পণ্যমূল্য বাড়ছেই, বাজারে নেই স্বস্তি
রমজান মাস শেষের দিকে। ঈদ ঘনিয়ে আসছে। মানুষ রাজধানী থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তারপরও বাজারে স্বস্তি নেই।
এক সপ্তাহ আগে সরকার খোলা চিনির দাম কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে ১০৪ টাকা কেজি বিক্রির ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাজারে নেই তার কোনো প্রভাব। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিনি নেই।
আবার কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও বিক্রেতা বলছেন, বেশি দামে কেনা। তাই ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে চিনি । মুরগিও আগের মতো বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। খেজুরের দামও কমেনি। তবে আগের মতো ডিম ১২০-১২৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, টাউনহল ঘুরে সংশ্লিষ্ট খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এখনো ১২০ টাকা কেজি চিনি
সরকার চিনির কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে ১০৪ টাকা বিক্রির ঘোষণা দিলেও ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে। কারওয়ান বাজারের সসতা ট্রেডার্স, সালমান ট্রেডার্স, লক্ষীপুর স্টোর, আ. গনি স্টোরসহ অন্যান্য খুচরা ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, শুধু শুনেছি চিনির দাম কমেছে কিন্তু আমরা তো পাচ্ছি না। তাই বিক্রিও করতে পারছি না। সালশান ট্রেডার্সের মাসুম বলেন, দাম বেশি। তাই চিনি রাখি না।
তবে সয়াবিন তেল আগের মতো ১ লিটার ১৮৫ থেকে ১৮৭ টাকা, ২ লিটার ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা ও ৫ লিটার ৮৭০ থেকে ৯০৫ টাকা, মসুর ডাল ৯৫ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি, প্যাকেট আটা ২ কেজি ১৩০ টাকা ও খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা, ময়দা ১৫০ টাকা, ছোলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
আগের মতোই পেঁয়াজের কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা ও বিদেশি রসুন ১৩০ ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে চায়না আদার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ২৯০ টাকা কেজি, দেশি আদা ১১০-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
আগের মতোই বেশি দামে মুরগি বিক্রি
প্রচণ্ড গরমে মুরগি মারা যাচ্ছে। তাই দাম বেশি বলে জানান কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় ব্রয়লার হাউজ, মায়ের দোয়া, ঢাকা ব্রয়লার, নুরজাহান ব্রয়লার হাউজের বিক্রয়কর্মীরা। তারা আরও জানান, আগের চেয়ে একটু দাম বেড়েছে। তাই বর্তমানে ব্রয়লার ২০০ থেকে ২২০ ও পাকিস্তানি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণে দেশি মুরগির দামও বেশি ৬৫০ টাকা কেজি।
অপরদিকে, টাউনহলের ভিআইপি, ব্রয়লার হাউজসহ অন্য খুচরা মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্রয়লার ২০০ থেকে ২১০ টাকা, পাকিস্তানি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। দাম বেড়ে গেছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আড়ত থেকে পাইকারিতে দাম বেড়েছে। কারণ, প্রচণ্ড গরমে মুরগি মরে যাচ্ছে।
গরুর মাংসও আগের মতোই ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান মাংস বিক্রেতারা। এদিকে আগের সপ্তাহে মতো ডিম ১২০-১২৫ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। তবে এলাকাভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম কম-বেশি হচ্ছে।
মুরগির দাম বাড়লেও কারওয়ান বাজার ও টাউনহলে আগের দামেই রুই, কাতলা, ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতারা জানান, রুই, কাতলা ২৫০-৪৫০ টাকা কেজি। চিংড়ি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৩০০-৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০, কাজলি ও বাতাসি ৬০০ টাকা, পাঙাস ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, আকারভেদে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে। হাফ কেজির ইলিশ ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
ঈদের আগে কমবে না চালের দাম
দেশে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও কমছে না চালের দাম। আগের মতোই মোটা স্বর্ণা চাল ৪৪ থেকে ৫০ টাকা, ২৮ ও পাইজাম ৫৬ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন কোম্পানির বস্তার মিনিকেট চালের কেজি ৭২ টাকা থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের কুমিল্লা রাইস এজেন্সির আবুল কাসেম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঈদের আগে আর কমবে না চালের দাম। কারণ নতুন বোরো উঠলে মাঝারি চালের দাম কমবে।
আগের মতোই লেবু, বেগুন, শসার দাম
রমজানের প্রথমে ৭০ থেকে ১০০ টাকা হালি লেবু বিক্রি হলেও বর্তমানে অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের স্বপন বলেন, গত সপ্তাহের মতো বড় লেবুর ডজন ৫০ থেকে টাকা ও ছোটগুলো ৩০ থেকে টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। টাইনহল বাজারেও কম দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। খুচরা ব্যবসায়ীরা রমজানের প্রথমে শসার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও বর্তমানে কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, রমজানে বাজারে চাহিদা কম থাকায় সবজির দামও কিছুটা কমেছে। বেগুন আগে বেশি দামে বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, পটল ও ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, আলু ২৫-৩০ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শিমের কেজি ৩৫-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা, মুলা ও পেঁপের কেজি ২০-৩০ টাকা, গাঁজর ৩০-৪০ টাকা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। তবে সজনের দাম কমে ৭০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, লাল ও পালং শাকের আটি ১০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ধনিয়ার পাতা ১০ থেকে ১৫ টাকা আটি ও পুঁইশাক ২০ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে।
জেডএ/এমএমএ/