দাম চড়া সব পণ্যের, নির্ধারিত দামে মিলছে না চিনি
সারাদেশে নতুন ধান উঠলেও বাজারে কমেনি চালের দাম। আর পেঁয়াজ ও জিরার দাম বেড়েই চলেছে। তেলের দাম বাড়ানোর পর পরই খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চলে আসায় তা পাচ্ছেন ক্রেতারা। কিন্তু কেজিতে ১৬ টাকা বাড়ানোর পরও বিক্রেতারা চিনি পাচ্ছেন না। এখনো অধিকাংশ বিক্রেতা বলছেন চিনি নেই। অন্যদিকে, আলু, ঝিঙ্গা, ধুন্দলসহ সবজির দামও চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কেনা, তাই চড়া দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
শনিবার (১৩ মে) রাজধানীর কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দাম বাড়িয়েও চিনি নেই
সরকার কেজিতে ১৬ টাকা দাম বাড়িয়ে খোলা চিনি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা করে বিক্রির ঘোষণা দেন। কিন্তু বাজারে সহজে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। তবে কোনো কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও তারা ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারওয়ানবাজারের সততা ট্রেডার্স, সালমান ট্রেডার্স, লক্ষীপুর স্টোর, আ. গনি স্টোরসহ অন্যান্য খুচরা ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ১০৪ টাকা থেকে ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা চিনির কেজি করা হয়েছে। তারপরও পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বাড়ানোর পরও মিল থেকে চিনি দিচ্ছে না। তাই আমরা তো পাচ্ছি না। তবে কোথাও পাওয়া গেলেও তা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার কম বিক্রি করা যাচ্ছে না।
সালশান ট্রেডার্সের মাসুম বলেন, গোড়াই দাম বেশি। তাই চিনি রাখি না। আবার কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রেইজের আবু তাহেরসহ অনান্য ব্যবসায়ীরা জানান, সেই ঈদের আগে থেকে চিনি নেই।
জিয়াউর রহমান নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ দোকান, সে দোকান করে প্রায় ১০ দোকান ঘুরেছি। কিন্তু সবাই বলছেন চিনি নেই। তবে এক দোকানদার বলেন, চিনি আছে, তবে দাম পড়বে ১৩৫ টাকা কেজি, নিলে নেন— না হলে যান’।
এদিকে সরকার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর পর বাজারে তা হাজির হয়ে গেছে। নতুন দাম অনুযায়ী ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৯৯ টাকা, ২ লিটার ৩৯০ টাকা ও ৫ লিটার ৯৩০ থেকে ৯৬০ টাকা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
বাড়তি জিরা ও আদার দাম
ঈদ শেষে জিরার দাম বেড়েই যাচ্ছে। তা একেবারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা কেজিতে বেড়ে ৮৫০ টাকা কেজি হয়ে গেছে। এদিকে পেঁয়াজও সেই পথে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আদাতেও সুখবর নেই। বিদেশি আদার কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি আদা ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর দেশি রসুন বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। তবে আগের মতোই মসুর ডাল ৯৫ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি, প্যাকেট আটা ২ কেজি ১৩০ টাকা ও খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা, ময়দা ১৫০ টাকা, ছোলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
নতুন ধান উঠলেও কমেনি চালের দাম
দেশের হাওর, উত্তরাঞ্চলসহ প্রায় এলাকায় ধান উঠলেও তেমন কমেনি চালের দাম। আগের মতোই আছে বলে বিক্রেতারা জানান। বর্তমানে মোটা স্বর্ণা চাল ৫০ টাকা, ২৮ ও পাইজাম ৫২ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন কোম্পানির বস্তার মিনিকেট চালের কেজি ৭২ টাকা থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। কারওয়ানবাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আ. আওয়ালসহ অন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন বোরো ধান উঠলে মাঝারি চালের দাম কমবে মনে হয়েছিল। কিন্তু তেমন কমছে না। কারণ ধানের দাম বেশি। তবে সারা দেশের ধান উঠলে সরবরাহ বেশি হওয়ায় কিছুটা কমতে পারে।
আবার বেড়েছে ব্রয়লারের মুরগির দাম
ঈদে হঠাৎ করে মাংসের দাম বাড়লেও পরে সেভাবে কমেনি। কারওয়ানবাজারের জনপ্রিয় ব্রয়লার হাউজ, মায়ের দোয়া, ঢাকা ব্রয়লার, নুরজাহান ব্রয়লার হাউজের বিক্রিয়কর্মীরা জানান, ঈদের কয়দিন পর ব্রয়লারের দাম কমলেও এ সপ্তাহে আবার বেড়ে গেছে। বর্তমানে ব্রয়লার ২১০ থেকে ২৩০, পাকিস্তানি মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা ও দেশি মুরগির দাম ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ডিমের দামও আগের মতো বেশি দামে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
এদিকে মাংসের দাম না কমার কারণে আগের দামেই মাছ বিক্রি করা হচ্ছে বলে কারওয়ানবাজার ও টাউনহলের ব্যবসায়ীরা জানান। বিক্রেতারা জানান, ঈদের পর থেকেই বাচ্চা মাছ ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, রুই, কাতলা ২৫০-৪৫০ টাকা কেজি। চিংড়ি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৩০০-৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০, কাজলি ও বাতাসি ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, আকারভেদে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা কেজি ।
সবজির দামও চড়া
অন্যান্য জিনিসের মতো সবজির বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পেঁপের কেজি ৭০ টাকা ছাড়িয়েছে। ঝিঙ্গা, ধুন্দুল ও চিচিঙ্গার কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। বর্তমানে লেবু ২০ থেকে ৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। কারওয়ানবাজারের স্বপন বলেন, বর্তমানে লেবুর ডজন ২০ থেকে ৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। মরিচের কেজি ৮০ থেকে ১০০ থেকে কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
ঈদ ফুরিয়ে যাওয়ায় শসার দামও কমেছে। তা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ও করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আলু ৩৫ টাকা থেকে ৫০, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা, গাঁজর ৩০-৪০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সজনার দাম বেড়ে ১২০ টাকা কেজি, লাল ও পালং শাকের আঁটি ১০ টাকা, ও ধনিয়ার পাতা ১০ থেকে ১৫ টাকা ও পুঁইশাক ২০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দেখা গেছে, এলাকাভেদে একই পণ্য কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও পণ্যভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
জেডএ/আরএ/