‘সিন্ডিকেট’র কবলে চিনি, চড়া দামের বাহারি সেমাই পর্যাপ্ত
রমজান মাস একেবারে শেষের দিকে। আর কয়দিন পরই ঈদ। তাই বাহারি রকমের সেমাই রয়েছে বাজারে। কিন্তু দাম একেবারে নাগালের বাইরে। সেমাইয়ের কেজি ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫০০ গ্রামের অলিম্পিয়া সেমাই ৩৭০ টাকা, ৫০০ গ্রামের আলাউদ্দিন লাচ্ছা সেমাই ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বনফুল, বম্বে সুইটসসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের সেমাইও কম ওজনের প্যাকেট করে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
কিন্তু সেমাই বাজারে পর্যাপ্ত থাকলেও রান্না করতে যে চিনির প্রয়োজন সেই চিনির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। বেশি দামেও অনেক স্থানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায়, চিনি পাওয়া গেলেও নির্ধারিত মূল্যে ১০৪ টাকার চিনি ১২৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। পাইকারি ব্যবসায়ী, ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিলমালিকরা সুবিধা নিলেও সিন্ডিকেট করে আটকে রেখেছে চিনি। মিলাররা কম দামে চিনি দিচ্ছে না। এজন্য ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে চিনির দামও তত বাড়ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের টাউনহলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে কারওয়ান বাজাররের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের মো. ইউসুফ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এবারে বাহারি রকমের সেমাই এসেছে। কিন্তু দামও সেই রকম। দেখেন না আলাউদ্দিন অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্টের ৫০০ গ্রামের আলাউদ্দিন লাচ্চা সেমাই ২৫০ টাকা। অন্যান্য ব্র্যান্ডেরও একই অবস্থা।
এত দাম কেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই খুচরা বিক্রেতা বলেন, তারা তো গায়ে দাম লিখে দিয়েছে। এর বেশি তো আমরা নিচ্ছি না। কিছু বলতে হলে তাদের বলেন। চিনি আছে বলা মাত্র তিনি বলেন, বেশি দামে কিনে জরিমানা খেতে চাই না।
শুধু এই ব্যবসায়ীই নয়, কারওয়ান বাজারের সততা ট্রেডার্স, সালমান ট্রেডার্স, লক্ষীপুর স্টোর, আ. গনি স্টোরসহ অন্যান্য খুচরা ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, শুধু শুনছি চিনির দাম কমেছে কিন্তু আমরা তো চোখে দেখছি না, পাচ্ছি না। তাই বিক্রিও করতে পারছি না। হাহাকার পড়ে গেছে। আবার কোথাও পাওয়া গেলেও ১২০ টাকার কম বিক্রি করা যাচ্ছে না। সালশান ট্রেডার্সের মাসুম বলেন, দাম বেশি। তাই চিনি রাখি না। তারা আরও বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারে সেমাই বেশি বাজারে এসেছে। তবে বিভিন্নভাবে প্যাকেটজাত করে বেশি দাম নিচ্ছে।
এদিকে, টাউনহলের একতা জেনারেল স্টোরের সুমনও একই তথ্য জানান। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ৫০০ গ্রামের অলিম্পিয়া সেমাই ৩৭০ টাকা। তবে একটু কম দামে ৩৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ওজন কম হলেও ১৮০ গ্রামের ফুলসান সেমাই ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সেমাইও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম চড়া হওয়ায় বিক্রিও কম হচ্ছে।
চিনি আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, না, চিনি নেই। কারণ সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পাওয়া গেলেও দাম বেশি। তাই রাখি না। কারণ ১১৯ টাকা কেজি কিনে বেশি দামে বিক্রি করে জরিমানা খেতে চাই না। এ জন্য বিক্রিও কম হচ্ছে।
সাফি ডিমার্টমেন্টাল স্টোরের মিরাজ বলেন, ১৮০ গ্রামের বম্বে সুইটস ও ফুলসান সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। তবে সাধারণ সেমাই কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
চিনির ব্যাপারে জানতেই চাইলে মিরাজ পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী এন্টারপ্রইজের মেমো দেখিয়ে বলেন, এই যে মেমো দেখেন। ৫০ কেজি চিনি কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৯৫০ টাকায়। প্রতি কেজির দাম ১১৯ টাকা। তাহলে ১২২ টাকা বিক্রি না করলে লাভ কীভাবে থাকবে?
মিরাজ আরও বলেন, যতই দিন যাচ্ছে চিনির দাম বাড়ছে। কাহিনি কী মিলমালিকরাই জানে। কারণ সরকার বলছে খোলা চিনি ১০৪ টাকা। তাহলে তারা এত বেশি দামে বিক্রি করছে কেন? সরকারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
অপর খুচরা ব্যবসায়ী মেসার্স সরকার ট্রেডার্সের আনোয়ার হোসেনও গত ১৬ এপ্রিলের মেমো দেখিয়ে বলেন, ৫০ কেজি চিনি ৫ হাজার ৮০০ টাকায় কেনা। প্রতি কেজির দাম খরচ ধরে ১১৮ টাকার মতো পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, সরকার নির্ধারিত ১০৯ টাকার ফ্রেশ চিনির গায়ের মূল্য ১১২ টাকা। কিন্তু সেই দামেও পাওয়া যাচ্ছে না। এসব চিনি পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী এন্টারপ্রাইজ থেকে কেনা। দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি কমে গেছে। কারণ, আগে দাম কম থাকায় মানুষ বেশি কিনত। আগে দিনে ৪ বস্তা বিক্রি হলেও বর্তমানে এক বস্তাও বিক্রি হয় না।
এদিকে, কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহের বলেন, দেশে হচ্ছেটা কি? সরকার বলছে চিনি দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাজারে ভিন্ন চিত্র। ৫০ কেজির চিনি ৬ হাজার টাকা হয়ে গেছে। তাও সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিলে যে চিনি উৎপাদন হচ্ছে সেগুলো যাচ্ছে কোথায়?
আবু তাহের আরও বলেন, মানুষ ঈদেও চিনি পাবে না। এটা ভাবা যায় না। তাহলে সেমাই খাবে কীভাবে? শুধু নেই নেই শুনে থাকতে হবে। তাহলে সরকার কী করছে?
উল্লেখ্য, সরকার গত ৮ এপ্রিল চিনির দাম কেজিতে তিন টাকা কমিয়ে খোলা চিনি ১০৪ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাজারে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
আরইউ/এমএমএ/