সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ | ৮ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

বছরজুড়ে ভোগান্তির রেকর্ডে ব্যাংকিং খাত

করোনার ধকল সামলে উঠতে না উঠতে বছরের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তাণ্ডবে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। বিশ্বে পণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়লে ডলারের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ে। ৮৬ থেকে বেড়ে ১১৫ টাকা হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে থাকে।

বিলাসী পণ্যের শতভাগ ঋণ মার্জিন ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না রিজার্ভ সংকট। ৪৬ বিলিয়ন থেকে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপির তকমা কমাতে ঋণ পুনঃতফসিলকরণ ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। তারপরও ঋণ গ্রহীতারা ঠিকমতো তা পরিশোধ করছেন না। এর ফলে এক লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়। এভাবে ব্যাংকিং খাাত সারাবছরই ভুগিয়েছে দেশের মানুষকে।

অস্থির ডলারের বাজারে রিজার্ভে টান

আমদানি ব্যয় মেটাতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে। এক সময়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থাকলেও কারও মুখে কোনো টু শব্দ দেখা যায়নি। কিন্তু করোনার পরে আমদানি ব্যয় মেটোতে হলে রিচার্ভে বাড়তে থাকে চাপ। চলতি বছরের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ কমে ছিল ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে আকাশে দেখা দেয় মেঘ। অর্থনীতিতে মারাত্বকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। দেশের প্রায় নিত্যপণ্য আমদানি নির্ভর হওয়ায় বাড়তে থাকে ডলারের চাহিদা।

এর ফলে বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে প্রতি ডলার ৮৬ টাকায় বিনিময় হলেও প্রতি মাসে বাড়তে থাকে চলারের চাহিদা। এ কারণে দামও বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বরে ১১৫ টাকায় উঠে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক দাম নির্ধারণ করেও তা রুখতে পারেনি। পরে ব্যাংকের দাবির মুখে তা বাজারের উপর ছেড়ে দেয়। বাফেদার হাতে ডলার ছেড়ে দিলেও তা ১০৭ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। আর খোলা বাজারে তা ১২০ পর্যন্ত ডলার বেচাকেনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও প্রতিদিন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরও মিটছে না ডলারের সংকট। কোনো ব্যবসায়ীই ঠিকমতো এলসি ঋণপত্র খুলতে পারছে না।

বাধ্য হয়ে চলতি বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে ৯৫০ কোটি মার্কিন ডলার। যা আগের চেয়ে অনেক বেশি। ডলার বিক্রি করতে থাকায় রিজার্ভের পরিমাণও দিন দিন কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪০০ কোটি (৩৪ বিলিয়ন) ডলারে নেমে গেছে। এ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি তহবিলে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৮০০ কোটি (৮ বিলিয়ন) ডলার।

এই তহবিলের বিনিয়োগ রিজার্ভ হিসেবে মানতে নারাজ আইএমএফ। তা নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচনার ঝড় উছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য হচ্ছে এই বিনিয়োগ করা অর্থও রিজার্ভের। কাজেই এটা বাদ দিলে রিজার্ভ থাকে ২৬০০ কোটি (২৬ বিলিয়ন) ডলার, যা দিয়ে বর্তমানে সাড়ে চার মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব। এটা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।

হুন্ডির রমরমা ব্যবসাতে রেমিট্যান্সে ভাটা

আমদানির লাগাম টানতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও ডলারের সংকট কমেনি। সরকার রেমিট্যান্স বৃদ্ধি করতে গত জানুয়ারিতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও ঘোষণা করেছে। তারপরও দেশে বৈধ চ্যানেলের চেয়ে অবৈধ পথে শুধু ঘোষণার মাধ্যমেই হুন্ডিতেই বেশি আসছে রেমিট্যান্স। ডলার নিয়ে দেশে সংকট সৃষ্টি হওয়ায় প্রবাসী আয়ে এক দর বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরফলে কোনো ব্যাংক বেশি দামে বিদেশ থেকে আয় সংগ্রহ করতে পারবে না। অন্যদিকে, দেশে মার্কিন ডলারের চরম সংকট দেখা দেওয়ায় সরকারের আমদানি দায় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড়েও লাগামহীন খেলাপি ঋণ

২০২০ সালের মার্চে করোনা শুরু হলে গত দুই বছর ধরে ঋণ আদায়ে নানাভাবে ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে ২০২০ সালের শুরু থেকেই মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নবায়নে ছাড় দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল শপথ নিয়েই বলেছিলেন, ‘আজ থেকে আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না।’

ব্যাংক মালিকরাও বলেছিলেন, এটা কার্যকর করা হবে। তারপরও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। কোনোক্রমেই ঠেকানো যাচ্ছে না। বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে অনেকে ঠিকমতো তারা পারিশোধ করছেন না। এরফলে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকার বেশি, যা মোট ঋণের প্রায় ৮ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব মতে, সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর নয় মাসে খেলাপি বেড়েছে ৩১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।

ডিসেম্বর প্রান্তিকের কেলাপি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এটা করা হলে খেলাপি ঋণ আরও বৃদ্ধি পাবে।

সাবেক অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হয়েই গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করে। তাতে বলা হয়েছে , এখন থেকে খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করতে পারবে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংক মালিকরাই এখন ঋণখেলাপিদের কী সুবিধা দেওয়া যাবে তা ঠিক করে দেবেন। আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগলেও সেই ক্ষমতা পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে দেওয়া হয়েছে।

নতুন নির্দেশনায়, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে আড়াই থেকে সাড়ে চার শতাংশ অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে। আগে নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় থাকলেও সময় বাড়িয়ে তা ৫ থেকে ৮ বছরে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। ৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ স্থিতিকারিরা এই সুবিধা পাবেন। শুধু তাই নয়, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ পুনরায় খেলাপি হওয়ার পূর্বে কোনো পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে ‘খেলাপি ঋণ’ এবং গ্রাহককে ‘খেলাপি ঋণগ্রহীতা’ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।

সর্বশেষ চলতি বছরে গত ২০ জুলাই ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ও ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই খাতে। সুদহার বেঁধে দেওয়ার পর আমানত হারাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। গত এক বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত কমেছে হাজার কোটি টাকার ওপরে।

বিলাসপণ্য আমদানিতে কড়াকড়ির রেকর্ড

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়ে দেশে। কারণ তেল, চিনি, গুড়া দুধসহ প্রায় পণ্য আমদানি নির্ভর হওয়ায় ডলারে টান পড়ে। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয় এলসি খুলতে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষিত করতে আমদানি বিকল্প পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন পুনঃঅর্থায়ন স্কীম চালু করে। একইসঙ্গে বিলাস জাতীয় দ্রব্য, বিদেশি ফল, অশস্য খাদ্যপণ্য, চিনজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এলসি ঋণ মার্জিন ৭৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া, আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণসহ ২৭ পণ্যে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ, রপ্তানি বিল পাওয়ার এক দিনের মধ্যে নগদায়ন, বিদেশ ভ্রমণে কড়াকড়িসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।

আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে বিলাসীপণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক। মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়। একইসঙ্গে অতি জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে বলা হয়।

বেশি দামে ডলার বিক্রি করায় জরিমানা

মে মাস থেকে ডলারের বাজার অস্থির হয়ে যায়। এ সুযোগে কিছু মানি এক্সচেঞ্জ যোগসাজস করায় ৮৬ টাকার ডলারের দাম ১১০টাকা ছড়িয়ে গেছে। তা এ নিয়ে দেশে হই-চই পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযান শুরু করে। ডলারে কারসাজি করায় ২ আগস্ট পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪২ মানি এক্সচেঞ্জকে শোকজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ ছাড়া, মার্কিন ডলারের সংকটকে পুঁজি করে অনৈতিক সুবিধা নেয় ১২ ব্যাংক। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার মজুত করে বড় অঙ্কের মুনাফা করে তারা। কোনো কোনো ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ৭৭০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের কারণে ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এমডিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অর্থপাচারের তথ্য অধরা

চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লোক গেছেন এক লাখের বেশি। এভাবে চলতি বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাজের উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে ১১ লাখ কর্মী গেছেন। কিন্তু তারপরও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসছে কম। বেড়েছে হুন্ডির রমরমা ব্যবসা। করোনার সময় দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

অপরদিকে, বাণিজ্যের আড়ালে বিভিন্ন ফাঁক ফোকরে দেশ থেকে প্রচৃর অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। বহু সন্দেহজনক লেনদেনও হচ্ছে। তারপরও এর সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ এর প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস সম্প্রতি এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশের কৌশলগত দুর্বলতা এবং উদার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে লন্ডারিংকৃত অর্থ সহজেই বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে ঢুকে পড়ে। আবার খুব সহজে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যায়। এসব অর্থ ফেরাতে বাধ্য হয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্ততায় বলেছেন, ‘পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আনলে কথা দিচ্ছি কোনো প্রশ্ন করা হবে না। স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ, অস্থাবর সম্পত্তিতে ১০ শতাংশ এবং নগদ টাকা আনলে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করা যাবে। এই সুযোগ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তারপরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নির্দেশ

খেলাপি ঋণ হুহু করে বাড়তে থাকলেও সেদিকে নজর না দিয়ে ব্যয় কমানোর অজুহাতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কর্মকর্তাদের চাকুরিচ্যুতির হিড়িক পড়ে এই বছরে। তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসলে বাধ্য হয়ে বছরের শুরুতেই ২৫ জানুয়ারি নির্দেশনা জারি করে। তাতে বলা হয় আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অজর্ন করতে না পারা বা কোনোরূপ প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়াই অদক্ষতার অজুহাত দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি হতে বঞ্চিত বা চাকুরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না। তা পালন করতে তফসিলভুক্ত সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় অন্য এক সার্কুলারে দেশের বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি শুরুর বেতনকাঠামোও বেঁধে দেওয়া হয়। তাতে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার/ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার/ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশ অফিসার অথবা সমপর্যায়ের কর্মকর্তা-যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, ব্যাংকের অ্যান্ট্রি লেভেলে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের শিক্ষানবিশকালে ন্যূনতম বেতন হবে ২৮ হাজার টাকা। আর শিক্ষানবিশকাল শেষে এ ধরনের ব্যাংক কর্মকর্তাদের শুরুর মূল বেতনসহ ন্যূনতম মোট বেতন-ভাতা হবে ৩৯ হাজার টাকা।

জেডএ/এমএমএ/

Header Ad
Header Ad

আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি চীনের

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই চীনের সঙ্গে শুরু করেছেন বাণিজ্যযুদ্ধ। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই চীন বিশ্বজুড়ে দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে, যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন কোনও বাণিজ্যচুক্তিতে না যায়, যা চীনের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, চীন বিশ্বাস করে—সব দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের বাণিজ্য বিরোধ মেটাতে পারে। তবে কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন কোনও চুক্তি করে যা চীনের ক্ষতি করে, তাহলে বেইজিং তাতে কঠোরভাবে আপত্তি জানাবে। তিনি আরও বলেন, কেউ চীনের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করলে চীন 'সঠিক এবং সমুচিত প্রতিক্রিয়া' জানাবে।

এই হুঁশিয়ারি এমন সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন অন্যান্য দেশগুলোর ওপর চাপ দিচ্ছে—তারা যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্ক ছাড় পেতে চাইলে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করে। চীনের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র সমতার কথা বলে একতরফাভাবে সব দেশের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দিচ্ছে এবং দেশগুলোকে তথাকথিত ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আলোচনায় বাধ্য করছে।

চীন জানিয়েছে, তারা নিজের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় ও সক্ষম এবং বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে চায়। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তি শুল্ক নিয়ে আলোচনায় নেমেছে। জাপান সয়াবিন ও চালের আমদানি বাড়ানোর কথা ভাবছে, আর ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে অন্য উৎস নির্ভরতা কমাতে চাইছে।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বহু দেশের ওপর শুল্ক আরোপ স্থগিত করলেও, চীনের ওপর তা বহাল রেখেছেন। চীনই এই শুল্ক নীতির মূল লক্ষ্য। এর জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশ সফর করেছেন, যেখানে মূল উদ্দেশ্য ছিল—আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা বাণিজ্যনীতির বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলা।

(সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান)

Header Ad
Header Ad

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা, মানতে হবে ৪ নির্দেশনা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ৮ মে শুরু হচ্ছে ৪৬তম বিসিএসের আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা, যা চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। এই পরীক্ষাগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রসহ দেশব্যাপী একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

রবিবার (২০ এপ্রিল) পিএসির প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষার হলে নিষিদ্ধ সামগ্রী পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে এবং তাকে ভবিষ্যতের সব নিয়োগ পরীক্ষার জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।

লিখিত পরীক্ষায় মানতে হবে যেসব নির্দেশনা:

১. পরীক্ষার হলে বই, ঘড়ি, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক/ক্রেডিট কার্ডসদৃশ ডিভাইস, গয়না, ব্রেসলেট ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব সামগ্রীসহ কাউকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

২. পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে, মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে মুঠোফোন ও অন্যান্য নিষিদ্ধ সামগ্রী তল্লাশি করা হবে। প্রবেশপত্র অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে।

৩. পরীক্ষার দিন নিষিদ্ধ সামগ্রী সঙ্গে না আনার জন্য এসএমএসের মাধ্যমে সতর্কবার্তা পাঠানো হবে। পরীক্ষার্থীদের এই নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

৪. পরীক্ষার সময় কানের ওপর কোনো আবরণ রাখা যাবে না এবং কানে হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শপত্রসহ কমিশনের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

৪৬তম বিসিএসে মোট ৩,১৪০টি পদের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। এর মধ্যে সহকারী সার্জন ১,৬৮২ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন নেওয়া হবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিয়োগ থাকবে শিক্ষা ক্যাডারে, যেখানে ৫২০ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে।

Header Ad
Header Ad

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় আটক ৩ জন

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষার্থী পারভেজ। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২১ এপ্রিল) ভোরে তাদের আটক করা হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার। তবে আটককৃতদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

এর আগে, শনিবার বিকেলে পারভেজের সহপাঠীদের সঙ্গে পাশের ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীকে ঘিরে হাসাহাসির জেরে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পরপরই পারভেজকে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল ঘিরে ধরে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পারভেজের মরদেহ নেওয়া হয় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, যেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকার কাইচান গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এই ঘটনায় পারভেজের মামাতো ভাই হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযুক্তরা হলেন—মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি পিয়াস (২০), মো. মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজি (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ঘটনার সূত্রপাত যাকে ঘিরে, সেই ‘কথিত প্রেমিকা’ শনাক্ত হলেও মামলায় তার নাম নেই।

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ চলছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি চীনের
৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা, মানতে হবে ৪ নির্দেশনা
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় আটক ৩ জন
ঢাকাসহ ১৪ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা: আবহাওয়া অফিস
গ্রীষ্মে স্বাভাবিক থাকবে বিদ্যুৎ সরবরাহ: বিপিডিবি চেয়ারম্যান
পরমাণু কর্মসূচি থেকে না সরার ঘোষণা ইরানের
পর্যটকদের ভ্যাটের অর্থ ফেরত দেবে সৌদি সরকার
আজ কাতার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
ভুল বোঝাবুঝিতে গাজায় ১৪ জরুরি সেবাদাতা কর্মীকে হত্যা!
জেলা প্রশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দিল আওয়ামী লীগ
বিয়ের আশ্বাসে স্বামীর ১১ লাখ টাকা নিয়ে ঘর ছাড়লেন নারী, প্রেমিকের ফাঁদে পড়ে দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার
বিয়ে না করেই পঞ্চাশে অন্তঃসত্ত্বা অভিনেত্রী, তোলপাড় নেটদুনিয়া
পারভেজের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে মাতম, পাগলপ্রায় মা-বাবা ও একমাত্র বোন
বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি কিউবা মিচেল
আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করলেন নুর
২০২৫ শেষ হওয়ার আগেই ৫০ সেঞ্চুরিতে দেশের প্রথম এনামুল হক
ভিসা বাতিল করায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভারতীয় ও চীনা শিক্ষার্থীদের মামলা
একনেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার ১৬ প্রকল্প অনুমোদন
বিগত ৩ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার চায় এনসিপি
এপ্রিলে ১৯ দিনেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল