চিনি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে এফবিসিসিআইয়ে হট্টগোল
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, দেশে যথেষ্ট পরিমাণ ভোজ্যতেল ও চিনি মজুত রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ থাকলে কোনো সংকট হবে না। এ সময় মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মফিজুল হক বলেন, সরকার ৫ মাস আগে ১০৩ টাকা কেজি রেট বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু এখনো সেই রেটে চিনি পাই না। ব্যবসা করতে পারি না। কীভাবে বিক্রি করব। সাপ্লাইয়ে এখনো ঘাটতি আছে।
চিনি ব্যবসায়ী মো. আবুল হাসেন কিছু বলতে গেলে এ সময় সময় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ধমক দিয়ে বলেন, আপনি চুপ করেন। এত জটলা পাকান কেন? তারা বলছে সমস্যা নেই। আর আপনারা বলছেন চিনি পাই না। কাহিনি কী?
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) মতিঝিলে এফবিসিসিআই বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত প্রয়োজনীয় পণ্য সমগ্রীর আমদানি, মজুদ, সরবরাহ, বাজার পরিস্থিতি ও বাজার মনিটরিং জোরদার করা লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে সিনিয়র প্রথম সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী চিনি মিলমালিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বলছেন, তিন লাখ টন চিনি মজুত রয়েছে। এর আগেও বলেছিলেন, চিনির কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু তারপরও দাম বাড়িয়ে বাজারে চিনি পাওয়া যায় না। তাহলে চিনি যাচ্ছে কোথায়? আপনারা মাল দেবেন ভাওচার (কাগজ) দেবেন না, এটা কেন? এই লুকোচুরি বন্ধ করতে হবে।
উল্লেখ, পবিত্র রজমান মাসে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে কয়েক দফা এফবিসিসিআই থেকে সব সেক্টরের ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার এ সভার আয়োজন করা হয়। এ জন্য রমজানে বেশি ব্যবহার হয় এমন পণ্যের মধ্যে চিনি, খেজুর, গরুর মাংস, মুরগির মাংসসহ ৯৯টি খাতের ব্যবসায়ী নেতাদের আমন্ত্রণ জানায় এফবিসিসিআই। গত ২০ মার্চ এই জরুরি সভায় আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সভায় চিনি, খেজুর, মাংসসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে কেন? তা জানতে চাইলে ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মো. আবুল হাসেম বলেন, সরকার ও মিলমালিকরা দাম বেঁধে দেওয়ার পরও আমরা চিনি পাচ্ছি না কেন?
এমন কথা বলা মাত্র এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আপনি শুধু বলেন, পাই না, পাই না। থামেন। আপনি কোনো কথা বলবেন না। চলে যান এখান থেকে। আপনাকে আর মিটিংয়ে ডাকা হবে না। এ নিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে মৌলভীবাজারের সভাপতি ফারুক আহমেদসহ অন্যান্য চিনি ব্যবসায়ীরাও বলেন রমজানে চিনির চাহিদা। তারপরও পাচ্ছি না। এখন না পেলে কখন পাব। তাহলে আমরা কিসের ব্যবসা করব? আর চিনি ব্যবসায়ী নেতা মফিজুল হক বলেন, সরকারি রেটে এখন চিনি না পেলে কখন পাব। অথচ মিলমালিকরা শুধু বলবে, সরবরাহের কোনো সংকট নেই। ১০২ টাকায় চিনি দেওয়া কথা। তাও পাচ্ছি না। এখন ব্যবসা না করলে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করব কীভাবে? দরকার হলে আরও চিনি আমদানি করা হোক। কিন্তু আমাদের চাহিদা অনুযায়ী দিতে হবে। যাতে আমরাও পাইকারি পর্যায়ে সারা দেশে দিতে পারি।
এ সময় ক্যাবের সহ-সভাপতি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ১০২ টাকা করা হলেও মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা চিনি পাচ্ছে না। তাহলে খুচরা ব্যবসায়ী কী পাবে। আর ভোক্তারা বা কী পাবে। ব্যাপারটা হচ্ছে কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই। বাজার ও ভোক্তাদের পকেট লুট করতে সহযোগিতা করবেন না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্য সরবরাহ করবেন। লুণ্ঠনকারীদের হাতে ভোক্তাদের জিম্মি করবেন না।
এরপর এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, চিনির ব্যাপারে মিলমালিকদের উদ্দেশে বলেন, মুখে বলবেন এক কথা, আর করবেন আরেকটা। তা হবে না। রমজানে বাজার অস্থিতিশীল করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ব্যবসা করব সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে। অসাধু ব্যবসায়ীর তকমা নেব না।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি আমিন হেলালীসহ সংশ্লিষ্ট সেক্টরের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
জেডেএ/এমএমএ/