২ মার্কেটের কোন প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয় না
কুমিল্লা যেন ভ্যাট ফাঁকির স্বর্গরাজ্য
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দার একটি বিশেষ দল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) কুমিল্লা শহরের দুইটি মার্কেট জরিপ সম্পন্ন করে। এই জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মার্কেট দুটিতে কোন প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করেনি এবং তারা ভ্যাটও দেয় না।
মার্কেট দুটি হলো- কুমিল্লা শহরের কেন্দ্রস্থল টাউনহলের কান্দিরপাড়ে অবস্থিত প্লানেট এসআর মার্কেট এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট গেটের সম্মুখে অবস্থিত ময়নামতি সুপার মার্কেট।
কুমিল্লার প্লানেট এসআর মার্কেটে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে মোট ৮০ টি দোকান রয়েছে, যার মধ্যে ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালে ৫৬ টি দোকান খোলা পাওয়া যায়। এগুলোর কোনরূপ ভ্যাট নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে জানা যায় যে, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মার্কেটটি চালু হলেও এখনও মার্কেটের কোন প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি।
এছাড়া কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এর সম্মুখে অবস্থিত ময়নামতি সুপার মার্কেটে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে মোট ১২০ টি দোকান রয়েছে, যার মধ্যে ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালীন ৬৪ টি দোকান খোলা পাওয়া যায়।ভ্যাট গোয়েন্দার কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতিষ্ঠানে জরিপকালে চালু থাকা কোন প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি। আরও জানা যায় যে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের উপর অবস্থিত বহু বছর ধরে চলমান উক্ত মার্কেটের কোন প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধন নেই।
কুমিল্লায় ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক জনাব মুনাওয়ার মুরসালীন এবং সহকারী পরিচালক জনাব আলমগীর হুসেন এর নেতৃত্বে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে এই চিত্র উঠে আসে।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে ২০২১ সালের ২৫-৩১ মে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের ৪টি জরিপ দল মাঠে নেমে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের মার্কেটগুলোতে জরিপ করে। জরিপ পরবর্তীতে সারাদেশে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণে ব্যাপকভাবে সাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও কুমিল্লার এই দুটি মার্কেটের কোন প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধন পাওয়া যায়নি, যা হতাশাজনক বলে মনে করে ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ।
একই দিনে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে অবস্থিত মূল ‘মাতৃভান্ডার’ এ অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি। প্রতিষ্ঠানে মিষ্টি বিক্রির সময়ে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অথচ মাতৃভান্ডার গড়ে মাত্র ২০-২২ টি চালান কাটে।
ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃক দু্ইজন কর্মকর্তা বিক্রয় পর্যবেক্ষণের জন্য সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। ঐ একদিনে ভ্যাট গোয়েন্দার উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি মোট ৩১৮ টি ভ্যাট কাটতে বাধ্য হয়, যেখানে বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় প্রায় ২,৯৬,০৫০ টাকা। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বিক্রয়ের সময়ে ভ্যাট চালান না দিয়ে মিষ্টির এই দোকানটি ব্যাপকভাবে ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত হয়েছে।
গোয়েন্দা অভিযানে জব্দকৃত কাগজে দেখা যায় গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মাতৃভান্ডারে মাত্র ৩৫৪ টি ভ্যাট চালান কাটা হয়। এর বিপরীতে বিক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। অথচ ভ্যাট গোয়েন্দার একদিনের পর্যবেক্ষণে ৩১৮ টি চালানে প্রায় একই পরিমাণ টাকার বিক্রয়ের হিসাব পাওয়া গেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত হলেও এর ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব ধরা পড়ে ভ্যাট গোয়েন্দাদের হাতে।
এছাড়া ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি কুমিল্লার বনফুল এন্ড কোং এবং কিষোয়ান স্নাকস এর কুমিল্লা শাখায় অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠান দুটোতে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় মূসক সংক্রান্ত তথ্যাদি জব্দ করে আনে। এসকল দলিলাদি যাচাই-বাছাই শেষে শীঘ্রই ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হবে।
ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য মতে, কুমিল্লা শহরের অনেক মার্কেট রয়েছে যেগুলোর প্রতিষ্ঠান এখনো নিবন্ধন গ্রহণ করেনি। জরিপে প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্য যেমন- দোকানের মাসিক ভাড়া, কর্মচারীর মাসিক মোট বেতন, মাসিক বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি টার্ণওভারের বিবেচনায় নিবন্ধনযোগ্য হলেও এসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন ব্যতিরেকে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ফলে ক্রেতারা ভ্যাট পরিশোধ করলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না।
এই জরিপের প্রধান উদ্দেশ্য এনবিআরের নিকট মাঠ পর্যায়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা এবং দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা। একইসাথে যথানিয়মে ও সঠিক পরিমাণ ভ্যাট আহরণ বৃদ্ধি করা।
ইতোমধ্যে মার্কেট দুটোতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানসমূহ মূসক নিবন্ধন গ্রহণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করা হয়েছে। একইসাথে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ও টার্ণওভারের বিবেচনায় সঠিক করদায়িতা নিরূপণপূর্বক যথাযথ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।
/এএস