বাণিজ্য মেলায় বিক্রি ১০০ কোটি, রপ্তানি আদেশ ৩০০ কোটি টাকা
রাজধানীর পূর্বাচলে চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। আর রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে ৩০০ কোটি টাকার।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এসব তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আহমেদ বাবু।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান এ.এইচ.এম আহসান।
ইপিআই থেকে জানানো হয়, এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটগরির মোট ৩৩১টি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্টুরেন্ট ছিল, যা গতবছরের তুলনায় শতকরা ৪০ শতাংশ বেশি।
মেলায় ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, পাকিস্থান, থাইল্যান্ড ও নেপাল-এর মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠান ছিল। বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারীওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর, ফার্নিচার ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শন করা হয়েছে।
এবারও মেলায় নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এ প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, উন্নত শিল্প সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে তার অবদান ও ভাবনা ইত্যাদিকে সকলের নিকট বিশেষকরে নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত পুস্তকাদি এবং তাঁর জীবন ও কর্মভিত্তিক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেলায় সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড হতে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত পর্যাপ্ত সংখ্যক বিআরটিসির ডেডিকেটেড শাটল বাস নিয়মিত মেলার দর্শনার্থীদের আনা-নেওয়ায় নিয়োজিত করা হয়। মেলায় দ্বিতল কার পার্কিং-এ পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিকিং সুবিধা ছাড়াও এক্সিবিশন হলের বাইরে ৬ একর জমিতে বিস্তর পার্কিং এর সুফল উপভোগ করেছে মেলার দর্শনার্থীরা।
দর্শনার্থীদের সকল প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য মেলায় রয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র। সকল শ্রেণির দর্শনার্থী-ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার্থে মেলায় নিশ্চিত করা হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যাংকিং সুবিধা, বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেরা সুবিধা, রক্তদান সেবা, নামাজ আদায়ের সুবিধা, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার/বেঞ্চ ইত্যাদি। শিশুদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল।
মেলায় খাদ্য-দ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা হয়রানি বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে প্রত্যহ পরিচালনা করা হয় ভেজাল বিরোধী অভিযান। মেলায় ২৩টি রেস্টুরেন্ট ছাড়াও এক্সিবিশন সেন্টারের ভিতরে ৫০০ আসন বিশিষ্ট ক্যাফেটেরিয়ায় দর্শনার্থীদের জন্য সুলভ মূল্যে চমৎকার পরিবেশে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ক্যাটাগরির সেরা প্যাভিলিয়ন, স্টল ও প্রতিষ্ঠানকে ট্রফি প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। ১ম পুরস্কার (গোল্ড কালার ট্রফি) প্রদান করা হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১০টি সেরা প্যাভিলিয়ন ও স্টলকে (আবুল খায়ের মিল্ক প্রোডাক্টস লিমিটেড, রংপুর মেটাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড, ঢাকা আইসক্রিম ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড, গাজী ইন্টারন্যাশনাল, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমই), বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড, প্যানমার্ক ইন্টারন্যাশনাল লি. (পাইলট), এম আর টেকনোলজী (সোলাস), কুলফিডো লিমিটেড ও Hadeks Hall DeriTekstil Dis Tic A. S, Turkey) । ২য় পুরস্কার (সিলভার কালার ট্রফি) প্রদান করা হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৩টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলকে (ডায়ামন্ড ওয়ার্ল্ড, তানভীর ফুড়, নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড, বেঙ্গল পলিমার ওয়্যারস লিঃ, কারা অধিদপ্তর, আব্দুল মোনেম লিমিটেড, মুক্তা পানি, হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড, কাজী এন্টারপ্রাইজেস, মেসার্স হেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স, হামনাহ এন্টারপ্রাইজ, রংপুর কেমিক্যাল লি. ও Pentel (Singapore) PTE Ltd.)। ৩য় পুরস্কার (ব্রোঞ্জ কালার ট্রফি) প্রদান করা প্রদান করা হবে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১১টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলকে (সেভয় আইসক্রিম ফ্যাক্টরী লিমিটেড, বিসিক, আরএম জুট ডাইভারসিফিকেশন মিলস্ লি., SWAPNO & WING Project ( আনন্দ মেলা), মিল্কভিটা, এক্সক্লোসিভ হোমটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজ লি., পেডরোলো এন. কে লিমিটেড, সেলিম আজম ইন্টারন্যাশনাল, এটলাস টয়লেট্রিজ লি., মেসার্স নুরুল টেক্সটাইল ইন্ডাট্রিজ ও PT Nissin Foods Indonesia)।
এ ছাড়া, শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে (জয়িতা ফাউন্ডেশন, ক্লে ইমেজ, পিপলস্ ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ ও কুষ্টিয়া হস্ত শিল্প); বেস্ট ইলেক্ট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে (ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাট্রিজ পিএলসি, ভিশন ইলেক্ট্রনিক্স ও মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক ইলেক্ট্রনিক্স লি.); বেস্ট ফার্নিচার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে (নাভানা ফার্নিচার লিমিটেড, আকতার ফার্নিশার্স লি. অ্যান্ড ডেল্টা ফার্নিশার্স লি., নাদিয়া ফার্নিচার লিমিটেড ও হাতিল কমপ্লেক্স লি.); এবং ইনোভেটিভ পণ্য উৎপাদনকারী/বিক্রেতা হিসেবে ২টি প্রতিষ্ঠনকে (ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাট্রিজ পিএলসি এবং রাজা ট্রেডার্স) ট্রফি প্রদান করা হয়।
দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল হতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হচ্ছে যা দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে।
এ ছাড়া, দর্শনার্থীদের বিনোদন, ক্রয়-বিক্রয় ও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর আকর্ষণ ডিআইটিএফকে একটি জাতীয় অনুষ্ঠান হিসেবে প্রসিদ্ধ করেছে।
জেডএ/এমএমএ/