নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, সবকিছুর দামই চড়া
পিকনিকের ভরা মৌসুম শুরু চলছে। এ জন্য গরু, খাসি, মুরগির মাংস ও ডিমের দাম বাড়তি। শীতের সবজিও শেষ হয়নি। কিন্তু করলা, পটল ও ঢেঁড়সের দাম একেবারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে করলার কেজি ১৮০ আশি থেকে ডবল সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। পটলের কেজি ১২০ টাকা ও ঢেঁড়স ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ডিমের দাম ডজন ১৪০ টাকা। সবজি, মাংস ও ডিমের দাম গত সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল থাকলেও মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে একশ থেকে দুইশ টকা পর্যন্ত।
অপরদিকে, খুচরা পর্যায়ে ১ ফেব্রুয়ারি খোলা চিনি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকা করা হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমলেও চায়না রসুনের দাম বেড়ে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কৃষিমার্কেট বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
এখনো চিনি নেই বাজারে
১ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়িয়ে খোলা চিনির কেজি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১১২ টাকা করা হয়েছে। তারপরও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কৃষিমার্কেটের পারভেজ জেনারেল স্টোরের পারভেজ ও সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহেরসহ অন্যান্য মুদি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কোম্পানি থেকে চিনি দিচ্ছে না। তাই আমরা বিক্রি করতে পারছি না। কারণ মিল থেকে ডিলারদের ঠিক দামে দিলেই আমরা একটু লাভ করে বিক্রি করতে পারছি না। কিন্তু সামনে রমজান এ অজুহাতেই মিল থেকে চিনি দিচেছ না।
চিনি হাওয়া হয়ে গেলেও আগের মতোই ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৮৫ থেকে ১৮৭ টাকা, ২ লিটার ৩৭০ থেকে ৩৮০ ও ৫ লিটার ৮৭০ থেকে ৯০৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। মসুর ডাল ৯৫-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। প্যাকেট আটা ২ কেজি ১৩০ টাকা ও খোলা আটার কেজি ৬০, ময়দা ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
মাছের দাম চড়া
গত সপ্তাহের মতো গরু মাংস ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তবে পোল্ট্রি মুরগির দাম রেকর্ড ২১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। শ্রবণ মুরগি হাউজের ফারুকসহ অন্য মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, আগের সপ্তাহের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে ২১০ দশ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে পাকিস্তানি ও লেয়ার মুরগির দাম ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি, দেশি মুরগি আগের মতোই ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আগের সপ্তাহের মতো ডিমের ডজন ১৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর মাংস ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
রুই, কাতলা, ইলিশসহ প্রায় মাছ আগের চেয়ে কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান রুই ও কাতলার কেজি ২৫০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড়ের দাম কমে ৫০০-৮০০ টাকা, কাচকি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০, কাজলি, বাতাসি ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। একইভাবে ইলিশের দামও বেড়ে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, কেজির উপরে হলে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ছোটগুলোর দাম একটু কম।
কমেছে রসুনের দাম
গত সপ্তাহে দেশি রসুনের কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বিশ থেকে ত্রিশ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আর, চায়না রসুনের দামও কমে ২৬০ টাকা কেজি , পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি , দেশি আদার দামও কমে ১১০-১৩০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
আগের মতোই বাড়তি চালের বাজার
বিভিন্ন কোম্পানির বস্তার চাল ৭২ টাকা বিক্রি করা হলেও সিটি গ্রুপের তীরও প্রাণ গ্রুপের প্রাণ মিনিকেট চাল বেশি দামে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষিমার্কেট বাজারের মেসার্স মডার্ন রাইস এজেন্সির দেলোয়ারসহ অন্য চাল ব্যবসায়ীরা জানান, মোটা স্বর্ণা চাল ৪৪ টাকা, আটাশ ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা ও মিনিকেট চাল ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু একটু দূরেই সেই মোটা চাল খুচরা বাজারে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
রশিদসহ অন্যরা ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি বিক্রি করলেও তীর ও প্রাণ মিনিকেট ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে। চাল ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, চালের দাম কমবে না। এবার আমনের মৌসুমেও কমেনি। আমনের মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। বোরো ধান উঠলে ২৮ ও মিনিকেট চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। আর মিনিকেট বন্ধ না করলে বেশি দাম থাকে।
বাড়তি সবজির বাজার
গত সপ্তাহের মতো টমেটো ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজি, আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, শিমের কেজি ২৫ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা, মুলা ও পেঁপের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা। শসা ও গাজরের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাল ও পালং শাকের আটি ১০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান মরিচের দাম বেড়ে ১২০ টাকা, বেগুনের দামও বেড়ে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে পটল ও ঢেঁড়শের দাম অনেক বেড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং করলা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
জেডএ/এমএমএ/