ব্যাংক ঋণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সংযোগসহ ৩৮টি সেবা পাওয়া যাবে না।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর আদায় বাড়াতে ন্যূনতম এই কর নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে কারও আয় ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে তাকে নির্ধারিত হারেই আয়কর দিতে হবে। শূন্য রিটার্ন জমা দিলেও দুই হাজার টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান রাখার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণিতে পুরুষ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। নারী বা ৬৫ বছর বয়সী পুরুষ করদাতাদের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতাদের জন্য সাড়ে চার লাখ টাকা ও মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাহতদের জন্য ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করমুক্ত আয়সীমা।
দেশে বর্তমানে মাত্র ৩২ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তার মধ্যে ৮ লাখেরই নেই করযোগ্য আয়। অন্যদিকে, ব্যক্তিশ্রেণিতে টিআইএন ধারীর সংখ্যা মাত্র ৮৬ লাখ। সেই তুলনায় আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা খুবই কম।
বর্তমানে দেশের কর জিডিপির অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। অপরদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তথবিল-আইএমএফের শর্ত পূরণে কর জিডিপি ও কর জাল বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে। এসব বিবেচনায় করযোগ্য আয় নেই এমন ব্যক্তিদের ওপরও ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর নির্ধারণের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, আগামী বাজেটে টিআইএন নিবন্ধন বাতিল করার বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। কোনো টিআইএনধারী মারা গেলে বা করযোগ্য আয় না থাকলে তার টিআইএন নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিতের বিধান সংযুক্ত হতে পারে।
রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, ন্যূনতম কর নির্ধারণ করা হলে অতিরিক্তি প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে। কর প্রদানের সংস্কৃতিতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমার নিচে আয় থাকলে করদাতা শুধু শূন্য আয় দেখিয়ে রিটার্ন জমা দিতে পারেন। এক্ষেত্রে তাকে কোনো কর দিতে হয় না। তবে বার্ষিক আয় করসীমার এক টাকা বেশি হলেও তাকে ন্যূনতম আয়কর দিতে হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় করদাতার ন্যূনতম করের হার পাঁচ হাজার টাকা। অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতার ন্যূনতম করের হার চার হাজার টাকা। সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্য এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার তিন হাজার টাকা দিতে হয়।
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ৩৮টি সরকারি-বেসরকারি সেবা পেতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে-পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকঋণ নেওয়া, কাজী সনদ গ্রহণ করতে, বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য পেতে, ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র ও বিএসটিআইয়ের সনদ পেতে, বাণিজ্যিক ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাস সংযোগ অথবা সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ পেতে, কোম্পানি পরিচালক পদ পেতে, আমদানি-রপ্তানি সনদ, ব্যবসা শুরুর ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নকালে, সমবায় সমিতির লাইসেন্স নিতে, বিমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হিসেবে নিবন্ধন পেতে, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রিকালে, ক্রেডিট কার্ড নিতে, পেশাজীবী সংগঠনের (চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, সার্ভেয়ার) সদস্যপদ পেতে, নৌযানের সার্ভে সনদ নিতে, ইটভাটা চালু করতে, বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে লাগতে পারে রিটার্ন জমার স্লিপ।
এ ছাড়া, কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পেতে, আগ্নেয়াস্ত্র সনদ পেতে, আমদানির এলসি খুলতে, পাঁচ লাখ টাকার বেশি ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ও পাঁচ লাখ টাকার বেশি অন্য সঞ্চয়পত্র কিনতে, ব্যাংক হিসাব খুলতে, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে, যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসায়িক অংশীদার হলে, বিমা কোম্পানির এজেন্সি সনদ নবায়ন করতে, মোটরসাইকেল ও সিএনজি ছাড়া অন্য যানবাহনের মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে, বিদেশি অনুদান গ্রহণকারী এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সনদ গ্রহণ করতে, আমদানি-রপ্তানি পণ্যের বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে, অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ করতে, বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে চাইলে, সরকারি-বেসরকারি দরপত্র জমা দিতে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা গ্রহণকালে, ১৬ হাজার টাকার বেশি মূল বেতনভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন তুলতে রিটার্ন জমার স্লিপ লাগবে।
জেডএ/এমএমএ/
