লাগামহীন মুরগির দাম, স্বস্তি নেই বাজারে
কোনোক্রমেই থামছে না মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। মিল থেকে সরবরাহ না করায় এখানো অনেক দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। করলা ও পটলসহ অন্যান্য সবজি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। চালের দামও কমেনি। প্যাজেটজাত চালের মধ্যে প্রাণসহ অন্যান্য কোম্পানির মিনিকেট ৯২ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (৩ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে বাজারের এমনই চিত্র দেখা গেছে।
লাগামহীন মুরগির দাম
গত সপ্তাহের মতোই গরুর মাংস ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান জনপ্রিয় মাংস বিতানের বিক্রেতারা। তবে মুরগির দাম বেড়েই চলছে। গত সপ্তাহে পোল্ট্রি মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকা বিক্রি করা হলেও এ সপ্তাহে ১০-২০ টাকা বেড়ে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
একইভাবে পাকিস্তানি মুরগির কেজি ৩১০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের ব্রাদ্রার্স চিকেন হাউজের কালামসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি। আবার চাহিদাও বেশি। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ কম। তাই মুরগির দামও বাড়ছে। তবে লেয়ার ২৮০, দেশি মুরগি আগের মতোই ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি।
মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের দাম কমে ডজন ১২৫-১৩০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে আগের সপ্তাহের মতোই রুই, কাতলা, ইলিশসহ প্রায় মাছই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতারা জানান, রুই ও কাতলার কেজি ২৫০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০-১২০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড় ৫০০-৮০০ টাকা, কাচকি ৩০০-৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০, কাজলি, বাতাসি ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ১৫০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, ইলিশের দাম বেড়ে আকার ভেদে ১২০০-১৪০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। নদীর মাছ শেষের দিকে। তাই দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এখনো প্রায় দোকানে চিনি নেই
বিভিন্ন অজুহাতে মিলমালিকরা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়িয়ে খোলা চিনির কেজি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১১২ টাকা করেছে। তারপরও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আল্লাহর দান স্টোরের শাহ আলম, ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফসহ অন্যান্য মুদি ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চিনি নেই। রাখি না। ১১২ টাকায় কেনা, বেশি দামে বিক্রি করলে জরিমানা খেতে হয়। তাই রাখি না। এখনো চাহিদামতো পাওয়া যায় না। তারা আরও জানান, সামনে রমজান, এ অজুহাতেই মিল থেকে চিনি দিচ্ছে না।
তবে আগের মতোই ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৮৫-১৮৭ টাকা, ২ লিটার ৩৭০-৩৮০ টাকা ও ৫ লিটার ৮৭০-৯০৫ টাকা, মসুর ডাল ৯৫-১৪০ টাকা কেজি, প্যাকেট আটা ২ কেজি ১৩০ টাকা ও খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা, ময়দা ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য মুদি আইটেম এ সপ্তাহে বাড়েনি।
আগের মতোই পেঁয়াজ, আদা ও রসুন
কমতির দিকেই পেঁয়াজের দাম। পাইকারিতে পাল্লা (৫ কেজি) ১৪০-১৫০ টাকা, আর খুচরা কেজি ৩০-৪০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি ১০০ টাকা, চায়না রসুনের দামও কমে ২৪০ টাকা কেজি, দেশি আদার দামও কমে ১১০-১৩০ টাকা ও বিদেশি আদা ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে মেসার্স বিক্রমপুর স্টোরের আওলাদসহ অন্য বিক্রেতারা জানান।
সুখবর নেই চালের বাজারে
সরকার বলছে, দেশে যথেষ্ট চালের মজুদ রয়েছে। তারপরও কমে না চালের দাম। বিভিন্ন কোম্পানির বস্তার চালের কেজি ৭২ টাকায় বিক্রি করা হলেও রুপচাদা, প্রাণ, সিটি গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানির বস্তার মিনিকেট চাল ৭৫ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ওই সব কোম্পানিরই ৫ কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা আরও জানান, মোটা স্বর্ণা চাল ৪৪ টাকা, ২৮ ও পাইজাম ৫৪-৫৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থিতিশীল সবজির বাজার
শীতের বিদায় হলেও কপিসহ কিছু সবজি এখনো বাজারে। আবার গ্রীষ্মকাল ঘনিয়ে আসায় করলা ও পটলের দাম কমতে শুরু করেছে। আগের সপ্তাহের মতো করলা ও পটল বর্তমানে ১০০ টাকা কেজি, ঢেঁড়সের দামও কমে ১০০, টমেটো ৩০ টাকা, আলু ২৫-৩০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০-৪০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, শিমের কেজি ২৫-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা, মুলা ও পেঁপের কেজি ২০-৩০ টাকা। শসা ও গাজরের দাম ৩০-৪০ টাকা, লাল ও পালং শাকের আঁটি ১০ টাকা, মরিচ ১০০-১২০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
জেডএ/এসজি