‘আমাদের চাওয়া মতোই আইএমএফের ঋণ পাচ্ছি’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সারা বিশ্বের অর্থনীতিই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সব দেশে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বেড়েছে। প্রায় সব দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমে গিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ উত্তাপ আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে। এ অস্থিরতা যাতে সংকটে ঘনীভূত না হয় তা নিশ্চিত করতেই আমরা আইএমএফের কাছে ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। আমরা যেভাবে ঋণ চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই ঋণ পেতে যাচ্ছি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টায় সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হলেও তিনি আড়াইটায় তা শুরু করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ-এর সঙ্গে এর আগে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। চলমান ঋণ আলোচনার পর্বটি বুধবার আমরা সফলভাবে সমাপ্ত করেছি। আইএমএফ-এর সফররত দলটি বাংলাদেশ সরকারের সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো বলে, তারা আমাদের জানিয়েছেন। আইএমএফের প্রতিনিধি দল, আমাদের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। সে অনুযায়ী আমরা চার বছর মেয়াদি ঋণ নিতে যাচ্ছি। ঋণের পরিমাণ হবে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার। সাত কিস্তিতে এ ঋণ পাওয়া যাবে।
আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচির ক্ষেত্রে অর্থনীতির বহিঃখাতকে স্থিতিশীল করা; ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ সামনে রেখে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেওয়া; আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এই চারটি মূল লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
সংকট দূর করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রাখা হবে। যা গত প্রায় ১৪ বছর ধরে করে আসছি। সরকারের সবসময় প্রচেষ্টা থাকে বাজেট ঘাটতিকে জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। গত বছর আমাদের বাজেট ঘাটতি ছিল ৫.১ শতাংশ, যা এই অর্থবছরে ৫.৫ শতাংশ ধরা আছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি করা যা আমরা প্রতি অর্থবছরে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চলতি অর্থবছরে আমাদের বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ। আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নতুন কয়েকটি আইন প্রণয়ন এবং পুরোনো কয়েকটি আইনের সংশোধনের চলমান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার জোরদার এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানো হবে। ভ্যাট আদায়ের জন্য আমরা ইএফডি মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৩২টি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আগামী বছরে আরও ৬০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে। পরবর্তী ৪ বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে।
আহম মুস্তফা কামাল বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। যাতে সামনে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলে দেশের অভ্যন্তরেও তা একইভাবে কমানো যায়। টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের কাজটি ধীরে ধীরে বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে; যা আমরা ইতোমধ্যে শুরু করেছি। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা করা হচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
জেডএ/এসএন