গ্যাস সংকটে চিনির উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে!
গ্যাস সংকটের কারণে চিনির উৎপাদন অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। পর্যাপ্ত পরিসাণে র’ সুগার থাকার পরও চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ কারণেই সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করলে উৎপাদন আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাজার থেকে চিনি উধাও হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, গত ৬ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রিফাইনারি মিলমালিকরা খোলা চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকায় বিক্রি বেঁধে দেওয়ার পর থেকেই চিনির সংকট তৈরি শুরু হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা চিনি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন অনেকে।
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, চিনি সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। আগের বছরে ১২ মাসে যে পরিমান (১৭লাখ টন) চিনি দেশে এসেছে। চলতি বছর গত নয় মাসে দেশে চিনি এসেছে সাড়ে ১৬ লাখ টন।
কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমরা কীভাবে চিনি দেব। আমরাই তো পাচ্ছি না।’
ইউসুফসহ বেশ কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার পর থেকেই পাচ্ছি না। মিল থেকে কী কোনো চিনি উৎপাদন হয় না। তাহলে সেগুলো যাচ্ছে কোথায়? যদি উৎপাদন হয় তাহলে সেই চিনি দেশের পাইকারি বাজারে না পাওয়া গেলে যাচ্ছে কোথায়? তবে কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও তা নির্ধারিত দামে তো দুরের কথা ১১০ থেকে ১২০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশে চিনির সংকট শুরু হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বলছে, চাহিদা অনুযায়ী দেশে পর্যাপ্ত চিনি আমদানি হয়েছে, সংকট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
রবিবার (২৩ অক্টোবর) বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারি মুখপাত্র ও পরিচালক সাঈদা খানম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে চিনি সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। শিগগিরই আরও এক লাখ টন চিনি আমদানি করা হচ্ছে। একটু তদারকি করলে চিনির বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে ১৭ লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানি করা হয়েছিল।
চলতি ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে এরইমধ্যে সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে। তবে এই তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে রিফাইনারি মিলমালিকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-যা উৎপাদন সবই দেওয়া হচ্ছে। তবে গ্যাসের কারণে উৎপাদন অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। তাই চিনির সংকট দেখা দিয়েছে।
সরকারি তথ্য মতে, দেশে বছরে চিনির মোট চাহিদা প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। যার সিংহভাগই আমদানির মাধ্যমে পরিশোধন করে বাজারে সরবরাহ করা হয়। এই চিনি আমদানি হয় মূলত সিটি, মেঘনা, এস আলম, ইগলু ও দেশবন্ধু গ্রুপের মাধ্যমে।
এ ব্যাপারে জানতে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রতিদিন চিনির উৎপাদন হচ্ছে। তা ডিলারদের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহও করা হচ্ছে।
তাহলে খুচরা বিক্রেতারা পাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্যাসের সংকটের কারণে ১০ থেকে ১২ দিন থেকে উৎপাদন অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। আগে আমাদের দিনে তিন হাজার টন উৎপাদন হতো। বর্তমানে এক হাজার থেকে ১২শ টনের বেশি হয় না। সরকার গ্যাস দিলে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
চিনি সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি উপদেষ্টা মো. সফিউর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, উৎপাদন যা হচ্ছে দেশেই ডিলারদের দেওয়া হচ্ছে। তবে গ্যাস সংকটরে কারণে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। কারণ, আমাদেরক্যাপাসিটি তিন হাজার টন। উৎপাদন দেড় হাজার টনও হচ্ছে না।
কবে থেকে এ সংকট দেখা দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮-১০ দিন ধরে। তিতাসে আবেদন করা হয়েছে। তারাও আশ্বাস দিয়েছে। গ্যাস পাওয়া গেলে আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশে চিনির আমদানি বেড়েছে। তারপরও সংকটের কারণ কি জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের এই ডেপুটি উপদেষ্টা বলেন, আমরা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা থেকে শুধু র’ সুগার আমদানি করি। এখানে কোনো সমস্যা নেই। তা রিফাইন করে বিক্রি করা হয়। কিন্তু গ্যাসের সংকটের কারণে পরিশোধিত চিনি উৎপাদন কমে গেছে। তাই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/